ঢাকা সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
জিন শয়তান ও মানুষ শয়তান, দুটোই মানুষকে দেয় কু-পরামর্শ করে পথভ্রষ্ট
  • শাহাদাত হোসেন শান্ত
  • ২০২৩-০৪-১২ ১২:১৩:৩৮

পবিত্র কুরআনের সূরা নাসের ৬ নং আয়াতে আল্লাহ দুই ধরনের শয়তানের কথা বলেছেন। একটি হলো জিন শয়তান অপরটি মানুষ শয়তান। রমজান মাসে জিন শয়তানকে বন্দী রাখা হলেও মানুষ শয়তানের কার্যক্রম কিন্তু অব্যাহত থাকে। জিন শয়তান যা মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং মানুষ শয়তান, যা প্রকাশ্যে মানুষকে কু-পরামর্শ দেয় ও পথভ্রষ্ট করে।

আল্লাহ তাআলা সুরা নাসে বান্দাদেরকে মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যম প্রমাণিত হয়েছে যে মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে। যা প্রকাশ্যে মানুষকে কু-পরামর্শ দেয় ও পথভ্রষ্ট করে।

মহান আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী জিন শয়তান এবং মানু‌ষ শয়তান সম্পর্কে জানার সুবিধার্থে পবিত্র কুরআনের ছয় আয়াত বিশিষ্ট সূরা নাস উল্লেখ করা হলো- 
১। কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিন্না-ছ,
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,

২। মালিকিন্না-ছ,
মানুষের অধিপতির ।

৩। ইলা-হিন্না-ছ।
মানুষের মা’বুদের ।

৪। মিন শাররিল ওয়াছ ওয়া-ছিল খান্না-ছ। 
তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,

৫। আল্লাযী ইউওয়াছবিছুফী সুদূরিন্নাছ-। 
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে ।

* ৬। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-ছ।
জিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে ।

বর্ণিত সূরার তাফসীর অনেক ব্যাপক। কিন্তু এই সূরায় শয়তান সম্পর্কে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার অনিষ্টকারিতা হতে বাঁচার জন্য মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। কেননা শয়তান মানুষের নিত্য সঙ্গী এবং সে কাউকে ভয় পায় না একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত। বান্দা যখনই আল্লাহর নাম নেয়, তখনই সে পিছিয়ে যায়। শয়তান মানুষের রগ-রন্ধ্রে চলাফেরা করে। একে আটকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই। অথচ এর প্ররোচনাতেই মানুষ সমস্ত পাপ করে। তাই একে দমন করার একমাত্র কৌশল হিসাবে মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহর নাম শুনলে শয়তান পিছিয়ে যায় ও লুকিয়ে যায়। আবার যখনি বান্দা বেখেয়াল হয়ে যায়, তখনি সামনে চলে আসে ও কুমন্ত্রণা দেয়। এক্ষেত্রে আকাশের মিটিমিটি নক্ষত্রের মতো বলা হয়েছে। নক্ষত্র এই দেখা যায়, এই মিলিয়ে যায়। শয়তানও অনুরূপ আল্লাহর নাম স্মরণ করলেই পালায়। আবার আল্লাহকে ভুলে গেলে সামনে চলে আসে। এই লুকোচুরি স্বভাবের জন্য শয়তানকে অত্র আয়াতে ‘খান্না-ছ ’ বলা হয়েছে। ‘খান্না-ছ ’ অর্থ, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। আর এটা হল শয়তানের প্রথম বৈশিষ্ট্য।  

উক্ত সূরার ৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন - মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-ছ।
জিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে। এখানে জিন জাতি ও মানুষ জাতির মধ্যে শয়তান যে বিরাজমান তা বলা হয়েছে। 

শয়তান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সঙ্গী হিসাবে শয়তানকে নিযুক্ত করা হয়নি। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও? 
তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমিও। 
তবে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন। সেজন্য সে অনুগত হয়ে গেছে। ফলে সে আমাকে নির্দেশ করে না ভাল ব্যতীত’।
(মুসলিম হা/২৮১৪ ‘ক্বিয়ামতের বর্ণনা’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৬৭ ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা’ অনুচ্ছেদ।)

জিন শয়তান যা মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং মানুষ শয়তান, যা প্রকাশ্যে মানুষকে কু-পরামর্শ দেয় ও পথভ্রষ্ট করে।
আল্লাহ বলেন, ‘আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য বহু শয়তানকে শত্রুরূপে নিযুক্ত করেছি, মানুষের মধ্য থেকে এবং জিনদের মধ্য থেকে। তারা একে অপরকে মনোমুগ্ধকর কথা দিয়ে প্ররোচিত করে থাকে। যাতে তারা ধোঁকায় পতিত হয়। যদি তোমার প্রভু চাইতেন, তাহলে তারা এগুলি করতে পারত না। অতএব তুমি এদেরকে এবং এদের মিথ্যা রটনাগুলিকে দূরে নিক্ষেপ কর’। 
( আল কুরআন : সূরা- আন‘আম ৬/১১২)। 
নবীদের যখন এই অবস্থা তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন হবে, তা সহজেই বোধগম্য।

তবে মনের মধ্যে শয়তানী চিন্তা উদয় হলেই বান্দা গোনাহগার হিসাবে বিবেচিত হবে না, যতক্ষণ না সে মুখে বলবে বা লিখবে অথবা কাজে পরিণত করবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমার উম্মতের ঐসব বিষয় ক্ষমা করেছেন, যেসব বিষয় তাদের অন্তরে উদয় হয়। যতক্ষণ না তারা সে অনুযায়ী কাজ করে অথবা কথা বলে’। (বুখারী হাদিস- ২৫২৮, মুসলিম হাদিস- ১২৭, মিশকাত হা- ৬৩ ‘ঈমান’ অধ্যায় )

শয়তানের ধোঁকা হতে বাঁচার একমাত্র পথ হলো আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করা এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা। পরিশেষে আমার লেখা 'শয়তানের কুর্নিশ' কবিতার অংশ বিশেষ দিয়ে উক্ত বিয়ষের পরিসমাপ্তি করলাম। 

" কতকাল ধরে শয়তান খুঁজেছি আঁখি যুগল খুলে,
শয়তান শয়তান করে দিশেহারা তবু পাইনি তারে ভুলে।

হাল জমানায় শত শয়তান দেখি দুই নয়ন জুড়ে,
মুখোশ পরা শয়তানকান্ডে অন্তর জ্বলে পুড়ে।

কাছ থেকে দেখেছি ইবলিশকে আঁখি যুগল মেলে,
প্রকাশ্যে শোনায় নীতিবাণী আড়ালে কু-কর্মের জাল ফেলে।

শয়তান সাজে অভিনয়বাজ, ভন্ড, প্রতারক, মাস্তান,
কভু সাজে দুর্নীতির রাজা-রানি কভু মানুষরূপী শয়তান।

মানবের মতোই বাকশক্তি শয়তানের তফাৎ মিথ্যে বলে, 
বুঝতে দেয় না অবলা মানুষকে পথ চলে বড়ই কৌশলে।

শোন হে মানুষ, শয়তান কোথায়? কোথায় তার খোঁজ?
তোমারই গায়ে গা ঘেঁষে চলে ভাবখানা একেবারে নির্দোষ।

মুখোশ পরা শয়তান সংখ্যায় খুবই  অল্পজন, 
যুগ যুগান্তরে এ হারামিরাই করছে সত্য সুন্দর হনন।

শয়তান বড়ই হারামজাদা; বাঁধা যায় না শিকলে,
চুরি, দুর্নীতি, রাহাজানি সব কিছুই তার দখলে! 

মানুষ যখনি মহামানব হয় যদি না খায় হারাম-ঘুষ, 
শয়তান তাঁর পদতলে পড়ে হারায় জ্ঞান-হুঁশ। "
—০—
লেখক পরিচয় :
শাহাদাত হোসেন শান্ত 
কবি, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মী। 
১২ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ 

দিনাজপুরে কুমারী পূজায় ভক্ত-পূণ্যার্থীদের ভীড়; দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা
জিন শয়তান ও মানুষ শয়তান, দুটোই  মানুষকে দেয় কু-পরামর্শ করে পথভ্রষ্ট
ভোলায় ইসলামী আন্দোলনের স্বাগত মিছিল
সর্বশেষ সংবাদ