করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে প্রাক্কলণ করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকনোমিক ফোকাস রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহামারীর অভিঘাত প্রলম্বিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা, লাখ লাখ মানুষকে এই মহামারী চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, স্বল্পমেয়াদের জন্য হলেও দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। কৃষির বাইরে বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের যে কর্মীরা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বড় শহরে এর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেছেন, “বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা দশা বাংলাদেশের ওপরও প্রভাব ফেলবে। তবে এই ধাক্কা সামাল দিতে সরকার ইতোমধ্যে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা সঠিক পথেই আছে।”
তার পরামর্শ, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো যেন টেকসই হয়, সেজন্য সরকারকে আর্থিক খাত ও ঋণ ব্যবস্থাপনার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। আর্থিক খাতকে মজবুত করার দিকে নজর দিতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়তে পারে, যেখানে গত পাঁচ বছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের উপরে থাকছিল।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্যও ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল। কিন্তু মহামারীর মধ্যে দুই মাসের লকডাউন আর বিশ্ব বাজারের স্থবিরতায় তা বড় ধাক্কা খায়।
গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারি হিসেবে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে আসে, যদিও এই অংক আরও কম হওয়ার কথা বলে অনেক বিশ্লেষকের ধারণা।
বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ সামনে কমে আসতে পারে, সেই সঙ্গে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে কর্মীদের আয় কমে আসায় ভোগ ব্যয় বাড়ার সুযোগ থাকবে না।
ক্রেতা দেশগুলোতে তৈরি পোশাকের চাহিদা না বাড়লে বিনিয়োগ ও রপ্তানি আয়ের দিক দিয়েও বাংলাদেশকে আরও ভুগতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংক। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা বাড়তে শুরু করলেও তা কতটা টেকসই হবে, সে সংশয় থাকবে।
মহামারীর মধ্যেও গত তিন মাসে বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, কাজ হারিয়ে দেশে ফেরার আগে প্রবাসীরা তাদের সমস্ত সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, রেমিটেন্সে এই উল্লম্ফন হয়ত তারই ফল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে কর্মীর চাহিদা তেমন বাড়ার আভাস দেখা যাচ্ছে না। ফলে এ অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ কমে আসতে পারে।