ঢাকা শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
ইউনিপে টু ইউ’র : ৬ হাজার কোটি টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • ২০২০-১০-২৫ ০৮:১২:২২

কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপে টু ইউ-তে ১০ মাসে দ্বিগুণ লাভের আশায় ৬ লাখ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ করা ৬ হাজার কোটি টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এই টাকা ফেরত পেতে বিনিয়োগকারীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রান। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। টাকা ফেরত দিতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। আবার, কিছু গ্রাহক এমএলএম প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের মামলা করলেও তা বছরের পর ঝুলে আছে।

ফলে বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে বিনিয়োগকারীদের আশা দিন দিন ফিকে হচ্ছে। এখানে বিনিয়োগ করে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন, অনেকেই ব্যাংক ঋণে জর্জরিত, আবার বেশ কয়েকজন হারিয়েছেন মানসিক ভারসাম্য।

ইউনিপে টু ইউ-এ ১০ মাসে দ্বিগুণ লাভের আশায় ২০১০ সালে তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন রাজধানীর মিরপুর-১০-এর বাসিন্দা মো. মনজুর হোসেন।

একটি জমি বিক্রয়ের টাকা, বউয়ের গহনা বেচা ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি।

এরপর দ্বিগুণ লাভ দূরের কথা, তার বিনিয়োগ করা মূল টাকাই ফেরত পাননি। এই টাকা ফেরত পেতে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েছেন। কোনো লাভ হয়নি। এই সময়ের মধ্যে মিরপুরের বাড়ি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছেন।
আদালতের নির্দেশনা

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১১ সালের ইউনিপে টু ইউ'র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মামলা করে।

গত বছরের ২৩ জানুয়ারি ওই মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ ইউনিপে টু ইউ'র চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ছয়জন কর্মকর্তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ২৭০২ কোটি ৪১ লাখ ১১ হাজার ৭৮৪ টাকা ১৪ পয়সা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়াও কম্পানিটির তিনটি হিসাব নম্বরের বিপরীতে সর্বমোট ৪২০ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৩ টাকা জব্দ করার আদেশ দেন আদালত। যা গ্রাহকদের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশ দেন। রাজধানীর এই চারটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো জমা ছিল প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিদের নামে।

জব্দ করা টাকার বিষয়ে আদালত রায়ে বলেন, 'বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের লাখ লাখ জনসাধরণের আমানতের একটি ক্ষুদ্র অংশ উক্ত অবরুদ্ধ টাকা। উক্ত টাকা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্তক্রমে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে ন্যায়সঙ্গতভাবে তা ফেরত দিতে অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্টরা দ্রুত যতাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'

এছাড়াও বিদেশ পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগকারীদের দিতে বলেছেন আদালত।
রায়ে হয়নি কাজ

আদালতের রায়ের পরও মো. মনজুর হোসেনসহ এমএলএম কোম্পানিটির ৬ লাখ গ্রাহকের এক টাকাও ফেরত দিতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

মনজুর হোসেন আদালতের রায় অনুযায়ী লগ্নি করা অর্থ ফেরত পেতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে এক বছর আট মাস ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল পাননি। বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে গত আগস্ট মাসে হাইকোর্টে রিট মামলা করেন তিনি।

গত ২৬ আগস্ট রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে, বিচারিক আদালতের রায় অনুযায়ী ইউনিপে টু ইউ'র জব্দ করা ওই ৪২০ কোটি টাকা কেন গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন হাইকোর্ট। অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগ, আইন সচিব, ইউনিপে টু ইউসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মনজুর হোসেনের আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রুলের চার সপ্তাহ অতিক্রম করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেননি বিবাদীরা।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী তানজীব-উল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুলের জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আবেদন করা হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষে এই মামলায় আইনি লড়াই করার জন্য শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দণ্ডিতদের ১২ বছর সাজার ৯ বছর শেষ

ইউনিপে টু ইউ'র চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ছয়জন কর্মকর্তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০১১ সালে পর ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি রায়ে দণ্ডিত হয়ে এখন পর্যন্ত কারাগারে রয়েছেন ইউনিপে টু ইউ'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মুনতাসির হোসেন, ব্যবস্থাপক জামশেদ রহমান ও পরিচালক আরশাদ উল্লাহ।

দণ্ডিত অপর তিনজন- চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান শাহীন, নির্বাহী পরিচালক মাসুদুর রহমান ও উপদেষ্টা মঞ্জুর এহসান চৌধুরী বিদেশে পলাতক রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ১২ বছর সাজার ৯ বছর শেষ। নিয়ম অনুযায়ী আর সর্ব্বোচ্চ দুই বছর তিন কারাবন্দিকে কারাগারে অবস্থান করতে হবে। এরপর তারা মুক্তি পাবেন।

তবে হাইকোর্টে রিট সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন জানান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, আদালতের রায় অনুযায়ী সাজার মেয়াদ শেষ হলেও ২৭০২ কোটি টাকার যে অর্থদণ্ড রয়েছে, সেটি সরকারের কোষাগারে জমা না দেওয়া পর্যন্ত তারা মুক্তি পাবেন না। অর্থদণ্ডের অন্তত অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে মুক্তির আবেদন করতে হবে।
তারা যা বলেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে সরকারের উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। আদালতের রায়ের পরও সরকারের সংশ্লিষ্টরা এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউনিপে টু ইউ'র বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি জড়িত নয়। ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-সহ (বিএফআইইউ) দুদক, সিআইডি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা বিষয়টি দেখছে।

বিএফআইইউ'র প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ''ইউনিপে টু ইউ'র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে আমরা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেই তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ও এর সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।''

তিনি আরও বলেন, 'আদালতের রায় অনুযায়ী গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো কাজ নেই। এ সংক্রান্ত সর্বশেষ অবস্থা না দেখে আমি কিছু বলতে পারব না। এই টাকা ফেরত দিতে একজন রিসিভার নিয়োগ করতে হবে।'

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, ২০১১ সালে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করে দদুক। ওই মামলা তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। বিচারও শেষ হয়েছে। এখন এই কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা আদালতের রায় অনুযায়ী কাজ করার কথা।

তবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আদালতের রায়ের পরও কেন গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না, বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। কারণ, ওই এমএলএম কোম্পানির কর্তারা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে, দেশে-বিদেশে পাচার, নিজেদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, পরিবারের সদস্য ও কাছের লোকদের নামে বেনামে ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন।

তিনি বলেন, 'একটি অংশ সরকার জব্দ করেছে, কিন্তু বড় একটা অংশ এখনো তাদের হাতে নানাভাবে রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির দণ্ডিত পলাতক ব্যক্তিরা গ্রাহকদের টাকা না দিতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন। এছাড়াও তাদের পিছনে সরকারের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তিই রয়েছেন।

প্রতারণার শুরু যেভাবে
জানা যায়, কোম্পানি আইনে নিবন্ধন নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে ইউনিপে টু ইউ তাদের এমএলএম ব্যবসা শুরু করে। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে তারা।  নিয়ম অনুযায়ী, কেউ বিনিয়োগ করতে চাইলে অনলাইনের তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হতো। ওই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এককালীন অফেরতযোগ্য  ৪২ হাজার টাকা ফি দেওয়ার নিয়ম ছিল। একজন বিনিয়োগকারীর অনলিমিটেড অ্যাকাউন্ট খোলারও নিয়ম ছিল। তবে একটি অ্যাকাউন্টে সর্ব্বোচ্চ ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা যেত।

বিনিয়োগকারীরা জানান, প্রায় সকল বিনিয়োগকারী একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিছু বিনিয়োগকারী শতাধিক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন বলে জানা গেছে।

বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্য রাজধানীহ দেশের চার মহানগরীতে কয়েক হাজার অ্যাজেন্ট নিয়োগ দিয়েছিল ইউনিপে। এমএলএম পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারী সংগ্রহকারী ওই অ্যাজেন্টরাও একটা বড় অংশের কমিশন পেতেন।

বিনিয়োগকারীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের ব্যবসা করার কথা বলে ইউনিপে কর্তৃপক্ষ এই বিনিয়োগের টাকা নিত। এই কোম্পানি সদস্যদের টাকা একত্র করে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা কেনাবেচার ব্যবসা করার কথা। তারা বলেছিল, এতে প্রতি মাসে গড়ে কোম্পানিটির যে লাভ হবে, তা থেকে দশ মাসে বিনিয়োগের দ্বিগুণ টাকা বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

বিনিয়োগকারী মনজুর হোসেন জানান, ৪২ হাজার টাকা দিয়ে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পরবর্তীকালে বিনিয়োগারীর অ্যাকাউন্টে জমা করার টাকার বিপরীতে ইউনিপে টু ইউ একটি রিসিট পাঠাত। দশ মাস পর আরেকটি রিসিট ও বিনিয়োগের দ্বিগুণ টাকা অ্যাকাউন্টে যোগ হতো। কিন্তু ইউনিপে শুরুর পর ধরা খাওয়া পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগকারীকে নগদ টাকা দেয়নি। দ্বিগুণ টাকার রিসিট ছিল বাহানামাত্র।
মামলা করেও হচ্ছে না লাভ

২০১৮ সালের শুরুতে ৩৬৫ জন বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগের ২৭১ কোটি ফিরে পেতে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ (আরবিট্রেশন) আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন। এক মামলায় ৩১৪ জন বিনিয়োগের ১৮০ কোটি টাকা, আরেকটিতে ৫১ জন গ্রাহকের ৯১ কোটি টাকার দাবি করা হয়। মামলার বিচার এখনো চলমান।

মামলাটিতে ইউনিপের কর্তাব্যক্তি ও অর্থমন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। কিন্তু বিবাদী পক্ষের কেউ এই মামলায় সমনের জবাব বা আদালতে হাজির না হওয়ায় এক তরফা বিচার চলছে।

একটি মামলাঢ় অন্যতম বাদী সারোয়ার মোরসেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, আগামী ২৮ অক্টোবর ১৮০ কোটি টাকার মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে। তবে কবে নাগাদ বিচারকাজ শেষ হবে, তা জানা নেই এই বিনিয়োগকারীদের।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউনিপের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০ গ্রাহক ৭০টি প্রতারণার মামলা করেছেন। এর মধ্যে ঢাকায় হয়েছে ২৬টি মামলা। শুধু চট্টগ্রামের একটি মামলার বিচার শেষ হলেও ওই গ্রাহক তার টাকা ফেরত পাননি।

২০১২ সালে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দা এজাজজুল হকসহ ইউনিপে'তে ৫৫ লাখ টাকা বিনিয়োগকারী ৩৫ জন মোহাম্মদপুর থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেন। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত আদালতে প্রতিবেদন দেয়নি পুলিশ।

এজাজুল হক বলেন, এ রকম ৬৯টি মামলার একটিতেও পুলিশ কোনো প্রতিবেদন দেয়নি। ফলে মামলার বিচারকাজ এখনো শুরু হয়নি। ন্যায়বিচার ও বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়ার আশা এক রকম ছেড়েই দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নামে-বেনামে সম্পত্তি ও টাকা

দুদকের তদন্তে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে মালয়েশিয়ায়। ইউনিপের মালয়েশিয়া শাখার প্রধান, জেমস নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি ওই টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছেন। এখন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্তাব্যক্তি সেখানে পালিয়ে গিয়ে, সেই টাকা ভোগ করছেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।

বিনিয়োগকারীরা জানান, রাজধানীর এলিফেন্ট রোডে ইউনিপে'র গ্রাহকদের প্রায় ৭ কোটি টাকা দিয়ে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান শাহীনের নামে ৫ কাঠা জায়গা কেনা হয়।
পরের বছর প্রতিষ্ঠানটির বেগতিক অবস্থা বুঝতে পেয়ে ওই সম্পত্তি পরিবারের অন্য সদস্যের নামে দলিল করে দেন শাহীন। এখন সেখানে ইজি বিল্ডার্স নামে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে।

এছাড়াও উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে আরও চার কাঠা জমি কেনা হয় ইউনিপে টু ইউ'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুনতাসির হোসেনের নামে। সেটি এখন রফিকুল ইসলাম নামে মুনতাসির হোসেনের এক আত্মীয় দখলে রেখে বাড়ি নির্মাণের কাজ চালাচ্ছেন।

কোম্পানির এমডির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, কুষ্টিয়া জেলা জাতীয় পার্টির নেতা জাহাঙ্গীরের নামে শত কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়েছে রাজধানীসহ বিভিন্ন দেশের জায়গায়। ওই সম্পত্তিগুলো ওই নেতা ভোগ করলেও তা থেকে আসা মুনাফা ইউনিপে'র কর্তাব্যক্তিদের পকেটে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বাংলাবাজার পত্রিকা কেনার নামে কসকো সাবান কোম্পানির এমডি ও পত্রিকাটির প্রকাশকের কাছে এক কোটি টাকা রয়েছে ইউনিপে'র।

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, বিনিয়োগকারীদের কয়েক শত কোটি টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, বরিশাল, কক্সবাজারে ফ্ল্যাট ও জমি কিনেছেন। সেই জমিগুলো তারা নানা কৌশলে দখলে রেখে ভোগ করছেন।

অন্যদিকে, বিনিয়োগের বাকি টাকাগুলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কানাডায় পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।
কী হবে শেষ পর্যন্ত

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যেহেতু হাইকোর্ট গ্রাহকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে রুল জারি করেছেন, এই রুলের চূড়ান্ত শুনানি হলে হাইকোর্ট কী ধরনের আদেশ দেন, তার ওপর নির্ভর করছে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া।

তবে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে হাইকোর্ট সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক বা বা অর্থ সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাউকে রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

 

দিনাজপুরে নিরাপদ বিষমুক্ত বারোবাসি ড্রাগন ফল পাওয়ার  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রতন কুমার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে খিরার আবাদ
চিরিরবন্দরে গীষ্মকালিন পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা
সর্বশেষ সংবাদ