চট্টগ্রামে ১০ এলাকায় ওয়াসার পানির সমস্যা, দুর্ভোগে রোজাদাররা
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
-
২০২৪-০৩-১৮ ১০:৪২:৫৭
- Print
চট্টগ্রাম নগরীতে এমনিতে রয়েছে পানি সংকট। তার উপর লবণাক্ততার কারণে এ সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ওয়াসা রেশনিং করে এ সংকট দূর করার চেষ্টা করলেও সমস্যা কাটছে না নগরীতে। নগরীর অন্তত ১০টি এলাকায় পানির সমস্যায় ভুগছেন রোজাদাররা।
পবিত্র রমজানে চাহিদা বাড়লেও লবণাক্ততার কারণে পানি উৎপাদন বাড়েনি ওয়াসার। উল্টো পানি সংকটের কারণে নগরীর কোনো কোনো এলাকায় রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে সেবা সংস্থাটি। এ নিয়ে দুর্ভোগে আছেন গ্রাহকরা।
সূত্র জানায়, হালদা নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পানির কারণে ওয়াসার উৎপাদন কমেছে দৈনিক ৪ থেকে কোটি লিটার। এতে নগরীর সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, ঝর্ণাপাড়া, লালখান বাজার এলাকা, আলকরণ, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, পাঠানটুলীসহ নগরীর অন্তত ১০টি এলাকায় পানি সংকট লেগে আছে। এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করছে ওয়াসা।
ওয়াসা সূত্র জানায়, গত বছরের মতো এবারও ওয়াসার পানিতে অসহনীয় মাত্রায় লবণ মিলছে। কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়ার ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জোয়ারের সময় হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ রাখছে ওয়াসা।
হালদা নদী থেকে মোহরা ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের মাধ্যমে পানি উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার। কিন্তু নদীর পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পানি উত্তোলন বন্ধ রাখে। গতকাল আলোচ্য দুইটি শোধনাগারে পানি উৎপাদন কমেছে প্রায় এক কোটি লিটার। একই পরিস্থিতি কর্ণফুলী নদীর ক্ষেত্রেও। কাপ্তাই লেকের পানি ছাড়া কমে যাওয়ায় স্তর কমে গেছে এ নদীতে। তাতে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ প্রকল্পে।
সূত্র আরো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে হালদা নদীর প্রতি লিটার পানিতে সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৩১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণের উপস্থিতি মিলছে। বিশেষ করে আমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময়ে লবণের পরিমাণ মিলছে আরো বেশি। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রাখছে ওয়াসা। তাতে কমে গেছে ওয়াসার পানি উৎপাদন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় কাপ্তাই লেকে পানি কমে গেছে। এ কারণে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি ছাড়া হচ্ছে না কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর উজানে মিঠা পানির প্রবাহ কমে গেছে। জোয়ারের সঙ্গে কর্ণফুলী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকছে সাগরের লোনা পানি। ফলে মোহরা শোধনাগারে পানি শোধনের পরও অতিরিক্ত লবণ থেকে যাচ্ছে। গভীর নলকূপের পানি মিশিয়ে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা চলছে। তবে আমরা নিয়মিত পানি পরীক্ষা করে যাচ্ছি। ওয়াসার পানির লবণাক্ততা বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে আছে। খাবার অনুপযোগী হলে আমরা বন্ধ করে দেবো অথবা পানি পান না করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াসার সবগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু হালদা নদীতে লবণ ও কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় বর্তমানে পানি উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক প্রায় ৪৫ থেকে ৪৬ কোটি লিটার। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিতরণে এ সংকট চলে আসছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘হালদার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে পানি স্তর কমে গেছে কর্ণফুলী নদীতেও। কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া হ্রাসের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া গভীর নলকূপের পানি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। তাতে ওয়াসার দৈনিক ৪ থেকে ৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমে গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নগরীর কোনো কোনো এলাকায় রেশনিং করছে ওয়াসা।