ঢাকা বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
বাজেটের বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়
  • নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • ২০২০-০৬-১১ ২১:০১:৩৫

প্রতিটি বাজেটেই অনেক কিছুই থাকে। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের দুটি দিক রয়েছে। একটি স্বাস্থ্যগত দিক, অন্যটি অর্থনৈতিক দিক।

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ হওয়ায় স্বাস্থ্য খাত আলোচনায় এসেছে। কিন্তু আগামী বাজেটে এ খাতে যে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। বরাদ্দ আরও লাগবে। আমাদের হাসপাতালগুলোর চিত্র ভালো নয়।

হাসপাতালগুলোয় জীবন রক্ষার ভেন্টিলেটরসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানহ ও জনবলের অভাব রয়েছে। অবকাঠামোসহ চিকিৎসা পরিবেশ ভালো নয়। ওষুধের স্বল্পতা আছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য কর্মীদের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই বরাদ্দ দিয়ে এসব পূরণ করা সম্ভব হবে না।

বাজেটের অন্য দিকটি হলো অর্থনৈতিক। করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভালো যাচ্ছে না। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, প্রবাসী আয়, ঋণ বিতরণের চিত্র দেখলেই তা বোঝা যায়। অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। কিন্তু এটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি এবারের বাজেটে।

প্রস্তাবিত বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো ধরা হয়েছে, তা বস্তুনিষ্ঠ নয়। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার, রাজস্ব আহরণের পরিমাণ, ব্যয়ের আকার, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নসহ যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো ধরা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। করোনাকালীন সময়ে যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন অযোগ্য।

রাজস্ব সংগ্রহের প্রাক্কলন অবাস্তব
মোটা দাগে বাজেটকে আমার কাছে সাদা, কালো ও ধূসর বর্ণে আবৃত মনে হয়েছে। বাজেটের সাদা দিক বলতে আমি যেটা বোঝাচ্ছি তা হলো, করোনার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটি একটি সঠিক পদক্ষেপ। এ অর্থ কোন খাতে কত ব্যয় হবে, সেটা এখনই হয়তো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু টাকাটা রাখা দরকার। এছাড়া অনেক বড় বড় খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি, যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন যোগাযোগ ইত্যাদি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটিও ভালো পদক্ষেপ। আর ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়সীমা ও করহার কমানো হয়েছে। এটিও ভালো উদ্যোগ।

আর বাজেটের কালো দিক হলো সামাজিক সুরক্ষা খাতে বর্তমানে নগদ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কারণ করোনার কারণে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে আছে অথবা এরই মধ্যে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা জাল কার্যক্রম যে তিনটি মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি পরিচালনা করে সেগুলোতে সর্বমোট মাত্র এক হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই অপ্রতুল। অন্য কালো দিকটা হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যটা। এ লক্ষ্য কীভাবে অর্জিত হবে, তা আমার জানা নেই। আমার ধারণা, কমপক্ষে এক লাখ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হবে। কারণ ব্যক্তিগত কর কমানোর ফলে কিছু কর তো এমনিতেই কম আদায় হবে। আর বিলাসবহুল বিষয়ে কর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিলাসবহুল পণ্যের বিকিকিনি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ কম। কাজেই রাজস্ব ঘাটতি হবেই। রাজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণে গতবারের সঙ্গে এবারের তেমন তফাত নেই।

আর ধূসর দিকটা হলো, সরকার সার্বিক বিষয়টি কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবে সেটি। কারণ যে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা মোকাবিলা করতেই সরকার গলদঘর্ম হয়ে পড়বে। জিডিপির ছয় শতাংশ ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে। এখন রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি দেখা দেবে তাতে মোট বাজেট ঘাটতি জিডিপির সাত-আট শতাংশে উঠে যেতে পারে। শুধু ব্যাংক থেকে ঘাটতি অর্থায়নের সংস্থান করা সম্ভব হবে না। সেটা করা হলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন খাতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি বিদ্যমান। এসব বিষয় সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা আমার কাছে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন।

করোনার ওপর নির্ভর করছে বাস্তবায়ন
সামগ্রিকভাবে প্রস্তাবিত বাজেট করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ছোবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ বাজেটে অনেক বিষয়েই ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ীদের করছাড় ও ব্যক্তিগত কর আয়সীমা বৃদ্ধিÑযা খুবই ইতিবাচক। কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে এর বিরোধী। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক এ বাজেট।

তবে একটি বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল। দেশীয় ও বিদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন, আগস্টে করোনা পরিস্থিতি সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে পারে বাংলাদেশে। যদি এটি হয়, তাহলে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরেও অর্থনীতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করবে না।

আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হওয়া শুরু করে, তাহলে উচ্চাভিলাষী এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। আবার অর্থনীতি করোনা আক্রান্তের মধ্যেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি ধরা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের হয়রানি করতে পারেন। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা কর দিতে পারবেন না।

আবার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজটি ঘোষণা করা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে। কিন্তু করোনায় আমাদের অর্থনীতি কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তার কোনো তথ্য এখনও করা হয়নি। আগামী বাজেটেও তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আরও বেশি লাগবে। শুধু বরাদ্দ দিলেই হবে না। এর সঠিক বাস্তবায়নও দরকার। প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। মোটা দাগে বললে, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা ও উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়ন নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির উন্নয়নের ওপর। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। না হলে এ উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

এবারের বাজেট  পুঁজিবাজারবান্ধব
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট হয়েছে পুঁজিবাজারবান্ধব। অনেক দিন থেকেই এমন একটি বাজেটের প্রত্যাশা করছিলাম। পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটের সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছেÑবিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া। এ অর্থ পুঁজিবাজারে এলে তা বাজার সচল করতে সহায়ক হবে। কিছু শর্তসাপেক্ষে এ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সবাই যদি এই নিয়ম মেনে পুঁজিবাজারে আসেন, তাহলে বাজার এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্যই ভালো হবে। অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করবেন।

এবারের বাজেটে বন্ড লেনদেন মূল্যের ওপর উৎসে কর কর্তনের পরিবর্তে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক লেনদেনে নির্ধারিত কমিশনের ওপর উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। এতে বন্ড মার্কেট সচল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এ মার্কেট সচল হলে পুঁজিবাজারও গতিশীল হবে।

বাজেটে দ্বৈত কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটাও ভালো খবর। কারণ আগে এক আয়ের ওপর দু’বার কর দেওয়া লাগত, এখন সেটা হবে না। শুধু পুঁজিবাজারই নয়, এবারের বাজেট হয়েছে ব্যবসাবান্ধব। সবাই উপকৃত হবেন। বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। এতে তারা কিছুটা হলেও করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। কারণ করোনার জন্য সবকিছু বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরাও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাজেটে তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। সবকিছু মিলে বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ কিন্তু অসম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধু জন্মেছিল বলেই জন্মেছে এ দেশ -হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি
অপ্রতিরোধ্য বাজার সিন্ডিকেট: মজুতের শাস্তি আটকে আছে বিধিতে
ডাইফ সেবা সপ্তাহ শুরু আজ
সর্বশেষ সংবাদ