ঢাকা বুধবার, মে ৮, ২০২৪
এডহক কমিটিকে দায়িত্ব না দেওয়া চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর অবৈধ মহাপরিচালকের খুঁটির জোর কোথায়?
  • শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর
  • ২০২২-০৬-২২ ০৯:৩৪:৫৭
ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীকে বিগত দশ বছর ধরে সাংগঠনিক ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নিজেকে স্বঘোষিত গঠনতন্ত্র বিশেষজ্ঞ দাবি করা চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত শুরু থেকেই গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনকরে অবৈধভাবে মহাপরিচালকের পদে বসে ছিলেন। কারণ বর্তমান খাদ্য সচিব এবং সাবেক জেলা প্রশাসক ও চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি ইসমাইল হোসেন এর সভাপতিত্বে গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিঃ তারিখের বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন সাপেক্ষে কাজী শাহাদাতকে সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মহাপরিচাকের ক্ষমতার মসনদে বসে গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। গত দশ বছরেও তিনি গঠনতন্ত্রই সংশোধন করে মহাপরিচালকসহ চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদকে বৈধতা দেননি। অথচ কাজী শাহাদাত নিজে অবৈধ মহাপরিচালক হয়ে কীভাবে সাহিত্য একাডেমীর সভাপতির করা এডহক কমিটিকে অবৈধ বলাকে অপরাধ হিসেবে দেখছেন চাঁদপুরের সচেতন মহল। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রের ৩৫ এর (ক) উপ- ধারায় উল্লেখ আছে " নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী বৎসরের বার্ষিক সাধারণ সভায় তিন সদস্য বিশিষ্ট (একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই জন সদস্য ) একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হইবে। কমিশন নির্বাচন বিধি প্রনয়ণ ও নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করিবেন এবং ফলাফল প্রকাশ করিবেন।" (খ) নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কমপক্ষে ৬০ ( ষাট) দিন পূর্বে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বিধি প্রণয়ন করিবেন। এবং নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন করাইয়া লইবেন। উল্লেখিত নির্বাচন বিধি নির্বাচন বিজ্ঞপ্তির সাথেই প্রকাশ করিতে হইবে। (গ) নির্বাচন কমিশনের কোন সদস্যই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারিবেন না। (ঘ) বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাচন করিতে হইবে। কিন্তু গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিঃ তারিখের বার্ষিক সাধারণ সভায় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রের ৩৫ এর (ক,খ, গ, ঘ ) উপ- ধারা অনুযায়ী সেদিন চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন করা হয়নি। যার জন্য তখন সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন সাপেক্ষে কাজী শাহাদাতকে মহাপরিচালকসহ ৩ বছরের জন্য সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মহাপরিচাকের ক্ষমতার মসনদে বসে গঠনতন্ত্রই সংশোধন না করে ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিঃ থেকে ২৪ মে ২০২২ খ্রিঃ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর কুক্ষিগত ও জিম্মি করে রেখেছেন। সেদিন তাকে যারা মহাপরিচালক বানিয়েছিলেন তাঁদের অসম্মান করেছেন এবং নিজেরসহ নির্বাহী পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের অবৈধ ও বেআইনি কথার তকমা লাগিয়েছেন। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর একাডেমীর এডহক কমিটি সদস্য মাহবুবুর রহমান সেলিম জানান আইন অনুযায়ী সাবেক অবৈধ মহাপরিচালকের কার্যকাল ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি এবং তার সকল কার্যক্রম ছিল পুরোপুরি অবৈধ। কাজেই গঠনতন্ত্র সংশোধনের আগে তিনি কোনক্রমে মহাপরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন না, কিন্ত তিনি তা করেছেন। এখনও বেআইনীভাবে চেয়ার দখল করে আছেন। এই অবৈধ মহাপরিচালক এখনো কোন আইন এবং আদেশ মানছেননা। ৩ বছরের কমিটি অগঠনতান্ত্রিক এবং অবৈধভাবে ১০ বছর পার করেছেন তিনি। গত ১০ বছরে সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ পরিষদের একটি সভাও তিনি করেনি। একাডেমী আয়-ব্যয় সঠিক সংরক্ষণ করে বার্ষিক সাধারণ পরিষদের সভায় অনুমোদন করান নি। অথচ চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রের অধ্যায় সাত এর ৩০ এর উপ- ধারা( ১) এর (ক) তে উল্লেখ আছে " প্রতি বছর সাহিত্য একাডেমির সাধারণ পরিষদের সভা কমপক্ষে একবার অনুষ্ঠিত হইবে। " (খ) বার্ষিক সাধারণ সভা প্রতিবৎসর ১০ ই চৈত্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইবে। খ) বার্ষিক সাধারণ সভায় বিগত বৎসরের কার্যক্রমের উপর আলোচনা এবং পরবর্তী বৎসরের কার্যক্রমের দিক নিদর্শনা প্রদান করিবে। (ঙ) এই সভা একাডেমীর পরবর্তী বৎসরের বাজেট অনুমোদন করিবে। (চ) এই সভা বিগত বৎসরের আয় ব্যায়ের হিসাব অনুমোদন করিবে। সাবেক মহাপরিচালক চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির গঠনতন্ত্রের অধ্যায় সাত এর ৩০ এর উপ- ধারা( ১) এর (ক,খ, ঙ, চ ) অনুসরণ এবং প্রতিপালন না করে একাডেমীর বিগত ১০ বছরে লাখ লাখ টাকা দুর্নীতি ও আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিগত ১০ বছরে একজন সাধারণ সদস্যও তিনি সাহিত্য একাডেমীতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। যার জন্য এই সময়ে সাহিত্য কর্মীরা বাহিরে ঘুরে ফিরে সাহিত্য চর্চা করে আসছে। সাহিত্যকর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল একাডেমী যাতে প্রতিদিন খোলা রাখা হয় এবং সেখানে যাতে সাহিত্যকর্মীদের অবাধ পদচারণা থাকে। কিন্তু গত ১০ বছরেও সেই দাবি কখনো আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এর দায়িত্ব অবহেলা এবং ব্যর্থতার দায়ে গত ২৪ মে ২০২২ খ্রি. তারিখে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (ছ) উপ- ধারার ক্ষমতাবলে সাহিত্য একাডেমীর মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং অবৈধ নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। একই দিন একাডেমীর অন্তবর্তীকালীন কার্য পরিচালনার জন্য তিনি গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (জ) উপ- ধারা অনুযায়ী ১১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন একটি এডহক কমিটি ঘোষণা করেন। কোন প্রকার সভা বা নোটিশ ছাড়া চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রে সভাপতিকে নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা এবং এডহক কমিটি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ, অবৈধ এবং বিলুপ্ত কমিটির মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও সাবেক মহাপরিচালক এখনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়নি। এবিষয়ে তাকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেই এপর্যন্ত তিনবার নোটিশ করা হয়েছে। এডহক কমিটি গঠনের প্রায় এক মাস পার হতে চল্লেও অগঠনতান্ত্রিক ও অবৈধ সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এখনো এডহক কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় চাঁদপুরের সাহিত্যপ্রেমী, সাহিত্যকর্মী এবং সচেতন মহলের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এর পিছনে খুঁটির জোর কোথায়? কাজী শাহাদাত নিজে অবৈধ মহাপরিচালক হয়ে কীভাবে সাহিত্য একাডেমীর সভাপতির করা এডহক কমিটিকে অবৈধ বলায় অপরাধ হিসেবে দেখছেন সবাই। এনিয়ে অনেকে হাস্যরস করছেন। একজন লোক এতটা স্বৈরাচারী দাম্ভিক ও ভুয়া হন কীভাবে! এর নেপথ্যের শক্তি বা ছায়া নিয়েও জনমনে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছ। এব্যাপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষক ও আইসিটি) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার বলেন, নোটিশ দেওয়ার পর চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতকে এবার অফিসে ডাকা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়। এদিকে চাঁদপুরের সাহিত্য প্রেমীদের মাঝে এনিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি অভিলম্বে নতুন কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হোক। তাদের আশা অচিরেই চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী সাহিত্যকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠুক। আর না না হয় সাহিত্যকর্মীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
সুন্দরবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করবে আরণ্যক ফাউন্ডেশন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু হত্যা বন্ধের দাবিতে দিনাজপুরে শিশু শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদা
সর্বশেষ সংবাদ