ঝালকাঠিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন রাত পোহালেই ভোট, নারী প্রার্থীদের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা
- মো.শাহাদাত হোসেন মনু, ঝালকাঠি:
-
২০২৪-০৫-১৯ ১৩:৫৮:০৫
- Print
উপরে বাঁ থেকে আফরোজা আক্তার লাইজু, ইসরাতজাহান সোনালী, ফাতেমাখানম, মোর্শেদা বেগম, নীচেবাঁ থেকে উম্মে ছালমা, পিনু আক্তার নদী, হাফিজা আক্তার পিংকি, ছালমা বেগম।
চলমান ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামীকাল (২১ মে) মঙ্গলবার ৪টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলা ও নলছিটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জেলার রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় ধাপে ২৯ মে বুধবার। এতে চারটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২২জন নারী। ভোট ও দোয়া কামনায় ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন প্রতিদ্বন্দ্বি নারী প্রর্থীরা। নির্বাচিত হলে সুখ-দুঃখের অংশিদার হবারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। নারী প্রার্থীদের প্রচারণায় নিকটাত্মীয়রাও ব্যস্ত সময় পর করছেন। তাছাড়াও নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় দলবদ্ধ নারীদের প্রচারণা এবার চোখে পড়ার মতো। প্রার্থীদের পক্ষে বিপুল সংখ্যক নারীকর্মীর প্রচারণাএবারের নির্বাচনে ভিন্ন আমেজ এনে দিয়েছে।
এলাকাবাসিরা জানায়, অতীতের নির্বাচন গুলোতেও নারী প্রার্থীর প্রচারণায় নারী কর্মীরা মাঠে ছিলেন। কিন্তু এবারের মতো এত ব্যাপক সংখ্যায় নয়। এবার বেশিরভাগ প্রার্থীই টিম করে, সভা করে, পরিকল্পনা করে নারী কর্মীদের প্রচারণায় রেখেছেন। নির্বাচনী আমেজ শুরু হবার পূর্বে সীমিত পরিসরে গণসংযোগ ও আলাপ আলোচনায় সরগরম ছিলো চায়ের দোকান। প্রতিক পেয়েই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীরা । মাইকে ভোটারদের প্রতিক ও প্রার্থিতা জানান দিতে নির্বাচনী এলাকায়মাইকিং চলমান রয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থির স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় কর্মীরা পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করছেন। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রার্থিতার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রাজাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন, টানা তিন বারের ভাইস চেয়ারম্যান(মহিলা), উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আফরোজা আক্তার লাইজু (দোয়াতকলম)। সদর উপজেলায় ভাইসচেয়ারম্যান পদে টানা তিনবারের ভাইসচেয়ারম্যান ও নারী নেত্রী ইসরাতজাহান সোনালী (হাঁস), উম্মে ছালমা (কলস), পিনু আক্তার নদী (কলস), নলছিটি উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আয়শা আক্তার রিনা (কলস), জাকিয়া খাতুন সিমা (ফুটবল) , দিলরুবা মাহমুদ (হাঁস), মোর্শেদা বেগম (প্রজাপতি) ও নাছিমা আক্তার (পদ্মফুল)।
রাজাপুরউপজেলায়ভাইসচেয়ারম্যান (মহিলা) পদে নাসরিন সুলতানা মুন্নি (পদ্মফুল), নাসরিন আক্তার (সেলাই মেশিন), মোসাঃ সালমা বেগম (কলস), নাজমুননাহার পুতুল (ফুটবল), হাফিজা আক্তার পিংকি (প্রজাপতি), সুমনা পারভীন সুমি (হাঁস)।
কাঠালিয়াউপজেলায়ভাইসচেয়ারম্যান (মহিলা) পদে মোছাঃ সাহিদা আক্তার বিন্দু (প্রজাপতি), মোসাঃ শাহানাজ বেগম (পদ্মফুল), ফাতিমা খানম (হাঁস), শেফালী বেগম (ফুটবল), নাজমীন আক্তার (কলস)।
প্রার্থীরা বলেন, ভোটের প্রচারণায় পুরুষ কর্মীদের কারোকারো বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও নারী কর্মীদের বিরুদ্ধে তা নেই। অনেক বাড়িতে মহিলা ভোটাররা পুরুষ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননা। নারী কর্মীরা নমনীয়তার সঙ্গে ভোট প্রার্থনা করেন।
অফি সটাইমে কোনো বাড়িতে পুরুষ না থাকলেও নারী কর্মীরা সেই বাড়িতে ঢুকে ভোট চাইতে পারেন। এসব কারণে ভোট চাওয়ার ব্যাপারে নারী কর্মীদের ওপরই প্রার্থীদেও আস্থা বেশি।
রাজাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আফরোজা আক্তার লাইজু জানান, তাঁর এলাকার শুভানুধ্যায়ী মা-বোনরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়িবাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। তাঁদের এমন আন্তরিক প্রচারণায় আবেগাপ্লুত। প্রতিটি ওয়ার্ডে তাঁর পক্ষে ২৫-৩০ জনের নারীকর্মীর টিম বাড়িবাড়ি যাচ্ছে। নারী কর্মীদের এভাবে অংশগ্রহণ নির্বাচনে ভিন্ন আমেজ বয়ে এনেছে।
ইসরাতজাহান সোনালী বলেন, নারী কর্মীরা সকাল থেকেই প্রচারণায় বের হন। এলাকায় ৫০-৬০ জনের নারী কর্মীর টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, কাজের ব্যাপাওে নারী কর্মীরা আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল। একজন প্রার্থীর প্রচারণাকালে নারীকর্মী আমেনা বেগম জানান, ভোটাররা তাঁদের সঙ্গে খুব আন্তরিক ব্যবহার করছেন। নারী হওয়ার কারণে সহজে নারী ভোটারদের সঙ্গে তাঁরা মিশতে পারছেন। আবার পুরুষ ভোটাররাও তাঁদের সম্মান করছেন।
গুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র ঝালকাঠি জেলা সভাপতি ইলিয়াস সিকদার ফরহাদ বলেন, নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। অংশগ্রহণ বেড়েছে প্রচার-প্রচারণাতেও। এটা সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। নারীরা খুবই সুশৃঙ্খল এবং আন্তরিকতার সঙ্গে ভোট চান। যা প্রার্থীদেও জন্য সুফল বয়ে আনবে। প্রার্থীদেও পুরুষকর্মী-সমর্থকরা পোস্টারিং, মাইকিং, অফিস উদ্বোধন, এলাকা ভিত্তিক নির্বাচনীকর্মী কমিটি গঠন, সেন্টার কমিটি গঠন সহ এ ধরনের কাজ করছেন।