শ্রাবনের রোদে পুড়ছে আমনের চারা !
- আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট
-
২০২২-০৭-১৮ ০৬:৫৭:০৪
- Print
শ্রাবন মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। ভরা বর্ষাকালের প্রখর রোদে মরে যাচ্ছে আমনের চারা। সেচ দিয়ে চাষাবাদে উৎপাদন খরচ নিয়ে শ্বঙ্কায় লালমনিরহাটের কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, প্রতি বছর আষাঢ় শ্রাবনের বৃষ্টির পানিতে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপন ও পরিচর্যা করে বৃষ্টির পানিতেই আমন ধান ঘরে তোলেন। ফলে সেচ খরচ না থাকায় উৎপাদন খরচ কম হয়। বোরোর তুলনায় আমনে ধানের উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কম। শুধু বৃষ্টির কারনে সেচ সুবিধা থাকায় উৎপাদন কম হলেও আমন চাষেও কৃষকরা মুনাফা অর্জন করেন। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে চাষাবাদ করে কম ফলনের আমনে ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা উৎপাদন খরচ নিয়ে শুরুকেই শ্বঙ্কায় রয়েছেন।
আষাঢ় মাসে আমনের চারা লাগানো শুরু করার কথা থাকলেও এ বছর চৈত্রি বৈশাখ ও জৈষ্ঠি মাসের ভাড়ি বৃষ্টির কারনে দীর্ঘ অপেক্ষা করেন চাষিরা। এরপর এক বারেই বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় মাঠ শুকিয়ে চৌচির হয়েছে। আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবন মাস শুরু হলেও কাংখিত বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে আমন লাগাতেও পারছেন না কৃষকরা। কেউ কেউ শ্যালো মেশিনে সেচ ব্যবস্থা করে আমনের চারা লাগালেও শ্রাবনের প্রখর রোদে পানির অভাবে সেই চারা মরতে বসেছে। সেচ খরচ বাড়লে আমন চাষে ব্যাপক লোকসানের শ্বঙ্কা কৃষকদের। তাই এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৯০/৯৫ ভাগ আমনের জমি ফাঁকা রয়েছে।
আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকার কৃষক সোলায়মান আলী বলেন, আমনের ফলন কম হলেও বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ হতো বলে খরচও কম ছিল। তখন লাভের মুখ দেখা যাইত। এবার বৃষ্টি নেই ৮৫ টাকা লিটার দামে ডিজেল ক্রয় করে শ্যালোমেশিনে পানিতে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেটাই বাড়ছে। বাড়তি উৎপাদন খরচে আমন চাষে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশংকাই বেশি। ক্ষতি হলেও কৃষক মানুষ চাষাবাদ না করে জমি ফেলে রাখলে পেটের ভাত আসবে না। তবে সরকারী প্রনোদনা বা সরকারী ভাবে সেচ সুবিধার দাবি জানান তিনি।
ভুল্লারহাটের কৃষক তমিজ উদ্দিন (৬৫) বলেন, জন্মে এই প্রথম দেখলাম চৈত্রি মাসের বন্যা আর শ্রাবন মাসের প্রখর রোদ। পানি কিনে বোরো চাষাবাদ করা যায়। কিন্তু পানি ক্রয় করে আমন চাষে ক্ষতির আশংকাই বেশি। তাই এখনও আমনের জমি ফাঁকা রয়েছে। বৃষ্টি হলে চারা লাগাব। না হলে অনাবাদি রাখব। উপায় নেই। লোকসান হলে তো আগামীতে চাষাবাদের মুলধনই থাকবে না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৫টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৭হাজার হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপন হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় আমনের চারা রোপনে বিলম্ব হচ্ছে এ জেলায়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, আমনে সেচ কম লাগে। তাই শ্যালো মেশিন বা যে কোন উপায়ে সেচ নিয়ে আমন চারা লাগাতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এখন সেচ দিয়ে চারা রোপন করলে কিছুদিন পরে যে বৃষ্টি হবে সেই পানি আমন ক্ষেতের জন্য বড় আর্শিবাদ হয়ে দাড়াবে। তখন ফলনও অনেক বাড়বে। সুতরাং দুঃচিন্তার কিছু নেই। যেভাবেই হোক সেচ সুবিধা নিয়ে আমনের চারা রোপনে কৃষকদের আহবান জানান তিনি।