দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের মোট খরচের প্রায় ৪৫ শতাংশই ওষুধ কিনতে ব্যয় হয়। যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের বাজারের ওপর সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় লাগামহীন ওষুধের দাম। যদিও ওষুধ প্রশাসন বলছে, নিয়ন্ত্রণে আছে বাজার।
এ বিষয়ে রুমা নামক এক ভুক্তভোগীর মা জানান, আমার ১৩ বছরের মেয়ে ভুগছেন কিডনি জটিলতায়। রুটিন করে প্রতি সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। সরকারি হাসপাতাল হলেও সপ্তাহে এ জন্য কেবল ওষুধের খরচ সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য তা কত বড় বোঝা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে।
রুমা আরও জানান, একটি রক্ত হওয়ার জন্য একটি ইনজেকশন দেয়া হয়। এর দাম এক হাজার ৪০০ টাকা। আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। দামটা আরও কমানো উচিত।
একই অবস্থা আরেক নারীর বেলায়ও। পরিবারের এক সদস্যের দুই সপ্তাহের ওষুধের খরচ মেটাতেই হিমশিম। এরই মধ্যে বাজারে দাম বেড়েছে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ওষুধসহ বেশ কিছু পথ্যের।
ওই নারী জানান, কি খাবার খেলাম না-খেলাম সেটা ভাবার সময় নেই। কিন্তু রোগীর ওষুধ আমাকে সময়মতো দিতেই হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য বলছে, এ দেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের মোট খরচের ৪৪.৬ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধের খরচ বাবদ। অথচ ভারতে এই ব্যয় ৩৪.৭ শতাংশ, নেপালে ২৯.১ শ্রীলঙ্কা ২৬.৫ আর ভুটানে মাত্র ৯.৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অর্থনীতির ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মো. রেজাউল করিম বলেন, মানুষ নিজে পকেট থেকে ১০০ টাকার ৬৭ টাকা খরচ করে চিকিৎসার জন্য। সেই ৬৭ টাকা থেকে অর্ধেকের বেশি টাকা খরচ করেন ওষুধের পেছনে। যেটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রত্যাবাসনই মূল সমাধান, এলো ৬০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি
দেশে উৎপাদিত ওষুধের ১১৭টি ওষুধের দাম সরকার সরাসরি নির্ধারণ করলেও বাকি ওষুধের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ থাকে খোদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। বাড়তি দামের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াকেই দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ফার্মাকোলোজিক্যাল সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, সরকার নিজের অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছেন। ১১৭ ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করবেন। বাকিগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে দায়িত্ব দিয়েছেন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানদের।
তবে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ওষুধ প্রশাসনের পরিচালক আইয়্যুব হোসেন বলেন, সরাসরি দাম নির্ধারণের আওতায় আরও ওষুধের অন্তর্ভুক্তিতে কাজ করছি।
বাংলাদেশে ওষুধবাবদ মাথাপিছু বার্ষিক খরচ ১৫.১ ডলার