উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে আছে।
বন্যার সব চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলা গড্ডিমারী ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে।
পানি বন্দি পরিবার গুলোর জন্য জেলায় ৪৫০ টন চাল ও ৭ লক্ষ টাকা ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ হলেও এখনো তা বিতরণ করা হয়নি। এতে পানিবন্দি লোকজনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ২০ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের এখনো ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৬টায় ডালিয়া তিস্তাা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুরে পানিপ্রবাহ কিছুটা কমলেও বিকেলে আবারও বৃদ্ধি পায়। শুক্রবার সকালে ৪০ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যায় ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তিস্তা পানিতে পাটগ্রামে অবস্থিত বহুল আলোচিত বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার ১০ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলাসহ অনেক ফসলি জমি তিস্তাার পানিতে ডুবে গেছে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফ উদ দৌলা বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢলে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে। এ পয়েন্টে তিস্তার পানি টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে উজানের ঢলের পানি প্রতি মিনিটে সাড়ে চার লাখ কিউসেক করে ভাটির দিকে আসছে।
এদিকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ৫ জেলার ধরলা ও সানিয়াজান নদীও তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে সদ্য রোপণ করা আমন ধানের খেত।