ঢাকা শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
শিবপুরে লটকন চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা
  • এ এইচ আ‌বিল, শিবপুর, নরসিংদী
  • ২০২২-০৬-২০ ০৭:৫৮:৩৩
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পাহাড়ী লাল মা‌টির এলাকায় লটকন চাষ ক‌রে স্বাবলম্বী হ‌চ্ছেন কৃষকরা। লটকন বাগানের গাছে গাছে থোঁকায় থোঁকায় এখন হলুদ বর্ণের লটকন শোভা পাচ্ছে। আর কয়েকদিন পরই বিক্রি শুরু হবে এসব লটকন। এতে বাগান চাষীদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। লটকন চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় এ উপজেলায় চাষীদের মধ্যে লটকন চাষাবাদে উৎসাহের পাশাপাশি প্রতি বছরই বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। লটকন চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক কৃষক। তবে এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গত বছরের তুলনায় ফলন কম হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। এখানকার শত শত মন লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ এবং বিদেশেও রপ্তানী হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের তিনটি ইউনিয়নে লটকন চাষ করা হয়েছে। জয়নগর, বাঘাব ও যোশর ইউনিয়নসহ আরো কয়েকটি গ্রামে প্রায় ১৪৫০ হেক্টর জমিতে ছোট বড় মিলে প্রায় ৩ হাজার লটকন বাগান রয়েছে। সোমবার (২০ জুন) সরেজমিনে গিয়ে যোশর ইউনিয়নের চৈতন্যা, জয়নগর ইউনিয়নের কামরাব, সুজাতপুর, আজকিতলা গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১০/১৫ বছর আগেও লটকনের তেমন চাহিদা ছিল না। দামও ছিল কম। সে জন্য কেউ লটকনের স্বতন্ত্র বাগান করার চিন্তা করত না। বর্তমানে টক মিষ্টি সুস্বাধু এ ফলের চাহিদা ও মূল্য দুটিই বেড়েছে। এমনকি অন্যান্য ফল চাষের তুলনায় লটকনের ফলন বেশী হয় বলে চাষীরাও অধিক লাভবান হচ্ছেন। লটকল গাছের কান্ডে ফলে। গাছের পুষ্ঠির সুষমতা ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে গাছের গোড়া থেকে প্রধান কান্ডগুলোতে ঝোপায় ঝোপায় এত বেশী ফল আসে যে, একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫ থেকে ১৫ মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তখন গাছের কান্ড বা ডাল দেখা যায় না। কোয়ালিটি ভেদে লটকন মন প্রতি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দরে পাইকারী বিক্রি করা হয়ে থাকে। পাইকাররা নিজেরাই বাগান থেকে লটকন ক্রয় করে থাকেন। এ উপজেলার পাহাড়ীয়া এলাকায় উঁচু লালচে অম্লীয় মাটি এবং ছায়ামুক্ত আবহাওয়া থাকায় লটকনের ফলন ভাল হয়ে থাকে। ফলে লটকন চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছরই চাষীর সংখ্যা বৃদ্বি পাচ্ছে। কৃষকদের মাঝে লটকন আকর্ষণীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে দেখা দিয়েছে। উপজেলার যোশর ইউনিয়নের চৈতন্যা গ্রামের লটকন চাষী ইমাম উদ্দিন সরকার দৈ‌নিক বাংলা‌দে‌শের খবর‌কে বলেন, আমার ৩০০ শতাংশ জমিতে লটকন বাগান রয়েছে। গত বছর ভাল ফলন হয়েছিল যার ফলে ১৭ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে। এখনো লটকন বিক্রি শুরু করিনি। যেহেতু ফলন কম, আশা করি দাম বেশী পাব। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক বলেন, এখানকার লটকন দেশের বাহিরেও রপ্তানি হয়ে থাকে। গত বছর ২ থেকে ৩ মেট্রিক টর লটকন দেশের বাহিরে রপ্তানি হয়েছে। এবার আরো বেশী চাহিদা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে এবার দাম বেশী হবে। আমরা কৃষি বিভাগ লটকন চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উপকরণ দিয়ে পাশে রয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফারহানা আহমেদ দৈ‌নিক বাংলা‌দে‌শের খবর‌কে বলেন, লটকন একটি সুস্বাধু ও পুষ্টিগুণ ভিটামিনসমৃদ্ধ একটি ফল। এই ফলে রয়েছে কিলোক্যালোরি, আমিষ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, লৌহ, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্রোমিয়ামসহ নানা উপকারী সব উপাদান। যা আমাদের শরীরে নানাভাবে উপকার করে। লটকনে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম, যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থতায় কাজে লাগে। এসব উপাদান রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ত্বক, দাঁত, মাড়ি ও হাড় সুস্থ রাখে। এ ফলে ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বেশ উপকারী। এটি রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এফল মানসিক চাপ, বমি বমি ভাব দূর ও তৃষ্ণা নিবারণ করে থাকে। কারণ এতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিনিয়া জিন্নাত দৈ‌নিক বাংলা‌দে‌শের খবর‌কে বলেন, লটকন উৎপাদনে শিবপুরের মাটি খুবই উপযোগী। লটকন চাষে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। কৃষকরা লটকন চাষ করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। উপজেলায় লটকনের আবাদ আরো বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য সম্মত ফলন উৎপাদনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ কৃষকেদের মাঝে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
Utilitarianism (পালংবাদ) মূলত কী?
দ্রুত নির্বাচনের জন্য এত মানুষ শহীদ হয়নি: উপদেষ্টা আসিফ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’