ঢাকা মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
চট্টগ্রাম ভুমিকম্পের প্রভাবে ওরিয়েন্ট টাওয়ারে ফাটল
  • চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
  • ২০২১-১২-২৫ ০২:১০:৫৫

চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্র লালদীঘি পাড়ের উত্তর পাশ্ববর্তী ওরিয়েন্ট টাওয়ার নামক ভবনটি বিল্ডিংকোড না মেনেই নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের প্রভাবে ভবনটিতে দেখা দিয়েছে ফাটল ও একাংশ হেলে পড়েছে। দফায়-দফায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পায়নি ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া এবং প্রতিবেশিরা।

ভবনটির মালিক বেশ কয়েকজন হওয়াতে বিপাকে পড়েছে ভুক্তভোগীরা। এরই মধ্যে ভবনটিতে কয়েকটি সরকারি বেসরকারি, ব্যাংক -বীমা ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সহ বেশ কয়েকটি মিনি গার্মেন্টস ও দোকানপাট রয়েছে। মূলত ভবন নির্মাণ আইন (বিল্ডিংকোড) অনুসারে ভবনটি নির্মাণে যে নিয়ম রয়েছে তা তোয়াক্কাা না করে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্থানীয় অনেকেই দাবি করেছেন এবং জনজীবন ঝুঁকির বিষয়টি ফাইন্যান্সিয়াল পোস্টকে জানান। 

সরেজমিনে  দেখা যায়,ভবনটি সাত তলার  স্থলে নয় তলা নির্মাণ করা হয়। সেটি নকশা বহিভূর্ত ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বিহীন ভাবে। অন্যদিকে ভবনের পঞ্চম তলা হইতে আইন এবং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দক্ষিণ পাশে ৫ ফুট বর্ধিত করে ৯ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে পার্শ্ববর্তী  ভবনের ক্ষতি  হচ্ছে বল উক্ত ভবনের মালিক জানান। 

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওরিয়েন্ট টাওয়ারের ভবন মালিকদের ৫ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিলেও অভিযুক্তরা ভবনটি ৯ তলা নির্মাণ করছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও সকল পক্ষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের পর ওই বহুতল ভবনটি হেলে পড়েছে। এতে করে আশপাশের বাড়ি ও এলকাবাসী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এ দিকে উক্ত ভবনের ভাড়াটিয়া অগ্রণী ব্যাংক লালদিঘী কর্পোরেট শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক ও শাখা প্রধান শিশির কান্তি দাশ মালিকপক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানান। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য শিশির কান্তি দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফাইন্যান্সিয়াল পোস্টকে
 বলেন, আমি এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ভবনটির উত্তর ও পূর্ব পাশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বড় করে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি।  দেশে দিন দিন ভূমিকম্পে ঝুঁকির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর মধ্যে যদি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে ঢাকার রানা প্লাজার ঘটনাটির মত পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) গবেষণা সেল কর্তৃক এক জরিপে দেখা যায় চট্টগ্রাম নগরীতে সরকারি-বেসরকারি ভবন মিলে এক লাখ ৮২ হাজার ভবনের মধ্যে প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এ তালিকা করা হয়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে নগরবাসী। 
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফাইন্যান্সিয়াল পোস্টকে বলেন, লালদিঘীর ওরিয়েন্ট টাওয়ার ভবনটির ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, বিষয়টি তিনি তদারকি করছেন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভবনটির ব্যাপারে বিল্ডিং কোড অমান্য, পার্কিং এর নামে দোকানের নির্মাণ, পাঁচতলার উপর হইতে একপাশে ৫ ফুট বর্ধিতকরণ, ভূমিকম্পের পর ফাটল সৃষ্টি সহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে। আমরা এ বিষয়ে অনেকবার ভবন মালিককে নোটিশ দিয়েছি এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূমিকম্পের পর ফাটল সৃষ্টি হেলে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গুলোর ব্যাপারে কি  পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন  তা জানতে চাওয়া হলে  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ফাইন্যান্সিয়াল পোস্টকে বলেন, বিগত কয়েকদিন আগে ভূমিকম্পের কারণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বেশ কিছু ভবনে ফাটল এবং হেলে যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের নির্মাণ  প্রকৌশল বিভাগ এই ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্ত ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে ভবনটির অন্যতম মালিক অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফাইন্যান্সিয়াল পোস্টকে বলেন, আমি ঢাকায় অবস্থান করার কারণে অবৈধ দখলদার এস এম আহমদ হোসেন ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন কাজ করতে দেয়নি। যার কারণে ভবনটি আজ জরাজীর্ণ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য একাধিকবার নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু অবৈধ দখলদার এস এম আহমদ হোসেন এর জন্য তা সম্ভব হয়নি। 

অভিযুক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে এস এম আহমদ হোসেনের  সাথে অনেকবার যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সুন্দরবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করবে আরণ্যক ফাউন্ডেশন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু হত্যা বন্ধের দাবিতে দিনাজপুরে শিশু শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদা
সর্বশেষ সংবাদ