ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় পটুয়াখালী সেতুর টোল প্লাজার পেছনে রাস্তার পাশে খোলা যায়গায় শহরের বর্জ্য অপসারনে বাধ্য হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে পরিবেশ দুষন হওয়ার জন্য পৌরবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ডাম্পিং স্টেশনের জন্য নির্ধারিত স্থানটি প্রস্তুত করে সেখানে বর্জ্য অপসারন করা হবে বলে জানান পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি আরো বলেন, পরিবেশবান্ধব একটি ডাম্পিং জোন নির্মানের জন্য সিটিসিআরপি নামের একটি প্রকল্পের আওতায় ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শহরের অদুরে জৈনকাঠি ইউনিয়নে ইতিমধ্যে সাত একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে যেখানে ডাম্পিং জোন নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। লেহালিয়া সেতুর কাজ শেষ হলেই শহরের বর্জ্য আমরা সেখানে অপসারন করতে পারবো।
পটুয়াখালী পৌরসভার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শাখার ইন্সপেক্টর মোঃ ফিরোজ সিকদার সময়ের আলোকে বলেন, ১৩০ বছরের পুরানো পৌর শহরে ময়লা অপসারনের জন্য নির্ধারিত কোন স্থান নেই। তাই নদীর তীর সহ বিভিন্ন স্থানে শহরের ময়লা ফেলা হত। বর্তমান মেয়রের নির্দেশনায় শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে আমরা সহস্ত্রাধীক কর্মী বাহিনী নিরলস কাজ করছি। আগে শহরে ২/৩ টন ময়লা উৎপাদন হত বর্তমানে গৃহস্থলীর বর্জ্যসহ প্রতিদিন প্রায় ১৫ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। যা অপসারন ও ধ্বংস করা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। পটুয়াখালী পৌর শহর অনেক ঘনবসতিপূর্ণ। তবে বর্তমানে যে স্থানে বর্জ্য অপসারন করা হচ্ছে সেটি অপেক্ষাকৃত ফাঁকা এলাকা। শহরের প্রবেশ পথ হলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই এই স্থানটি বর্জ্য অপসারনের জন্য সাময়িক ভাবে নির্ধারন করা হয়েছে। ডাম্পিং স্টেশন ও লোহালিয়া সেতু নির্মান শেষ হলে শহরবাসীর এ কষ্ট দূর হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পটুয়াখালী-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে পটুয়াখালী সেতুর পূর্ব পাশে টোলপ্লাজার পেছনে বিকল্প সড়কের পাশে এই ময়লার ভাগাড়ে জ্বলছে নিভু নিভু আগুন। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ওই এলাকা, বেড়েছে মশা-মাছির উপদ্রব। সড়কটিতে চলাচলকারী সবাই নাক চেপে চলাচল করছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, আগে পটুয়াখালী শহরের ময়লা আবর্জনা বিসিক এলাকায় নদী তীরে ফেলা হতো। নদী কমিশন নদীতে বর্জ্য ফেলতে নিষেধ করায় সব ময়লা এখন ব্রিজের পাশে ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
ওই এলাকার বাসিন্দা আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের অনেক সড়ক প্রশস্ত ও চার লেনের হয়েছে। দুটি লেক, ওয়াকওয়ে, সাইকেললেন ও দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। তবে ময়লার ভাগাড়টি সব উন্নয়নকে ফিকে করে দিচ্ছে।’
অটো রিকশা চালক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই রাস্তায় দুর্গন্ধের লইগ্যা চলন যায়না। যাত্রী লইয়া অন্য রাস্তা ঘুইর্যা যাইতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদিকুর রহমান বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতে হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা না ফেলার জন্য পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে হয়তো বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে।’
পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আগে পয়ঃ নিস্কাশনের ব্যাবস্থা করে যে কোন নির্মান করতে হয়। এমনটি একটি শহর প্রতিষ্ঠার আগে তার আবর্জনা কোথায় ফেলা হবে তা নির্ধারন করা উচিৎ। এতদিনে এ কথা কেউ চিন্তা করেনি। তাই অধিকাংশ পৌরসভাগুলোর বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার চিত্র প্রায় একই রকম। সবাই পৌর এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখছে। অনেক পৌরসভা আবার এসব বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে ময়লা আবর্জনা কমানোর চেষ্টা করছে। পুরো দেশে মাত্র গুটি কয়েক পৌরসভায় ডাম্পিং স্টেশন আছে। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি।
লোহালিয়া ইউনিয়নে সাত একর জমি অধিগ্রহণ করেছি। ডিজাইন ও ড্রয়িং সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাম্পিং স্টেশন নির্মানের কাজ চলমান। লোহালিয়া নদীতে নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ শেষ হলেই আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব এ ডাম্পিং ষ্টেশন ব্যাবহার শুরু করতে পারব। বাউফল এবং গলাচিপা পৌরসভাও তাদের ময়লা আবর্জনা এখানে ফেলতে পারবে। আমরা চেষ্টা করছি এই ময়লা আবর্জনাকে সম্পদে রুপ দেয়ার।