ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তলনের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভয়াবহ ভাঙ্গণের দেখা দিয়েছে। উপজেলার মেঘনার ভাঙনে মুখে উপজেলার মানিকনগর বাজার, চরলাপাং, বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, কেদারখোলা, বাইশ মৌজা বাজারসহ নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর সীমানা মানচিত্র থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র।এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসলি জমিজমা, ব্যবসায়িক দোকানপাট হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন অনেকেই।তবু এই অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীদের বালু উত্তলন থামছেই না।
জানা যায়, নবীনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা মেঘনার প্রবল ভাঙনের খেলা চলছে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে। ভৈরব-নবীনগর-নরসিংদী নদীপথের প্রায় ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গত ১০ বছরে মেঘনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা। প্রতিবছর শতশত কৃষিজমি, বাড়িঘড় গ্রাস করছে সর্বনাশী মেঘনা। বাড়ছে উদ্বাস্ত ও ছিন্নমূলের সংখ্যাও। মেঘনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে যাযাবরী জীবনযাপন করছে অসংখ্য পরিবার।
সরেজমিন দেখা যায়, নবীনগর উপজেলার সাহেবনগর ও চরলাপাং গ্রামের মাঝামাঝি এলাকা থেকে নরসিংদী এলাকার ইজারাদারা নবীনগর উপজেলার কিছু স্বার্থনেশী মহলের যোগ সাজে মেঘনা নদীর নবীনগর এলাকাথেকে বালু উত্তলন করছে। গত কয়েক বছর আগেও যারা নদী থেকে বালি উত্তলনে বিরোধীতা করেছিলেন তারাও এখন বালু মহলের ভাগ পেয়ে এখন আর বালু উত্তলনের বিরোধীতা করেন না।
স্থানী ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানান, নবীনগর থেকে প্রশাসনের লোকজন বহুবার এই ড্রেজার গুলিকে জরিমানা ও ড্রেজার জব্ধ করেছেন। প্রশাসনের অভিযানে কিছুদিন বালু উত্তলন বন্ধ থাকলেওপরে আবার চালু হয়ে যায় ড্রেজার। তারা জানান, গত বছর নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তলনে বাধা দেওয়া নেতারাও কাকতালিও ভাবে এই ড্রেজারের ব্যাবসার সাথে জরিত হয়ে যায়। এলাকার অনেক বড়বড় নেতারা মেঘনা নদীর এই অবৈধ ড্রেজার ব্যাবসার সাথে জড়িত আছে।
নদী ভাঙ্গণ এলাকা গুলি ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, বড়িকান্দি, মানিকগর বাজার, নয়াহাটি, চিত্রি, চরলাপাং, নজরদৌলত, গাছতলা, কেদারখলা, দুর্গারমপুরসহ এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমিসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত এ ভাঙনের ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নবীনগর উপজেলার আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, মানিকনগর বাজার, সাহেবনগর, চরলাপাং, চিত্রি, কেদারখোলা নামের গ্রামগুলির পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এভাঙনের ভয়াবহতা চরম আকার ধারণ করে। তখন দেখা যায় নদীর ভঙ্কর ঢেউ আর মাটি ভাঙার শব্দে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করে মেঘনা পাড়ের মানুষ।নিরুপায় হয়ে সৃষ্টিকর্তার মুখপানে চেয়ে থাকা ছাড়া আর তাদের কিছুই করার থাকে না। এ বিষয়ে উপজেলার সাহেবনগর ঘাট থেকে মেঘনা নদী থেকে
ড্রেজারে বালু উত্তলন করা ড্রেজারের লোকজনদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান,এ বছর নরসিংদী থেকে বালু মহলের ইজারা নিয়েছেন মো.কাইয়ুম নামে এক ইজারাদার। তার সাথে যোগাযোগের নাম্বার আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন,এ বিষয়ে সাহেব নগর গ্রামের ইউপি সদস্য আতিক মেম্বার এ বিষয়ে বলতে পারবেন। ইউপি সদস্য মো. আতিক জানান, আজ হিসাবপত্র নিয়ে তিনি ব্যাস্ত আছেন আগামিকাল আমি আপনাকে ইজারাদার কাইয়ুম ভায়ের নাম্বার মোবাইলে পাঠিয়ে দিবো বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. হায়াত-উদ-দৌলা খান জানান, কেউ যুদি অবৈধ ভাবে নবীনগরের মেঘনা নদী থেকেবালু উত্তলন করেন, তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। বিষয়টির দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. এবাদুল করিম বুলবুল বলেন, নদীর পাড়ের মানুষের সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো নদী ভাঙন। মেঘনার ভাঙন রোধকল্পে ২০২০ সালে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই নদী ভাঙ্গন এলাকা থেকে কেউ যদি ড্রেজারে বালু উত্তলন করেন আমাদের সেইসব প্রকল্পগুলি ভেসে যাবে। আমি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যাবস্থা নিবো।