সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণকারী নবাব সিরাজউদ্দৌলার ৯ম রক্তধারা প্রজন্ম ঐতিহ্যের যুবরাজ সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব ওরফে নবাবজাদা আলি আব্বাসউদ্দৌলা বলেছেন তাঁর না বলা অনেক কথা-
প্রশ্ন : সততা-দেশপ্রেম-ভালবাসা আর নবাবি ব্যাপার স্যাপারের আদাব-এর সৌন্দর্যে আজও বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরিবার।
নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলা : বাংলার ঐতিহ্যবাহি সিরাজউদ্দৌলা পরিবারের -এর সৌন্দর্য নবাবি আদাব – কায়দা – তেহজিব – তামিজ। সিরাজ পরিবার এখনও সেই সব নবাবী ঐতিহ্য ধরে রাখার ব্যাপারে খুবই একনিষ্ঠ। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরিবারের সব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে আজও এই পরিবারের নতুন প্রজন্মরা যথেষ্ট যত্নশীল। তাইতো এই পরিবারের সদস্যদের আচার আচরণ কথা বলার ভঙ্গি এতটাই সুন্দর যে, যে কারো দৃষ্টি সহজেই আকর্ষিত হয়। আমাদের এই ঐতিহ্যবাহি পরিবারের আদব কায়দায় নবাবী আচার-ব্যবহারের সব রকম সৌরভ ও শিল্পরুচির প্রকাশ পায়। আমরা মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করি, তাই দুঃখের বোঝাটা বেশ ভারী। সম্মানের সহিত বাঁচা, একটু প্রিয় খাবার, একটু প্রকৃত বন্ধুত্ব ও একটু প্রকৃত ভালবাসা ছাড়া বিশেষ চাওয়া পাওয়া নেই। আমরা যাকে ভরসা করি যাকে বিশ্বস্ত ও ভালো ভেবে কল্পনা করি তার বিপরীত হয়ে বের হয় সে! আমি প্রিয়জনের জন্য অনেক বেশি লাভিং-কেয়ারিং- সেক্রিফাইসিং। তাইতো প্রিয়জনের সাথে বেশীক্ষণ রাগ করে থাকতে পারি না। প্রিয়জন আমার সাথে রাগ করে যদি আবার এসে মিষ্টি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে, সাথে সাথে আমার মনটা গলে যায়, কান্নায় আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। আসলে দোষটা আমার না, আমার ঐতিহ্যবাহী পরিবারে তেহজীব-তামিয ও শিক্ষা এমনটিই আকর্ষণীয়।
প্রশ্ন : নবাব সিরাজউদ্দৌলা মানেই সোনার বাংলা ও বাংলাদেশ।
নবাবজাদা আলি আব্বাসউদ্দৌলা : ইতিহাস ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কৃষক চেতনার বাংলাদেশে সফল নায়কের চেয়ে ট্রাজিক বীরেরা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা পান। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বীর চায়, নিপীড়িত জাতি নায়ক চায়, বাংলার জনগণ চায় ট্রাজিক দেশ প্রেমিক সিরাজউদ্দৌলার পুনর্জাগরণ, বাংলার মানুষ চায় প্রকৃত ভালবাসা। সিরাজ চরিত্র এই চারের অভাব অন্তত ৪ বার মিটিয়েছে। ইতিহাসে ৪ বার বেঁচে ছিলেন এবং বেঁচে আছেন তিনি। প্রথম বার- নিজের সৎ ও দেশপ্রেমিক জীবনে (জন্ম-১৯.৯.১৭২৭ ইং তৎকালিন দু’বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে)।
দ্বিতীয় বার- ১৯১১ সালের জানুয়ারিতে কলকাতার নাট্য মঞ্চে মঞ্চস্থ নাটক ‘সিরাজউদ্দৌলা’-য় (১৯১১ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালিন বৃটিশ ইংরেজ ও তাদের এদেশীয় সহযোগী মিত্র সরকার বাংলার বীর দেশপ্রেমি নবাব সিরাজউদ্দৌলার আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা আতঙ্কে, দেশপ্রেমি দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় দেখে গিরিশ চন্দ্র ঘোষ রচিত ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অভিনয় ও প্রচার বন্ধ করে দেয়)।
তৃতীয় বার- ঢাকা ও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প গ্রন্থে মির্জা তারেকুল কাদের লিখেছেন; নবাব সিরাজউদ্দৌলা চলচ্চিত্রটি বিপুল অঙ্কের মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতা বোধ উজ্জীবিত এবং তপ্ত রাজনৈতিক আবহাওয়ার পটভুমিতে নৈপুন্যতার সঙ্গে নির্মিত হওয়ায় ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চলচ্চিত্রটি দর্শকেরা সাদরে গ্রহণ করে নেন।১৯৬৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলা ও উর্দ্দু ভাষায় মুক্তি পাওয়া উক্ত চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। বাংলার মানুষের মনে চিরকাল তরুণ বীর দেশপ্রেমিক সিরাজউদ্দৌলার প্রতি যে ভালবাসা কাজ করে, অভিনেতা আনোয়ার হোসেন তার অসাধারণ আন্তরিক অভিনয় দিয়ে খান আতাউর রহমান পরিচালিত উক্ত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকের মনে সেই সুপ্ত নহর জাগাতে পেরেছিলেন।
চতুর্থ বার- নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুর্নজাগরণ ও পুর্ণ জন্ম ঘটে তাঁরই রক্তধারার ৯ম প্রজন্ম সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব ওরফে নবাবজাদা আলি আব্বাসউদ্দৌলার সততা-দেশপ্রেম ভালবাসার আদর্শিক চেতনার মাধ্যমে। তাইতো সমাজের সর্বস্তরের দেশপ্রেমি সকলের কাছে আমি নতুন প্রজন্মের সিরাজউদ্দৌলা। আজ লাল সবুজের দেশ্রপ্রেমি সকল হৃদয় নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবনকেই নতুন ভাবে পেয়েছেন আমার মাঝে। বাংলার দেশপ্রেমি মানুষ যখন কণ্ঠে দেশপ্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে বলেন, নবাবজাদা আলি আব্বাসউদ্দৌলা আমাদের নতুন প্রজন্মের সিরাজউদ্দৌলা, সকলের মন তখন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। দুটি ভিন্ন সময়, দু’টি ভিন্ন মানুষ, কিন্তু যেখানে আমরা এক হয়ে যাই তা হলো সততা, দেশপ্রেম ও বাংলার দ্রেশপ্রেমি সকলকে আপন ভেবে আপন করায়। তাই আমাদের জীবনকে আর আলাদা করা যায়নি, আর যাবেওনা। নবাব সিরাজউদ্দৌলাই আব্বাসউদ্দৌলা, নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলাই সিরাজউদ্দৌলা। আমি নিজস্ব ঐতিহ্যবাহি ইমেজে হৃদয়ের গভীরতায় লালন করি নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবনকে। তাইতো লাল সবুজের ডিজিটাল বাংলায় ঐতিহ্যের সেই ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছি সকল হৃদয়ে। আর আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের কোটি-কোটি হৃদয় থেকে আবার ডাক পড়ল হে বীর, হে-দেশপ্রেমিক, তুমি তো আমাদেরই মাঝে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত শোনা যায় শ্লোগান ‘জয়তু সিরাজউদ্দৌলা’-‘জয়তু আব্বাসউদ্দৌলা’। আজ আবার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী আবেগ বীর দেশপ্রেমিক ‘সিরাজউদ্দৌলা’ প্রতিক পেয়েছে নতুন প্রজন্মের সিরাজউদ্দৌলা “নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলার” মাঝে।
প্রশ্ন : কোন সব বিষয় আপনার দৃষ্টিতে ক্ষমা যোগ্য নয়?
নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলা : মানুষকে বোকা বানানো ও ঠকানোর চেষ্টা করা। সে যেই হোক, যারা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে ভণ্ডামি, বিকৃত কার্যকলাপ, প্রতারণা, ছল চাতুরি, ইসলামকে বিকৃতভাবে পরিবেশন ও ইসলাম ধর্মের সাথে মুসলাম হয়ে বিশ্বাসঘাতকা করছে। যারা প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলে। ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা অস্বীকার করে রক্ষা করে না। ইতিহাস বিকৃতিকারি। যারা প্রতি নিয়ত কলোহ বিবাদ করায় ও কলোহ বিবাদে লিপ্ত থাকে। এই সব দুষ চরিত্র বেক্তি ও গোষ্ঠীকে কোনো ভাবে ক্ষমা করা যায় না।
প্রশ্ন : অর্থ, খ্যাতি, সম্মান, ভালবাসা-জীবনে কোনটি বেশি জরুরি?
নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলা : ভালবাসা –ভালবাসা – ভালবাসা, সেটি অবশ্যই প্রকৃত ভালবাসা হতে হবে। আর যে হৃদয়ের গভীরতায় ভালবাসবে সে সম্মানও সমপরিমাণ করবে।
প্রশ্ন : কিছু মানুষে কথা বলুন, যারা সব সময় আপনাকে প্রেরণা দেয়?
নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলা : মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সা: ), বিশ্ব বীর শহীদ ইমাম হোসাইন, বাংলার বীর নবাব আলিবর্দী খান, বাংলার দেশপ্রেমিক নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মহীয়সী নারী বেগম লুৎফুন্নিসা, নানী গুলশান আরা বেগম, আম্মা সৈয়দা হোসনে আরা বেগম।
প্রশ্ন : জীবনের কিছু অসুন্দর অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন?
নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলা : অসুন্দর তো অসুন্দরই। কিছুটা শেয়ার করছি। মানুষ যখন আমাকে ঠকায়/প্রতারণা করে তখন নিজে নিজেই হাসি, কিন্তু নিজে বোকামি করলেও নিজেকে বোকা মনে হয় না কারন আমি তো তাদেরকে মানুষ ভেবেই বিশ্বাস করেছিলাম। কষ্ট পাই যারা আমার সাহায্য নিয়ে আমাকেই বদনাম করে,আমার সাথে ছলচাতুরি প্রতারণা করে। অনেক সময় মানুষরূপি দানব মানুষজনকে সাহায্য সহযোগিত ও ভালোবাসতে গিয়ে বদনামির তকমা লেগেছে!