জালিয়াত চক্রের আতঙ্কে থাকেন স্থানীয় জমির মালিকরা। ভূমিসেবায় জমি মালিকদের হয়রানীমুক্ত সেবাদানে তৎপর রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড)। এমনকি জালিয়াত চক্রের দৌড়াত্বরোধে জমি মালিকদের সচেতন করতে নেয়া হয়েছে পদক্ষেপ। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল সেবাদান ও রাজস্ব আদায়সহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় খাস জমি উদ্ধার, ভেজাল প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, অককাঠামো উন্নয়নে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রাজধানী ঘেষা পূর্বাচল নতুন শহরকে ঘিরে ৭টি ইউনিয়ন আর ২টি পৌরসভা নিয়ে শিল্পনগরীখ্যাত ব্যস্ততম উপজেলা রূপগঞ্জ। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক,৩শ ফুট সড়ক আর ঢাকা বাইপাস সড়কসহ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থান এ উপজেলার। ১৩৩টি মৌজায় ২৩ হাজার ৪’শত ৭৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় গড়ে ওঠেছে শিল্পকারখানা, আবাসন কোম্পানী এবং আবাসিক গুরুত্ব। ফলে অতি ব্যস্ততম নগরীতে আবাসনের দৌড়াত্ব্য থাকায় স্থানীয় জমি মালিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রয়েছে জালিয়াত চক্রের সক্রিয় ভুমিকা। জালিয়াত চক্র জমি মালিকদের কাছ থেকে অপকৌশলে জমি আত্বসাৎ করতে নানারকম চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ওই চক্র প্রথমে ভুয়া দলিল তৈরী করে উপজেলা ভুমি অফিস থেকে নামজারী, জমা খারিজ করিয়ে নেয়। পরে তা বিক্রি করে দেয় প্রভাবশালী মহলের কাছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার ভুমি মালিকরা। এসব বিষয় নজরে এলে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী (ভূমি)কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম।
রূপগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল ২০২১ইং তে বর্তমান এসিল্যান্ড আতিকুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে নামজারী রাজস্ব হিসেবে গত ৬ মাসে ১ কোটি ১ লাখের অধিক, ভিপি লিজ বকেয়া আদায় ১১লাখ ১৩ হাজার উত্তোলন করেছেন। এছাড়াও সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সেরা রাজস্ব আদায় উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পাশপাশি উপজেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানানো হয়েছে। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। খাস জমি উদ্ধারেও এসিল্যান্ড তৎপর রয়েছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় থাকা ক তফসিলভুক্ত সম্পত্তি উদ্ধার করে সরকারের দখলে নেয়া হয়েছে।
উপজেলার মোগলান মৌজার বাসিন্দা মাহবুব আলম বলেন, জালিয়াত চক্র বিভিন্নভাবে এসিল্যান্ড থেকে নামজারি করিয়ে ভুয়া দাতা দিয়ে বিক্রি করে দেয়। এতে আমরা হয়রানী হতাম। এবার শুনলাম এসিল্যান্ড সতর্ক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতেছেন। তাতে আমরা খুশি।
উপজেলার নাজির কাম ক্যাশিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, ভূমি সেবায় ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করায় জমি মালিকদের নিরাপত্তা বেড়েছে। এখন আর লুকোচুরি করে একের জমি অন্যের নামে করিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। তবে আইনের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জমি মালিকদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
রূপগঞ্জ উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, ভূমি অফিসে জমি মালিকের ছদ্মবেশি জালিয়াত চক্রের অপকর্মে বাঁধা দিলেই ভুমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ চালায় অপপ্রচার চালায়। বিধি মোতাবেক নামজারী করতে আসা জমি মালিকদের পক্ষ বিপক্ষের শুনানীর ব্যবস্থা করে থাকি। প্রয়োজনে তাদের কাগজপত্র যাচাই বাচাই করি। এতে প্রকৃত জমি মালিকরা খুশি হলেও জালিয়াতচক্র ও অপকর্মে লিপ্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাদের কেউ কেউ অপপ্রচার চালায়। মুলত জমি মালিকদের নিরাপত্তা বাড়াতেই যাচাই বাচাই করা হয়। সরকারী নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত লেনদেনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, সরকার ভূমি সেবায় আধুনিকায়ন করার জন্য অনলাইন ভিত্তিক সেবার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা হয়রানীমুক্ত সেবাদানে তৎপর।