সাক্ষাতকারে লাইবা রুটি মেকারের উদ্ভাবক হুমায়ুন কবীর
নিমেষেই রুটি বানানোর কাঠের যন্ত্র লাইবা রুটি মেকারের উদ্ভাবক হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষতকারে কথা হয়েছে দেশীয় উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা সহায়ক পরিবেশ নিয়ে। আমাদের অর্থনীতি প্রতিবেদক এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম কর্মজীবন নিয়ে কিছু বলেন?
হুমায়ুন কবীর: ১৯৯৭ সালে আমার কর্মজীবন শুরু হয় ছোট একটা কম্পিউটার বিক্রির প্রতিষ্ঠানে। এরপর আমি বাংলাদেশের নামকরা একটা প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লিমিটেডে বেশ কয়েক বছর চাকরি করি। তার কিছুদিন পর আমি প্রাণ গ্রুপে চাকরি করেছি। তারপর দেশের প্রত্যন্ত কয়েকটি অঞ্চলের আঞ্চলিক খাবার এক্সপোর্টের ব্যবসা শুরু করি। যদিও ওই বিজনেসে আমি সফল হতে পারিনি।
প্রশ্ন: রুটি মেকার উদ্ভাবনে কবে কাজ শুরু করেন?
হুমায়ুন কবীর: যদিও রুটি মেকার উদ্বোধনের বিষয়টি আমার অনেক আগের, তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ২০১১ সালে আমি এই প্রোডাক্টটা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি।
প্রশ্ন: উদ্ভাবনের পেছনে কোন কোন বিষয় আপনাকে উৎসাহী করে তোলে?
হুমায়ুন কবীর: রুটি মেকার আসলে পৃথিবীতে অনেক আগে উদ্ভাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ইলেকট্রিক রুটি মেকার, রোবটিক রুটি মেকার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল রুটি মেকার। কিন্তু বাজারের অন্যান্য রুটি মেকারে সিদ্ধ আটার রুটি তৈরি করা যায় না। কিন্তু লাইবা রুটি মেকারে সব ধরনের সিদ্ধ আটার রুটি তৈরি করা যায়।
প্রশ্ন: আপনার উদ্ভাবনে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা পেয়েছেন কি?
হুমায়ুন কবীর: না সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের বা সামান্যতম কোনো সুযোগ-সুবিধা আমি পাইনি।
প্রশ্ন: আপনার কারখানা ও অফিস কোথায়? কতজন কর্মী কাজ করে আপনার প্রতিষ্ঠানে?
হুমায়ুন কবীর: আমাদের ফ্যাক্টরিতে মাগুরা জেলার শালিখা থানার বুনাগাতি গ্রামে। আমাদের সেল সেন্টার বা অফিস হচ্ছে ঢাকা আগারগাঁও ৬৭ নম্বর, সিদ্দিক টাওয়ারের চার তলায়। ফ্যাক্টরিতে এই মুহূর্তে ৫০ জনের বেশি কর্মী রয়েছে এবং ঢাকা অফিসে ২৫ জন কাজ করেন।
প্রশ্ন: নারীদের অগ্রাধিকার ও গ্রামীণ অর্থনীতি এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা কী?
হুমায়ুন কবীর: আমাদের নারী কর্মীর সংখ্যা ফ্যাক্টরিতে অনেক বেশি। আমরাই প্রথম বাংলাদেশে নারীদের রংমিস্ত্রি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। ২৫ জন নারী আমাদের ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। তারা ম্যানুফ্যাকচারিংয়েও যুক্ত। সামনে আরও বাড়বে। লাইবা রুটি মেকার নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন: আপনার পণ্য কীভাবে বাজারজাত ও বিক্রি হয়?
হুমায়ুন কবীর: লাইবা রুটি মেকার অনলাইনে বেশি বিক্রি হয়। আমাদের ওয়েবসাইট আছে www.rutimaker.com। ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও দেশ-বিদেশ থেকে ক্রেতা পাই আমরা। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগে আমরা খুবই রেসপন্সিভ। ফেইসবুক পেইজ facebook.com/Laaibahrutimakerfactory এর মাধ্যমে ক্রেতারা পণ্য ক্রয়াদেশ দেন। বিভিন্ন অনলাইন শপ ও মার্কেটপ্লেস যেমন- দারাজ, ইভ্যালির মাধ্যমেও আমাদের পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে আমরা বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করি। এছাড়া শিগগিরই আসছে আমাদের অনলাইন শপ www.laaibah.com। আমাদের ইউটিউব চ্যানেল আছে, সেখানে তথ্য পেয়েও ক্রেতাদের অর্ডার আসে। বিদেশ থেকে অর্ডার পেলে জিপিওর মাধ্যমে মাল পাঠাই।
প্রশ্ন: কোন কোন দেশে লাইবা রুটি মেকার বিক্রি হচ্ছে?
হুমায়ুন কবীর: বাংলাদেশের বাইরে ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার বিভিন্ন শহরসহ অনেক দেশে লাইবা রুটি মেকার বিক্রি হয়। বর্তমানে দু'চারটা করে প্রায় ২৮টি দেশ লাইবার রুটি মেকার বিক্রি হয়।
প্রশ্ন: লাইবা রুটি মেকারের টার্গেট কাস্টমার কারা?
হুমায়ুন কবীর: অধিকাংশ আধুনিক নারী সময় বাঁচাতে আমাদের পণ্য কিনে থাকেন।
প্রশ্ন: কতগুলো মডেল আপনার, দাম কত করে?
হুমায়ুন কবীর: বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য তিনটা মডেল আছে। আর এক্সপোর্টের জন্য একটা মডেল আছে। ২০০০, ২৫০০, ৩০০০ ও ৩৫০০ টাকা দামের মেশিন রয়েছে। এছাড়া রেস্টুরেন্টের জন্য কাস্টমাইজড মডেল আছে, যার দাম পণ্যমান ও আকারের ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনার পণ্য নকল হয়েছে?
হুমায়ুন কবীর: হ্যাঁ। শতশত লোক ভুল পদ্ধতিতে এই রুটি মেকার বানাচ্ছে। সেগুলোতে ঠিকমতো রুটি হয় না। তারা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।
প্রশ্ন: দেশীয় পণ্য উদ্ভাবনে বাংলাদেশকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হুমায়ুন কবীর: আমাদের দেশ সোনার বাংলাদেশ। আমাদের দেশে অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। আমাদের দেশের সন্তানরা অনেক কিছুই করতে পারে, তবে তারা কখনোই সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পায় না।
প্রশ্ন: তরুণ বা নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?
হুমায়ুন কবীর: পরামর্শ এটাই যে সরকার আপনাকে কোনো ধরনের সাহায্য করবে না। নিজের যোগ্যতায় যা পারেন করেন। এদেশে ব্যবসায় যতটা সফলতা আসে তা উদ্যোক্তার নিজের প্রচেষ্টায় হয়।
প্রতিবেদক: সাক্ষাতকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
হুমায়ুন কবীর: আপনাকেও ধন্যবাদ।