তিস্তা নদীর তীরবর্তী লালমনিরহাট জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল ভুট্টা চাষাবাদের মৌসূম শুরু হয়ে গেছে। বন্যা পরবর্তী সময় এ জেলার কৃষকরা ভুট্টার বীজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছে। যে কারণে বাজারে ভুট্টা বীজের প্রচুর চাহিদা দেখা গেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী নামী ও দামী বীজ কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে বাজারে নিম্নমানের ভুট্টা বীজ বিক্রি করছে। ওই সব নিম্নমানের বীজ ক্রয় করে কৃষকরা প্রতারতি হলেও নামসর্বস্ব অনুমোদনহীন বীজ কোম্পানী গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে দেখা মিলছে না কৃষি বিভাগের।
জানা গেছে, প্রায় ১ মাস আগে জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী চর অঞ্চলের উঁচু জমি গুলোতে কৃষকরা এবার একটু আগাম ভুট্টা বীজ রোপন করেন। কিন্তু এ মাসের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ বন্যায় জেলার সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে আবারও নতুন করে জমিতে ভুট্টা বীজ রোপন করতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে বাজারে তুলনামূলক এবার ভুট্টা বীজের চাহিদা কয়েক গুন বেড়ে গেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নামী ও দামী বীজ কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে বাজারে নিম্নমানের অনুমোদনহীন ভুট্টা বীজ বিক্রি করছে।
সরে জমিনে দেখা যায়, গত বছর এ অঞ্চলে বিজয় ৭১ ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। রাফিদ সীডস্ আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ন্যাচারাল সীডস্ কোম্পানীর বিজয় ৭১ ভুট্টা এ অঞ্চলে কৃষকদের কাছে এবার জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কোম্পানীর ঠিকানা কার্পাসডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা। এ বছর সবাই বিজয় ৭১ ভুট্টা বীজ রোপনে ঝুঁকে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিজয় ৭১ নামে অন্য কোম্পানীর নামে বীজ প্যাকেটজাত করে বাজারে কম দামে বিক্রি করছে। অনেক কৃষক তাদের বাহারী প্যাকেট ও দামে সস্তা হওয়ায় রাফিদ সীডস্’র বিজয় ৭১ ভেবে অনুমোদনহীন জয়কৃষাণ সীডস্ বিজয় ৭১ ভুট্টা বীজ ক্রয় করছেন। যার আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান রত্না বীজ ভান্ডার, উল্লাহপাড়া, সিরাজগঞ্জ। এমন দাবী রাফিদ সীডস্ কোম্পানীর।
ন্যাচারাল সীর্ডস কোম্পানী’র মার্কেটিং অফিসার নুরুজ্জামান হোসেন বলেন, এ অঞ্চলে কৃষকদের মাঝে রাফিদ সীডস্ আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ন্যাচারাল সীডস্ কোম্পানীর বিজয় ৭১ ভুট্টা বীজের ব্যাপক চাহিদা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রত্না বীজ ভান্ডার নামে একটি বীজ কোম্পানী জয়কৃষাণ সীডস্ বিজয় ৭১ ভুট্টা নামে অনুমোদনহীন বীজ বাজারে বিক্রি করছেন। এতে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগও করেছি।
এ দিকে লালমনিরহাটের বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাট-বাজার গুলোতে বিভিন্ন নামে অনুমোদনহীন কোম্পানীর ব্যানারে নিম্মমানের ভুট্টা বীজ বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট দেখতে সুন্দর ও দামে সস্তা হওয়ায় কৃষকরা ওই সব বীজ ক্রয় করে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তেমনি এবারে ভুট্টা উৎপাদনে লক্ষমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকাও রয়েছে। ওই সব নিম্নমানের বীজ ক্রয় করে কৃষকরা প্রতারতি হলেও নামসর্বস্ব অনুমোদনহীন বীজ কোম্পানী গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে দেখা মিলছে না কৃষি বিভাগের।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ভেজাল ও অনুমোদনহীন বীজ বিক্রি আইনগত অপরাধ। ভেজাল বীজ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।