ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
দিনাজপুরে হরতাল অবরোধে দিন মজুর শ্রেনীর মানুষের জীবন যাপন করা দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে
  • সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর:
  • ২০২৩-১১-২২ ০৬:১৩:৫৭

কয়েক দিন ধরে টানা হরতাল অবরোধে দিনাজপুরের শ্রমজীবী ( দিনমজুর শ্রেনীর) মানুষের জীবন যাপন করাটা অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।  বিশেষ করে যারা শ্রম বিক্রি করে (দিনে আনে দিনে খায় ) তারাই বেশি সমস্যা পড়েছে।

দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠী তলা শ্রমবাজারে সকাল থেকেই  জেলার বিরল, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর সদরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শ্রমজীবীরা শ্রম বিক্রি ( দিন মজুরের) কাজ  করার জন্য এই শ্রম বাজারে আসেন ।

দূরদূরান্ত থেকে কেউ  বাইসাইকেল যোগে  কিংবা পায়ে হেটে  কোদাল , ধামা, কাস্তে ,দা সাথে নিয়ে শত শত নারী , পুরুষ দিনাজপুরের  শ্রমবাজার ষষ্ঠী তলায় এসে বসে থাকেন । মুলত শ্রম বিক্রি করার জন্য ।

বর্তমানে হরতাল অবরোধের কারণে শ্রম বিক্রি হয় না । ফলে জীবন যাপন করাটা অনেকটাই দূবিসহ হয়ে পড়েছে ।  কোন একজন অচেনা মানুষকে দেখলেই দ্রুত ছুটে যায় তার কাছে ,বলে সাহেব কি কাজ করাবেন ? কতজন লোক লাগবে আপনার? কত টাকা হাজিরা দিবেন ।

কয়েক দিন ধরে টানা হরতাল অবরোধের কারনে শ্রম বিক্রি করতে এসে অনেকেই শ্রম বিক্রি করতে না পেরে মুড়ি কিংবা এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা হতে হয়। বাড়িতে থাকা তাদের ছেলে মেয়ে স্ত্রী, বাবা মা তার দিকে তাকিয়ে থাকে। দিন মজুরের কাজ শেষে হয়তো বা তিনি চাল ডাল তরু তরকারী নিয়ে আসবেন এমন আশা করেন । কিন্তু যেদিন দিনমজুরের কাজ জোগাতে না পারে শ্রমজিবীরা সেই দিন শুকনো  মুখ আর ছলছল চোখ নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরে যেতে হয়। এই শ্রমজীবী মানুষদেরকে কষ্টেই  অনাহারে কিংবা অধাহারে তাদের দিন যাপন করতে হচ্ছে ।

শ্রম জীবিদের মধ্যে কেউ বলছে, বাড়ির সর্বশেষ  গরু, ছাগল কিংবা  হাস মুরগি বিক্রি করে সংসার কয়েকদিন চললেও এখন আর পারছি না ।

ষষ্ঠী তলা শ্রম বাজারে ৭০ বছর বয়সি চুল দাড়ি সাদা হওয়ায় ওমর আলীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন বিরলের বাজনা হার থেকে দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠী তলা শ্রম বাজারে শ্রম বিক্রি করতে এসেছি । ঘরের দাড়ি বেড়া কাজ ভাল করতে পারি। বাড়িতে স্ত্রী ছেলে মেয়ে রয়েছে । গত তিনদিন  আগে একদিন শ্রম বিক্রি করতে পেরেছিলেন। ৩০০ টাকা আয় হয়েছিল। আজ তিনদিন ধরে সকালে আসি কিন্তু আর শ্রম বিক্রি হচ্ছে না। সকাল থেকে এখন  ১২ টা পযন্ত কয়েকবার পানি খেয়েছি। আর পারছি না। মরণ যে কবে আসবে মরণের অপেক্ষায় আছে। কথাগুলো বলতে বলতেই চোখের কোন গেসে দু ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো মাটিতে।

ঠিক পাশেই মকবুল আলীও বললেন আমিও এসেছি ধুকুর ঝারি থেকে তারও বয়স ষাটাধ্ব তারও চোখ দুটি  ছলছল মুখটা শুকিয়ে গেছে। সেও বলল বাবা গত তিন দিন আগে আমিও শ্রম দিনমজুরের কাজ করে পেয়েছিলাম ৪০০ টাকা। সে টাকা দিয়ে সেই দিনের চাল ডাল সবজি কিনে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। গত তিনদিন ধরে আর দিনমজুরের কাজ পাচ্ছি না। বয়স  হয়েছে তাই কঠিন পরিশ্রম করতে পারি না। তাই আমাদেরকেও কাজে নিচ্ছে না। কাজও পাওয়া যাচ্ছে না। কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে এই হরতাল অবরোধ যে কবে শেষ হবে। আমরা সুন্দর একটা জীবন চাই। আমরা কাজের বিনিময়ে খাদ্য চাই।  কাজ করতে চাই। এই অস্থিরতা আর ভালো লাগছে না।

চিরিরবন্দরের আউলিয়াপুর  থেকে আসা মাইনুল হোসেন বলেন, হরতাল অবরোধে কাজ হচ্ছে না। বাড়িতেও বসে থাকতে পারছি না। বাসায় দুটো ছোট ছোট  ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদেরকেও ঠিকমতো খাবার দিতে পারছি না।  এভাবে আর কতদিন চলবে। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা একেবারে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম উধ্বগতি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমরা একদিকে দিনমজুরের কাজ নেই। অন্যদিকে বাজারে চাল ডাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊধ্বগতি জীবন যাপন করা একেবারেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

দিনাজপুর ষষ্টীতলা শ্রমিক সরদার আবুল কালাম বলেন, দিনাজপুরের এই ষষ্ঠী তলা শ্রম বাজারে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ জন শ্রমিক শ্রম বিক্রি করতে আসে।  গত কয়েক দিনের টানা হরতাল অবরোধের কারণে এক থেকে দেড়শ জন শ্রমিক শ্রম বিক্রি করতে পারে।  বাকিরা শ্রম বিক্রি করতে না পেরে খালি হাতে মুড়ি খেয়ে কিংবা কেউ পানি খেয়ে বাড়ি চলে যায়।  আবার পরের দিন শ্রম বিক্রি করতে পারবে এমন আশা নিয়ে ষষ্ঠী তোলা এই শ্রম বাজারে উপস্থিত হয় । সেইদিনও  শ্রম বিক্রি না হচ্ছে না। কারণ এই হরতাল অবরোধের কারণে মহাজনেরাও বা গৃহস্থরা  শ্রমজীবী ব্যক্তিদের কে দিনমজুরের কাজ করাইতে আসছে না। কাজের চাহিদা কম থাকায় শ্রমিকের মজুরি অনেক কমে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় আমরা না খেয়ে মারা যেতে হবে। এই অবস্থায় আনে  দিনে খায় এই ধরনের নারী পুরুষ শ্রমিকদের সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা দাবি জানান ।

মাউশির প্রদর্শক ও গবেষণা সহকারি পদের ফল প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন
পঞ্চগড়ে ভারী বর্ষণে ভেঙে গেছে সড়ক, বন্ধ যান চলাচল
পলাশে ঘণ ঘন লোডশেডিং, ৪ হাজার মুরগীর মৃত্যু