ঢাকা বুধবার, মে ২২, ২০২৪
৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ২৫ হাজার কোটি টাকা
  • ইসমাইল আলী:
  • ২০২০-০৭-২৫ ২২:৩৩:০১

 ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে বেশিরভাগ রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করে। পরের বছর আরও কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসে। যদিও তিন ও পাঁচ বছর মেয়াদি বেশকিছু রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করে বিদ্যুৎ কেনা অব্যাহত রাখে সরকার। এতে ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৯ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই গুনতে হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এদিকে ৯ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় মোট ব্যয় হয় ৬৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ৩৮ শতাংশের বেশি ছিল ক্যাপাসিটি চার্জ। বাকি অংশ যায় জ্বালানি ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে মূলধনি ব্যয় সংস্থানে সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।

এক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোক্তারা মোট ব্যয়ের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংকঋণ সুবিধা পেয়েছিল। বাকি ২০ শতাংশ ইক্যুইটি হিসেবে নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। আর এ ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যয় বিবেচনায় ক্যাপাসিটি চার্জের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সাধারণত বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত মেয়াদ (তিন বা পাঁচ বছর) শেষে অবচয়িত মূল্য বাদ দিয়ে বাকি অংশের নেট বর্তমান মূল্য ও ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন হিসাব করে ক্যাপাসিটি চার্জের হার নির্ধারণ করতে হয়। তবে দেশের এ হার নির্ধারণে নির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। বিভিন্ন কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দরকষাকষির ভিত্তিতে বছরভিত্তিক ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০১০-১১ অর্থবছরে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ছিল এক হাজার ৭০৩ মেগাওয়াট। আর এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় এক হাজার ৩৭১ কোটি ২১ লাখ টাকা। পরের অর্থবছর (২০১১-১২) স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৭৪ মেগাওয়াট। এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ৪৩৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছরে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা একই ছিল। তবে উৎপাদন সক্ষমতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। আর সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ৮৭০ কোটি সাত লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা একই ছিল। তবে মেয়াদশেষে তিন বছর মেয়াদি কুইক রেন্টালগুলো চুক্তি নবায়নের সময় ক্যাপাসিটি চার্জের হার কিছুটা কমানো হয়। এতে সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় তিন হাজার ২১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৫৬ মেগাওয়াট। সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ১৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পরের বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া আরও বেশকিছু রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করা হয়। এতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৯৬ মেগাওয়াট। তবে চুক্তি নবায়নের সময় ক্যাপাসিটি চার্জের হার আরও কিছুটা কমানো হয়। এতে সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় দুই হাজার ৭৯১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা একই ছিল। আর সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় দুই হাজার ৬৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পরের বছর বেশকিছু রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা আরও কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৮৯৪ মেগাওয়াট। আর সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় দুই হাজার ৪৭০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা এক হাজার ৮৯৪ মেগাওয়াটই ছিল। আর চুক্তির ভিত্তিতে সে বছর ক্যাপাসিটি চার্জ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ২৫ হাজার ৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন ও পাঁচ বছর মেয়াদি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি নবায়নের সময় উচ্চ হারে ক্যাপাসিটি চার্জ অব্যাহত রাখা হয়। যদিও প্রাথমিক মেয়াদেই (তিন বা পাঁচ বছরে) এসব কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় উঠে গেছে। তবে চুক্তি নবায়নের সময়েও যথাযথভাবে দরকষাকষি করা হয়নি। এতে সরকারের লোকসানের বোঝা বেড়ে গেছে। আর করোনাভাইরাসের কারণে এখন বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে গেছে। ফলে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে কিছু কেন্দ্র বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে।

২৩ নভেম্বর ১০০ স্বঘোষিত মাদক ব্যবসায়ীর রায়
আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও মানবেতর জীবনযাপন মানুষে-পশুতে একাকার, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি
বিবিএস'র দারিদ্র্যের হার পরিমাপে  নয়-ছয়
সর্বশেষ সংবাদ