চাঁদপুরে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদন্ড
- শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর
-
২০২২-০৮-২৩ ১০:০৩:৩২
- Print
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের রাসূলপুর গ্রামে গৃহবধু রহিমা আক্তার (২০) কে ধর্ষণ ও শ^াসরোধ করে হত্যার অপরাধে মো. জিয়া (৩২), কামাল মিয়াজী (৩৬), মো. আবুল বাসার (৪৮) ও মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম (৩৮) কে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদন্ড এবং ৯(১)৩০ ধারার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত। রায়ে বলা হয়, উভয় সাজা একই সঙ্গে চলমান থাকবে।
মঙ্গলবার (২৩ আগষ্ট) দুপুরে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী এই রায় দেন। হত্যার শিকার রহিমা আক্তার রসূলপুর গ্রামের মো. সফিউল্লাহ মিয়াজীর মেয়ে।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মো. জিয়া রসুলপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হক মাষ্টারের, কামাল মিয়াজী আবুল খায়ের মেয়াজীর, আবুল বাসার আব্দুল জলিলের ছেলে এবং মাহমুদা বেগম নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, ২০১১ সালে রহিমা বেগম এর সাথে পাশ^বর্তী ঘিলাতলী গ্রামের মান্না মাষ্টারের ছেলে আবু জাফরের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর রহিমার পিতা-মাতা জানতে পারে আবু জাফর একাধিক মেয়েদের সাথে পরকিয়ায় লীপ্ত। সর্বশেষ জানতে পারেন গৌরিপুর এলাকার হালিমা নামের একটি মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক। এই নিয়ে আবু জাফর ও রহিমার মধ্যে কলোহ সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ২০১৩ সালের ১৯ মে রহিমা তার পিতার বাড়ী থেকে স্বামীর নিকট নায়ের গাঁও স্বামীর কর্মস্থল নারায়নপুর কোল্ড স্টোরে রওয়ান করেন। পিতার নিকট বলে যান রাতে আবার বাড়ীতে ফিরে আসবেন। কিন্তু রাতে আর ফিরে আসেননি। পরদিন ২০ মে রহিমার পিতা জামাতা আবু জাফরকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসা করলে বলে রহিমা তার কাছে আসেনি। এরপর ২১ মে সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে ৭টার দিকে জামাতা আবু জাফর ফোন করে জানান একজন মেয়ের মরদেহ রসুলপুর কদম আলীর বাড়ীর পাশে আক্তারের ভুট্টা খেতে পড়ে আছে। রহিমার পিতা মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরই মধ্যে জামাতা আবু জাফর ঘটনাস্থল থেকে কেটে পড়েন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মতলব থানায় নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় রহিমার পিতা মো. সফিউল্লাহ মিয়াজী মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি চলমান অবস্থায় তদন্ত করে হত্যা ও ধর্ষণের সাথে জড়িত মো. জিয়া, কামাল মিয়াজী, মো. আবুল বাসার ও মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগমকে অভিযুক্ত করে মতলব দক্ষিণ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফুর রহমান ৩১ আগষ্ট ২০১৩ তারিখে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সাইয়্যেদুল ইসলাম বাবু বলেন, মামলাটি দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর চলাকালীন সময়ে ১৯ জনের স্বাক্ষ গ্রহণ করা হয়। স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে আদালত এই রায় দেন। তবে রায়ের সময় আসামীদের মধ্যে মাহমুদা বেগম পলাতক ছিলেন এবং বাকী তিনজন উপস্থিত ছিলেন।
মামলার রায়কালীন সময়ে বাদী রহিমার পিতা মো. সফিউল্লাহ মিয়াজী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে তারা হত্যা করেছে। আমার মেয়েত আর পাব না। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর হলে আমার পরিবার শান্তি পাবে।
সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন খোরশেদ আলম শাওন এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. মো. সফিকুর রহমান ভুঁইয়া।