মুক্তিযোদ্ধার কবর বিনাশের উদ্যোগ, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা
- মজিবুর রহমান খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
-
২০২২-০৮-৩০ ১১:২৬:৩৭
- Print
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর বিনাশের অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের ছেলে এডভোকেট মো: সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে দ্রুত বিচার আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন চৌধুরী, তার ছোট দুই ভাই ইমান উদ্দিন চৌধুরী, আলাউদ্দিন চৌধুরীসহ ৮জনকে আসামী করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীরা হচ্ছে মো: হেবজু ভূইয়া,বিল্লাল ভূইয়া,হাবিব ভূইয়া,দুলাল চৌধুরী ও আবদুস সাত্তার। মামলা দায়েরের পর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহ সব আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক আল-আমিন। সাইফুল ইসলাম নিজেই আইনজীবী হিসেবে মামলাটি পরিচালনা করছেন।
মামলার এজহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান,বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের পূর্ব পুরুষ আব্দুল লতিফ মসজিদের জন্যে প্রায় ৮০ বছর আগে জায়গা ওয়াকফ করে দিয়ে যান। মসজিদের পশ্চিম দিকের জায়গা কবরস্থানের জন্যে রেখে যান। কবরস্থানের পূর্ব দিকে তাদের দেওয়া জায়গায় গড়ে উঠেছে মসজিদ। দীর্ঘদিন যাবত সেই কবর স্থানে স্থানীয়দের লাশ দাফন করা হচ্ছে। এরই মাঝে ২০২০ সালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম মারা গেলে তাকে পারিবারিক সেই কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপরও সেই কবরস্থানটিতে নিয়মিত কবর দেওয়া হচ্ছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। সেই নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিনও মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুইজনের কেউই দলীয় মনোনয়ন পাননি। পরে সাঈফ উদ্দিন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। সাইফুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করায় সাঈফ উদ্দিনের আক্রোশ সৃষ্টি হয়। সেকারনে ওই কবরস্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের কবর রাখা যাবে না বলে দাবি তুলেন ইউপি চেয়ারম্যান। অজুহাত হিসেবে গ্রামবাসীকে বুঝিয়েছেন, মসজিদের জায়গা কবর স্থানের ভেতরে রয়েছে। সেই জায়গায় কবর চলবে না। এনিয়ে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ৬জন আইনজীবীর উপস্থিতিতে শালিসি সভা অনুষ্ঠিত হলে তা কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া পন্ড করে দেন ইউপি চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন। পরে উপায় না দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের ছেলে আদালতের শরনাপন্ন হলে আদালত এই কবরস্থানের উপর ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত ২৭ আগস্ট চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন তার ভাইদের নিয়ে অবৈধ ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের কবর বিনাশে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মান কাজ করেন। এই খবর পেয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম থানা পুলিশ নিয়ে গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী দেয়ালের কাজ বন্ধ করেন। এর জেরে ওই দিন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন ও তার ভাইয়েরা আরো লোকজন নিয়ে কবরস্থানের পাশে পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এই ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। তারপরও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সাঈফ উদ্দিনের অপতৎপরতা থেমে থাকেনি। পরে দ্রুত বিচার আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আইনজীবী ও বাদি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহ ৬জন আইনজীবীকে উপস্থিত রেখে শালিসি সভায় বসি। কিন্তু সেই সভায় ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের আইন, শেখ হাসিনা ও নৌকা প্রতিক নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেই সভা পন্ড করে দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম খোকন বলেন, 'একজন মুক্তিযোদ্ধার কবর রক্ষায় এই মামলায় আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত ইউপি চেয়ারম্যান ও তার দুই ভাই সহ সকল আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে।'
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'তারা মসজিদের নামে জায়গা দিয়েছে। আবার সেই জায়গা থেকে ৬ শতাংশ বিএস এ তাদের নামে উঠিয়ে ফেলেছে। আমি কোন অনৈতিক কাজে জড়িত নয়। প্রয়োজনে মসজিদ কমিটির কাছে কাগজ আছে, এসে দেখে যেতে পারেন'।