পালংবাদ (Utilitarianism) হলো একটি নৈতিক তত্ত্ব, যা মানুষের কাজের নৈতিকতা নির্ধারণে সুখ বা পরিতৃপ্তিকে প্রধান মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে। পালংবাদের মূল বক্তব্য হলো, কোনো কাজ তখনই নৈতিক যখন তা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি সুখ বা উপকার বয়ে আনে। এই তত্ত্বটি প্রধানত ১৮শ শতাব্দীতে জেরেমি বেন্থাম এবং জন স্টুয়ার্ট মিলের কাজের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়।
পালংবাদের মূল বৈশিষ্ট্য:
1. সুখ ও দুঃখের গুরুত্ব:
পালংবাদে সুখকে ভালো এবং দুঃখকে খারাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কাজটি যদি বেশি সুখ নিয়ে আসে তবে তা নৈতিক।
বেশি দুঃখ সৃষ্টি হলে তা অনৈতিক।
2. সর্বাধিক সুখ নীতি:
"সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের সর্বাধিক সুখ" এই নীতিকে পালংবাদের কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করা হয়।
3. প্রভাব মূল্যায়ন:
প্রতিটি কাজের প্রভাব মূল্যায়ন করে দেখা হয়, তা মানুষের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে।
4. ব্যক্তিগত স্বার্থ বনাম সমাজের কল্যাণ:
এটি ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে সামগ্রিক সমাজের কল্যাণকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
পালংবাদের ধরণ:
1. কার্য পালংবাদ (Act Utilitarianism):
প্রতিটি কাজ আলাদাভাবে বিচার করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেটি কতটুকু সুখ বা দুঃখ বয়ে আনছে।
উদাহরণ: কাউকে সাহায্য করার ফলে তা যদি সামগ্রিকভাবে সুখ বৃদ্ধি করে, তবে তা নৈতিক।
2. নিয়ম পালংবাদ (Rule Utilitarianism):
কোনো কাজের জন্য সাধারণ নিয়ম তৈরি করা হয় এবং সেই নিয়ম মেনে চলা হলে তা দীর্ঘমেয়াদে বেশি সুখ বয়ে আনে।
উদাহরণ: সৎ হওয়া একটি নিয়ম, কারণ এটি সামগ্রিকভাবে সুখ বাড়ায়।
পালংবাদের সমালোচনা:
1. সুখের পরিমাপ:
সুখ বা দুঃখকে নির্দিষ্টভাবে মাপা কঠিন।
উদাহরণ: একজনের জন্য যা সুখকর, অন্যের জন্য তা দুঃখের কারণ হতে পারে।
2. সংখ্যালঘুদের অধিকার:
সংখ্যাগরিষ্ঠের সুখের জন্য সংখ্যালঘুদের স্বার্থ অবহেলিত হতে পারে।
উদাহরণ: যদি একটি সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য সুখকর হয়, তবে সংখ্যালঘুদের ওপর তা অন্যায় হতে পারে।
3. দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব:
কখনও কখনও কোনো কাজ তাৎক্ষণিক সুখ এনে দিলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পালংবাদ একটি কার্যকর নৈতিক তত্ত্ব হিসেবে সমাজ ও রাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।