ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে প্রশাসনের টেকসই উদ্যোগ নেই
  • মামুনুর রশিদ, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
  • ২০২৩-০১-২৩ ০৩:৫৬:৩৯

কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় দেশের সকল অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে হাইকোর্ট ও সরকারের কঠোর সিন্ধান্ত/নির্দেশনা থাকলেও দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা এলাকায় অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে  পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের টেকসই কোন উদ্যোগ নেই। বরং সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনেই দুর্দন্ড প্রতাপে মুনাফালোভী স্বার্থান্বেষী মহল কৃষি জমি ও পরিবেশ নষ্ট করে বেআইনীভাবে জনবসতির মাঝে ভাটা স্থাপন করেই চলেছেন। ফসলী জমি  ও  পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির কোন তোয়াক্কাই করছেননা অবৈধ ইটভাটা মালিকগন। অর্থ ও স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা ইটভাটাসমুহের ব্রিক ফিল্ড তৈরিতে বিপুল পরিমানের ফসলি জমি নষ্ট করছে।

ভাটা মালিকগন বর্তমানে নীলকর জমিদারদের মত কৃষকদেরকে উৎপাদিত ফসলের চেয়ে অধিক লাভের প্রলোভন দিয়ে তাদের ফসলী জমির মাটি  ভাটার ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইটভাটা সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভাটার ব্রিক ফিল্ড তৈরি ও মাটি আহরনের জন্য প্রতি ভাটা মালিক ২০-৩০ বিঘা ফসলী জমি ব্যবহার করছে।

অবৈধ ভাটা সমুহে সরেজমিনে গেলে উপজেলার  মন্মথপুর ইউনিয়নের জামতলি  গ্রাম  ও সরদারপাড়া গ্রামের  মাঝে  স্থাপিত  মা ব্রিক্স (এম,বি), রামপুর ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রাম সংলগ্ন এম,আর,বি-২ ব্রিক্স, পার্বতীপুর বদরগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন এম,আর,বি ব্রিক্স, হামিদপুর ইউনিয়নের ফাইভ স্টার ব্রিক্স  ও ১নং বেলাইচন্ডি  ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ গ্রামের ডিআর ব্রিক্স ইটভাটায়  দেখা যায়, সংশ্লিষ্টরা ব্রিক ফিল্ড হিসেবে ব্যবহ্যত জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছে।  এসব  ভাটাসমুহের অবস্থান গ্রাম, জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্টানের ৫০/১০০ গজের মধ্যে যা পরিবেশ আইনের চরম লঙ্ঘন। 

এসব ভাটার  ধোয়া ও  ছাইয়ের কারনে  বিদ্যালয়সমুহের ছাত্র ছাত্রীসহ গ্রামের বৃদ্ধ ও শিশুরা সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ চোখ জ্বালাপোড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।  ভাটার পার্শ্ববর্তি  এলাকার  বিভিন্ন  গাছের  ফলনও  কমে  গেছে।
ভাটাসমুহ পর্যবেক্ষনকালে দেখা যায়, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে ইট তৈরির কাজ করানো হচ্ছে। তাদের সরলতার সুযোগে তাদেরকে কম মজুরি দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে ভাটাসমুহের মালিকগনের বিরুদ্ধে। প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকদেরকেরও কম মজুরি দেয়া হয় বলে একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেন।  এছাড়াও  ইটের সাইজও  করা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত ছোট।

উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের ধুলাউদাল হাটের পল্লী চিকিৎসক আজিজুর রহমান জানায়, ধুলাউূাল হাট এর পূ্র্ব দক্ষিন অংশে পলাশবাড়ী  এলাকায়  রয়েছে  ৮টি ইটভাটা।  সবগুলোরই অবস্থান শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের  ২০০ থেকে  ৫০০ গজের মধ্যে। এসব ভাটা থেকে দুর্গত ধোয়া, ছাই ও তাপের কারনে এখানকার পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। ভাটার কার্যক্রম চালু হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, প্রচন্ড শীতেও ভাটা সংলগ্ন গ্রামসমুহের পরিবেশ থাকে অত্যম্ত গরম। দিনের বেলায় চারিদিকে প্রচন্ড তাপ প্রবাহিত হয়। গাছ পালার ফলন অনেকাংশেই কমে গেছে। ধানের ফলনও হয় কম। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়ে এসব ভাটা  মালিকদেরকে  লাখ লাখ টাকা জরিমানা করলেও   ভাটা উচ্ছেদে কার্যকর কোন ব্যবস্থাই নেননি।  পরিবেশ অধিপ্তরের ভূমিকা বরাবরের মতই রহস্যজনক।

পার্বতীপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর এর প্রধান কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান  জানিয়েছেন, এ উপজেলায়  মোট ইটভাটা রয়েছে ৫১টি। যার অধিকাংশই অনুৃমোদনহীন। গত কয়েক বছর পূর্বের হিসেব মতে, এসব ভাটায় ব্যবহ্যত কৃষি জমির পরিমান ২৯৪  একর। কিন্তু বেসরকারী  হিসেব মতে, সাম্প্রতিক  সময়ে  ভাটাসমুহে কৃষি জমি ব্যবহারের পরিমান দ্বিগুন বেড়ে দাড়িয়েছে অন্তত ৫শ(৫০০) একরেরও অধিক। স্থানীয়দের ধারনা ও হিসেব মতে জানা যায়, ৫১টি ভাটায় ব্যবহ্যত হচ্ছে অন্তত এক হাজার (১০০০) বিঘা ফসলী জমি। 

কৃষি জমির ক্ষতি বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  ও  হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও এসব নিয়ন্ত্রনে  প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী ও কার্যকর আইনী ব্যবস্থা।   কৃষি কর্মকর্তার হিসেব মতে, উপজেলার সকল ইটভাটায় যে পরিমানের জমি ব্যবহার হচ্ছে তাতে আনুমানিক  ৩৫/৪০  হাজার মন  ধান অনুৎপাদিত থাকছে।  বেসরকারী হিসেবে  এর পরিমান অন্তত ৮০ হাজার মন। 

কৃষি  কর্মকর্তা  রাকিবুজ্জামান আরও  জানান, যেসব জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার হয় সেসব জমিতে অন্তত ৮/১০ বছর কোন ফসলই ফলানো সম্ভব হবেনা। ফলে যেসব কৃষক নিজ জমি ভাটা মালিকদের নিকট ভাড়া দিয়েছেন কোন এক সময় জমি ফেরৎ পেলেও ফসল ফলাতে না পেরে তারা দীর্ঘ মেয়াদী উৎপাদন সংকটে পড়বেন।

এদিকে  অভিযোগ  সমুহের বিষয়ে  অনুৃমোদন ছাড়া ইটভাটা  পরিচালনাকারী এম,আরবি-২ ব্রিক্স ইটভাটার মালিক হায়দার আলীর  ভাষ্য  জানতে  চাওয়া হলে  অভিযোগ  অস্বীকার করে  বলেন, অনুমোদন  না  থাকলেও  আমরা  পুরোপুরি  অবৈধ নই।  কারন, সরকারী  ভ্যাট অফিস  রিতিমতই চালান রশিদ দিয়ে আমার কাছ থেকে বছরে ৪/৫ লাখ টাকা আদায় করে থাকেন। এছাড়াও  বিশেষ  মহল,  মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় দেয়া হয়  অর্থ  সহায়তা।  ভাটায় শ্রমের ভিত্তিতে চলে অসংখ্য মানুষের জীবিকা।  অন্যান্য  ইটভাটার মালিকগনও  অনুরূপ ভাষ্য দেন।

অবৈধ ইটভাটা বন্ধ বা উচ্ছেদ করতে প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার ব্যাপারে  মতামত জানতে চাওয়া হলে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মোহাম্মদ ইসমাইল  জানান, অবৈধ ভাটাসমুহ অনেক পূর্ব থেকে চলমান রয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের  অভিযান  অব্যাহত রয়েছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। অভিযানের বাইরে  কেউ থাকবেনা।

উপজেলা প্রশাসন  ভ্রাম্যমান আদালতের আইনের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই জরিমানা প্রদান করে থাকে।  উচ্ছেদের মত কর্মকান্ড পরিচালনার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। 

মাউশির প্রদর্শক ও গবেষণা সহকারি পদের ফল প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন
পঞ্চগড়ে ভারী বর্ষণে ভেঙে গেছে সড়ক, বন্ধ যান চলাচল
পলাশে ঘণ ঘন লোডশেডিং, ৪ হাজার মুরগীর মৃত্যু