‘মোর মানিক ধন কোনায়, বুকোত আনি দেও’- ক্ষীণ স্বরে এ কথা বলার পরই মূর্ছা গেলেন পারভীন বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তার গলা শুকিয়ে গেছে। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। ছেলে হারানোর খবর পাওয়ার পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
পারভিন বেগম ফায়ার সার্ভিসকর্মী সোহানুর জামান নয়নের মা। ঢাকায় সচিবালয়ে বুধবার আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় মারা গেছেন নয়ন।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী থেকে ছড়ান-আফতাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে ৩০ কিলোমিটার দূরে বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া গ্রামে নয়নের বাড়ি। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বাড়ির সামনে চেয়ারে বসে আছেন প্রতিবেশীরা। নয়নের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। বাড়ির ভেতরে নারীদের জটলা। সেখানে কাঁদছেন নয়নের একমাত্র বোন সীমা আক্তার।
সীমা বলেন, 'আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য ট্রাকচালক ও পুলিশ দায়ী। পুলিশ যদি রাস্তায় ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতো, তাহলে নয়ন মারা যেত না। আমি দায়ীদের শাস্তি চাই।' দুই দিন আগে ভাইয়ের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ হয় বলে জানান সীমা।
২০২২ সালে জমিজমা বিক্রি করে চাকরি নেন কৃষক আক্তারুজ্জমানের ছেলে নয়ন। তার মৃত্যুতে পরিবার আজ নিঃস্ব। মূর্ছা যাওয়ার আগে পারভীন বেগম কান্না করে বলেন, ‘মোর ছইল (আমার ছেলে) বিএ পরীক্ষার রেজাল্ট হইলে আরও ওপর পদর (প্রমোশন) গেইলো হয়। তারপর ছইলোক বিয়া দিনু হয়। মোর আশা আর পূরণ হইল না।’
নয়নের খালু আব্দুল খালেক বলেন, ‘হামরা আর কাক নিয়া বাঁচমো, হামার সউগ শ্যাষ। ওই ছইল কোনায় সবার ভরসা আছিল।’
প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নয়ন খুব ভালো ছেলে। সবার সঙ্গে তার সদ্ভাব ছিল। বাড়িতে এলে সবার খোঁজ খবর নিত।’
নয়ন সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশনে প্রথম যোগদান করেন ২০২৪ সালে। পরে তিনি রাজধানীর তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে যোগ দেন। ২১ দিন ট্রেনিং করে বিশেষ টিমে কাজ করেছিলেন। তার ডিগ্রি পরীক্ষা শেষ হয়েছে তবে রেজাল্ট জানতে পারলেন না।
বুধবার রাতে দুইটার দিকে সচিবালয়ে আগুন নেভানোর কাজে ছিলেন নয়ন। রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় পড়ে যান নয়ন। উদ্ধার করে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। রাত চারটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের আরেক সদস্য হাবিবুর রহমানও আহত হয়েছেন।