ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
যে গ্রামের নারী-পুরুষ নির্মাণ করলো সড়ক
  • শহীদুল্লাহ্ কায়সার, কক্সবাজার
  • ২০২২-০১-১৫ ০২:১১:৫১

হরিণমারা, একটি গ্রামের নাম। দেশের পর্যটন নগর খ্যাত কক্সবাজার জেলা। সেই জেলার একটি উপজেলা উখিয়া। ‘হরিণমারা’ উখিয়া উপজেলার অন্তর্গত রাজাপালং ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটির পাশেই রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প। বিশ্বের মানুষের কাছে যেটি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প নামেই সর্বাধিক প্রচারিত।
পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে এই গ্রাম। এক সময় এই গ্রামে অবাধে বিচরণ করতো মায়াবি হরিণ। শিকারির দল হরিণ শিকার করতেই আসতেন গ্রামে। নিয়মিত হরিণ মারা অর্থাৎ শিকার করা হতো বলেই এই গ্রামের নাম হয়ে উঠে হরিণ মারা। এমন তথ্যই দিলেন গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা। এখনো এই গ্রামে মাঝে মাঝে হরিণের দেখা মেলে বলেও দাবি করলেন তিনি।
 
হরিণ দেখা যাক আর না যাক। এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হরিণের মায়াবি চোখের মতো। পাহাড়ের কোল ঘেষে গড়ে উঠা এই গ্রাম গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ। দুপুর বেলাতেও শোনা যায় পাখির  কিচিরমিচির গুঞ্জন। অন্য আট দশটা গ্রামের মতো নয় এই গ্রাম। যান্ত্রিকতার এই যুগে রয়ে গেছে আগের মতোই পরিবেশ। গ্রামে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে সুনশান নিরবতা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি খাল। প্রকৃতি প্রেমী যে কেউ এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে বাধ্য।

গ্রামে যাতায়াতের জন্য রয়েছে একটি মাত্র সড়ক। প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির যেন কোন অভিভাবক ছিলো না। দীর্ঘ সময় ধরে সড়কটির অবস্থা ছিলো বেহাল। সংস্কারের অভাবেই এমন অবস্থার সৃষ্টি। কেউই সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব নেয়নি। ফলে গ্রামের মানুষকে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বিশেষ করে নারীদের সন্তান প্রসবকালীন এবং গ্রামের বাসিন্দা কেউ আহত হলে অবস্থা হয়ে পড়তো কাহিল। ছোট্ট একটি অ্যাম্বুলেন্সও গ্রামে প্রবেশ করতে পারতো না। নির্বাচনকালে ভোট প্রত্যাশীরা গ্রামে আসতেন। নির্বাচন পরবর্তী যাদের আর দেখা মিলতো না। এতে করে কাউকে কিছু বলার মতো মানুষও খুঁজে পেতেন না গ্রামবাসী। মনের দুঃখ চাপা থাকতো মনে।

সেই অবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। শুধু পুরুষ নয় এই কাজে যুক্ত হয়েছেন নারীরাও। যেখানে নারী ছিলো শুধুমাত্র গৃহস্থালী কাজে ব্যস্ত। সেখানেই নারী হয়ে উঠছে মজুর। যা তাকে গড়ে তুলছে স্বাবলম্বী। এর নেপথ্যে কাজ করেছে তাঁদের ব্যবহারের একমাত্র সড়কটি। তাঁদের কায়িক শ্রমে আবার হরিণমারার সড়কটি আবারো প্রাণ ফিরে পেলো। এই সড়কটি দেখলে এখন আর বোঝার উপায় নেই, এর জন্য দীর্ঘসময় ধরে কষ্ট পেয়েছে গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষ।
 
এই কাজে গ্রামের মানুষের পাশে পাশে দাঁড়িয়েছে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা। ইউএসএআইডি’র আর্থিক সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ভিশন’র ‘কাজের বিনিময়ে অর্থ’ প্রকল্পের আওতায় করা হয়েছে সড়ক সংস্কার। এতে করে গ্রামের মানুষ যেমন নিজেদের সড়ক সংস্কারে নিজেরাই যুক্ত হতে পেরেছেন। তেমনি আর্থিকভাবেও কিছুটা লাভবান হয়েছেন।

সংস্কার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন প্রকৌশলী বলেন, দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণে ১৩৭ জন শ্রমিক দুই মাস ধরে কাজ করেছেন।  প্রত্যেককে দৈনিক ৬ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৪দিন কাজ করতে হতো। বিনিময়ে প্রত্যেককে দেয়া হতো দৈনিক ৩৫০ টাকা। এই কাজে যুক্ত হয়ে অনেক অদক্ষ শ্রমিক বর্তমান দক্ষ শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন। বিশেষ করে নারীরা। এই গ্রামের নারীরা বুঝতেই পারেনি। তারাও একটি উপার্জন করে পরিবারকে সহায়তা করতে পারবেন। বর্তমান সেটিই বাস্তব। নারীরা কাজ করছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন পুরুষের সমান মজুরি। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি উপার্জন করতে সক্ষম হবেন হরিণমারা গ্রামের নারীরা।   

গ্রামের বাসিন্দা ছৈয়দ নুর বলেন, এই গ্রামে আগে একটি ইটের সড়ক ছিলো। দীর্ঘদিন সেই সড়কের সংস্কার করা হয়নি। ফলে ইটগুলোর অস্তিত্বই প্রায় বিলীন হয়ে পড়ে। পুরো সড়ক জুড়েই দেখা দেয় বড়ো, বড়ো গর্ত। যা গ্রামবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়ায়। একটি এনজিও সংস্থা সড়কটি সংস্কার করেছে। ফলে গ্রামের লোকজন সহজেই বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারেন। সংস্কার কাজে শ্রম দিয়ে স্থানীয়রাও কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পায়। এই সড়কের মতো অন্যান্য সড়কগুলো সংস্কারের দায়িত্বও যদি এনজিও পায়। তাহলে তা দ্রুত মেরামত করা সম্ভব হবে। 

ঢাকা থেকে আসা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা শিহাবুর রহমান বলেন, এই গ্রামের পরিবেশ খুবই চমৎকার। বসবাসের জন্য আদর্শ স্থান বলা যেতে পারে। এখানে ভিলেজ ট্যুরিজম খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করবে। বাইরে থেকে পর্যটকরা এসে গ্রামে থাকবেন। উপভোগ করতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিনিময়ে তাঁরা যেখানে থাকবেন, সেই বাড়ির বাসিন্দারা কিছু টাকা পাবেন। এতে করে আমাদের ভিলেজ ট্যুরিজম সমৃদ্ধ হবে।

 ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড
নীলফামারী জেলা দোকান মালিক সমিতির নতুন কমিটি গঠন
খুলনায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ডানা, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা