ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের রছুল্লাবাদ দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খন্দকার মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
ওই শিক্ষকের মনগড়া বিভিন্ন কর্মকান্ডে তার বিরুদ্ধে ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে, প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকদের হয়রানি করে বিদ্যালয়ের ক্ষতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, গত ৩ বছর ধরে শিক্ষক মুহিবুর রহমান একই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কুহিনূর বেগম ও সহকারী শিক্ষক রাজিয়া সুলতানাকে অভিযুক্ত করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সহ জেলা ও উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে একাধিক অভিযোগপত্র জমা দেন।
সেসব অভিযোগের তদন্তে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তারা কোন অভিযোগের সত্যতা পাননি।
এছাড়াও স্কুল চলাকালীন ছোটখাট বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে দোষী করে জেলা ও উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে জানানো খন্দকার মুহিবুর রহমানের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবশেষে এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত আরেকটি অভিযোগ দেয়া হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। যেটিতে প্রধান শিক্ষক কুহিনূর বেগম ও সহকারী শিক্ষক রাজিয়া সুলতানাকেই অভিযুক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করা, নিয়মিত ক্লাসে না আসা, পাঠদানে অমনোযোগী এমন বহু অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে
গত ১৪ নভেম্বর বুধবার সকালে বিদ্যালয়ে আসেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমান ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: কাইয়ুম।
স্থানীয় চেয়ারম্যান খন্দকার মনির হোসেনের উপস্থিতিতে ম্যানিজিং কমিটির নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিভিন্ন জনের মতামত গ্রহন শেষে স্বাক্ষর দেয়া কয়েকজন ব্যক্তি জানান, তারা নিজেরাও জানেননা খন্দকার মুহিবুর রহমান স্কুলের ২ শিক্ষককে ফাঁসাতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। স্বাক্ষর দেয়া আরেক ব্যক্তি জানান, তার কাছ থেকে মসজিদের অনুদানের কথা বলে খন্দকার মুহিবুর রহমান স্যারের নির্দেশে একই এলাকার খন্দকার জালাল নামে এক ব্যক্তি সাদা কাগজে স্বাক্ষর আনেন।
ঘৃন্যতম মনোভাব নিয়ে খন্দকার মুহিবুর রহমানের এহেন কর্মকান্ডের বিষয়বস্তু বারবার উর্ধতন কর্তপক্ষকে অবগত করেও কোন সুরাহা করতে পারেননি প্রধান শিক্ষক কুহিনূর বেগম। প্রভাব দেখিয়ে কৌশলে সবকিছু ম্যানেজ করে নেন শিক্ষক মুহিবুর।
এতে করে চলতি সময়ের এসব ঘটনায় সমাপনী পরিক্ষা ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান নিয়ে দেখা দিয়েছে সঙ্কা!
সন্তানের পড়ালেখায় এর প্রভাব পড়বে ভেবে চিন্তিত অভিভাবকগন। কয়েকজন অভিভাবক এধরণের নোংরামির পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে জেলা ও উপজেলার ২ শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এই দাবি রাখেন।
সময়মত ক্লাস শুরু হয় কিনা, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি বা দেড়িতে আসার বিষয় ও পাঠদানের বিষয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানায়, সকল শিক্ষক আন্তরিকতা নিয়ে তাদের পাঠদান করান। এদিকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে নিয়মিত ক্লাসে না আসা ও পাঠদান ব্যহত হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে শুনে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন অভিভাবকেরা। তারা বলেন, শিক্ষকদের অবহেলা থাকলে বছর শেষে নিশ্চয় ভালো রেজাল্ট আসতোনা!
তবে যারা স্কুলের সুনাম ক্ষুন্ন করতে কিংবা শিক্ষকদের হয়রানি করতে এই অপচেষ্টা চালাচ্ছেন এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তারা।
লোক মারফত সাদা কাগজে বিভিন্নজনের স্বাক্ষর আনার বিষয় নিয়ে সাংবাদিকেরা খন্দকার মুহিবুর রহমানকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি একই এলাকার খন্দকার জালাল নামেও কাউকে চিনেন না বলে জানান।
অবশ্য খন্দকার জালালের ভাষ্যমতে মুহিবুর রহমান তাকে স্কুলের মিটিংয়ের কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য বলেছিলেন। তিনি আরো দাবি করেন, স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। এমনি মিটিংয়ের দিন তাকে আসতেও বারন করেছেন মুহিবুর রহমান।
এসব ঘটনায় স্কুলটির ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান খন্দকার মনির হোসেন। তিনি বলেন, স্কুলটি ইউনিয়নের অন্যান্য স্কুলের চাইতে শিক্ষার মানের দিক দিয়ে এগিয়ে। শিক্ষকদের প্রতিহাংসায় শিক্ষার মান ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রছুল্লাবাদ দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খন্দকার মুহিবুর রহমান ও স্ত্রী রোমানা বেগম দুজনেই শিক্ষকতা করতেন। ২০১৯ সালের ৬ আগষ্ট প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ অমান্য করে স্বামী স্ত্রী যুগল প্রশ্নপত্র ফাঁস করায় বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আকারে জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক কুহিনূর বেগম। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে সত্যতা পাওয়ায় সেসময়ের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন এই দম্পতিকে ডেপুটেশনের নির্দেশনা দেন, পরবর্তীতে রোমানা বেগমকে একই ইউনিয়নের জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যুক্ত করা হয়। খন্দকার মুহিবুর রহমানকে শ্যামগ্রাম দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তি প্রদান করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রধান শিক্ষকের কঠোর ভূমিকায় ডেপুটেশনের কারনে স্ত্রীর অপূর্ণতা শিক্ষক মুহিবুরকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে! যেকারণে রাগ ঝাড়তে শিক্ষকদেরকে হয়রানি করে মানসিক চাপে রাখছেন।
এইদিকে এইসব কর্মকান্ডের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চেয়েছেন প্রধান শিক্ষক কুহিনূর বেগম।
স্কুল ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি খন্দকার মকুল জানান, আমরা জেলা ও উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সফল ভাবে মিটিং সম্পন্ন করি, আসলে অভিযোগের কোন ভিত্তি নেয়। যারা এসব করছে স্কুলের সুনাম নষ্ট করতে এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
অভিভাবকগন ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিহিংসার কারনে লেখাপড়ার মানের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা স্কুলটির সুনাম যেনো নষ্ট না হয় সেদিকেও সবার খেয়াল রাখা উচিত।