কোন স্থান অথবা সুন্দরকিছুকে যথাযথ উপস্থস্পনার মাধ্যমে যে ব্যবসা করা সম্ভব তার অপর নাম পর্যটন। পর্যটনকে সঠিকভাবে উপস্থাপনার জন্য যতগুলো সেক্টরের সমন্বয়ের প্রয়োজন তা নিয়েই পর্যটন শিল্প। পরিবহন ও যোগাযোগ, আবাসন, খাদ্য ও পানীয় এবং বিনোদন ও আকষনসমূহকে কেন্দ্র করে এই শিল্পের অবস্থান। বিশ্ব পর্যটন এখন অনেকখানি এগিয়ে আর এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে অনেকটা ভুমিকা রেখেছে এভিয়েশন শিল্প। এয়ারলাইন্সের সফলভাবে বাণিজ্যিক উড্ডয়ন ভ্রমণ ব্যবস্থায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা।বিশ্ব চলে এসেছে আমাদের হাতের মুঠোয়।
ট্রাভেল ও ট্যুরিজম বতমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত দুটি শব্দ।ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।এক দেশ থেকে অন্য দেশে যোগাযোগের সব থেকে সহজ মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আকাশ পথ।আকাশ প্থে ভ্রমণকারীরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে পুরা পৃথিবী।দিন দিন বাণিজ্যিক ভাবে এভিয়েশন সেক্টরের সম্ভাবনা বাড়ছে।সেই সাথে প্রয়োজন বাড়ছে দক্ষ জনশক্তির।সারা পৃথিবীতে ১২০ টি দেশের ২৯০ টি এয়ারলাইন্স নিয়ে গঠিত ব্যবসায়িক সংগঠন আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েসন (IATA) এর মাধ্যমে এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ডেস্টিনেশনে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এসোসিয়েসন অর্গানাইজেশন (ICAO) তথ্য মতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দশ লাখ ফ্লাইট পরিচালিত হয় পৃথিবীর বিভিন্ন ডেস্টিনেশনে ।বিশ্ব –মানচিত্রে এয়ারলাইন্স পরিবহন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লোভনীয় ডেস্টিনেশন হিসেবে এগিয়ে আছে অনেক দেশের তুলনায়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৪ টির বেশি এয়ারলাইন্স যাত্রী ও কার্গো পরিবহন সেবা পরিচালনা করছে। এছাড়াও প্রায় ১২ টির বেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কেবের কাছে আবেদন করেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, ইথিহাদ এয়ারওয়েজ, সিংগাপুর এয়ারওয়েজ, সৌদি এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স, এয়ার এরাবিয়া সহ আরো অনেক সুনামধন্য এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর থেকে দেশে বিদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো কয়েকটি বিমানবন্দর ফ্লাইট পরিচালনার উপযোগী করে তোলা হবে। ইতিমধ্যেই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী অভ্যন্তরীণ সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর ব্যবহারোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এবছরের শেষ নাগাদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন নাম্বার টারমিনাল চালু করার কথা রয়েছে। এছাড়াও খান জাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যতম জিডিএস কোম্পানি সেবার ট্রাভেল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড এর কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার ও সিইও,মোহাম্মাদ সাইফুল হক জানান আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসা আরো দুই বা তিনগুন বাড়তে পারে।
বাংলাদেশের সবথেকে বড় ট্রাভেল এজেন্সির বাণিজ্যিক সংগঠন এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (ATAB) এই খাতকে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনা করছেন।আটাবের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টরে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। এছাড়াও আটাবের আওতাভূক্ত ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে অনেক দক্ষ লোকবল প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সরকার এভিয়েশন সেক্টরে গতি আনায়নে দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।ইতিমধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পেশাভিক্তিক বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।এই সব প্রশিক্ষ্ণের আওতায় যেসব ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহন করেছেন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ট্যুরিজম ও এভিয়েশনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ লাভের সু্যোগ পাবেন।ট্যুরিজম মানেজম্যান্ট,এভিয়েশন মানেজম্যান্ট,টিকিটিং এ্যান্ড রিজারভেশন,হসপিটালিটি মানেজম্যান্ট সহ আরো কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের বেকার সংখ্যা কমাতে ট্যুরিজম ও এভিয়েশন শিল্প সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দেশীয় এয়ারলাইন্স এর পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্স, জিএসএ, পিএসএ, এয়ারপোর্ট, এইএটিএ ট্রাভেল এজিন্সিগুলোতে কাজ করবে বাংলাদেশের কয়েক লাখ যুবক।বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরি করণে এই শিল্প কাজ করবে হাতিয়ার হিসেবে।
মোঃ সাইফুল্লার রাব্বী, এসিস্টেন্ট ম্যানেজার, কাস্টমার সাপোর্ট এন্ড ট্রেনিং ডিপার্টমেন্ট, সেবার বাংলাদেশ (Sabre Travel Network Bangladesh Limited)