পাবনার সুজানগর উপজেলার রানীনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহীনের গাড়ী বহর ফেরার পথে পুলিশ একটি গাড়ীর ভেতর থেকে বৈধ-অবৈধ দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় গাড়ীর চালক কে আটক করা হয়েছে ।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার রানীনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্ধিতসভা শেষে অস্ত্র দুটি জব্দ করা হয়। এদিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বিষয়টি গণমাধ্যম কে নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলার সুজানগরের ১০ ইউনিয়নের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী গ্রুপের মধ্যে কমবেশি সহিংসতা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিরসনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রানীনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সভা শেষে সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের গাড়ীর বহর উপজেলার দিকে রওনা দেয়। এ সময় পুলিশ বহরের একটি গাড়ীতে তল্লাশী চালিয়ে একটি ওয়ান শ্রুট্যার গান আরেকটি শর্টগান উদ্ধার করে। অস্ত্র দুটির একটি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন তোফার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা আরেকটি অবৈধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুজানগর উপজেলার আসন্ন নির্বাচনে ১০ টি ইউপিতে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীর বাহিরে প্রত্যেক ইউপিতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছে। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রায় সবাই উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিনের সমর্থক। সুজানগর পৌরসভার সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন তোফার ছেলে ও ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনির কাছে অস্ত্র দুটি রাখা ছিল। গাড়ীতে রেখে সে দোকানে সিগারেট। আনতে যাওয়ার মুহুর্তে গাড়ীতে তল্লাশী চালায় পুলিশ। এসময় সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র দুটি জব্দ ও ড্রাইভারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহীন বলেন, বর্ধিত সভায় অনেক নেতাকর্মী ও বিপুল সংখ্যক গাড়ীর বহর ছিল। কে কি অবস্থায় ছিলেন সেটা আমার জানার কথা নয়। তাছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের কথা আপনাদের কাছ থেকেই আমি জানলাম। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষের লোকজন হিংসাত্বক ভাবে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা ও মনগড়া নাটক সাজানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, অস্ত্রের মালিকও আমি না, অস্ত্র নেয়ার বিষয়টিও আমি জানি না। কোন গাড়ীতে কারা কি উদ্দেশ্যে নিয়ে বহন করেছে সেটাও আমার জানার কথা নয়।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব বলেন, ‘উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে শাহিনুজ্জামানের নিজস্ব লোক মনোনয়ন না পাওয়ায় প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছেন। নিজে নেতৃত্ব দিয়ে এসব ইউনিয়নে নৌকার ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘রানীনগর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী তৌফিকুল ইসলাম পীযুষের বিপরীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক টুটুল কাজী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সভায় বিশৃঙ্খলা করতেই তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র অবস্থায় এসেছিলেন।’
আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী জানান, একটি বৈধ আর একটি অবৈধ মোট দুটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে গাড়ী বহরের একটি হাইস থেকে। এ সময় হাবিবুল্লাহ নামে চালককে আটক করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা রোধে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।