নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রাধাগঞ্জে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপরে নেই পাকা সেতু। সেতু না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোতে এবং বর্ষা মৌসুমে ছোট ডিঙি নৌকায় নদ পারাপার হয় মানুষ। এতে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। সেতু না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ২ উপজেলার ১২ গ্রামের লাখো মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে এই এলাকার মানুষ নদে একটি পাকা সেতুর দাবি জানিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা নির্মাণ হচ্ছে না। প্রতিদিনের বাজারে যাতায়াত, কৃষিপণ্য পরিবহন, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়া এবং জরুরি রোগী হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আড়িয়াল খাঁ নদের ওপরে রয়েছে একটি সাঁকো। নদের এক পারে রয়েছে রাধাগঞ্জ বাজার, অপর পারে নয়াচর গ্রাম। দুই পারের একই দুই গ্রামসহ সৈকার চর, মাখাল্লা, কামালপুর, জানখারটেক, লেটার, দক্ষিণ কামালপুর, কাজিয়ার গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের বাস। এসব গ্রামের মানুষের নদের দুই পারে যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম হলো বাঁশের সাঁকো। এর মধ্যে নদের নয়াচর গ্রামের দিক থেকে উপজেলা ও জেলায় যাওয়ার একমাত্র পথে হচ্ছে এই বাঁশের সাঁকো। সাঁকোতে ঝুকি ও দুর্ভোগ নিয়ে পারাপার হতে গেলেও জনপ্রতি ১০ টাকা দিতে হচ্ছে ইজারাদার খরচ। বর্ষায় নদে পানি বেড়ে গেলে পার হতে হয় ছোট বিঙি নৌকায়। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে। সপ্তাহে তিন দিন বসে রাধাগঞ্জ হাট। হাটের দিনে আরও বেশি মানুষ যাতায়ত করে। বাঁশের সাঁকোয় কৃষিপণ্য ও বিভিন্ন মালামাল পরিবহন, বয়স্ক মানুষের বাজারে যাতায়ত, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের যাতায়ত, অসুস্থ হয়ে পড়া রোগী হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না।
নয়াচর গ্রামের এক কৃষক বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের ভরসা রাধাগঞ্জ বাজার। সেতু না থাকায় বাজারে কৃষিপণ্য ও অন্যান্য ভারী মালামাল পরিবহন করতে হয় এক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে। এত খরচ, সময়, দুর্ভোগ সবই বাড়ে। অসুস্থ হয়ে পাড়লে রোগী হাসপাতালে নেওয়া যায় না। একই গ্রামের শিক্ষক অছি উদ্দীন আহমেদ বলেন, একটি ডিগ্রি সমমানের মাদ্রাসা, একটি উচ্চবিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ রাধাগঞ্জ বাজারে যাতায়তে প্রতিদিন হাজারো মানুষের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। বর্ষাকালে ছোট ডিঙি। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু। পরে সংসদের নির্দেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সেতু নির্মাণের জন্য একাধিকবার মাটি পরীক্ষা ও প্রাথমিক জরিপ কাজ করেছে।
নরসিংদী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো: আবু জাকির সেকান্দার বলেন, এখানে মাটি পরীক্ষা ও প্রাথমিক জরিপকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। নদটি বি ক্যাটাগরির হওয়ায় আন্তর্জাতিক মানের নকশা করতে হবে। এ ধরনের নকশা তৈরি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবু এখানে অবশ্যই সেতু নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সেতু নির্মাণের জন্য বাজেট বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়টিও জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সবকিছুর জন্য কাজ চলছে।