ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
বৈদ্যুতিক তারের উপর মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাকে ঝাকে চড়ুই পাখি
  • সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর:
  • ২০২৪-১১-০৬ ০৬:১৪:০২

দিনাজপুরের পলিটেকনিক্যাল ফুলবাড়ি বাস স্ট্যান্ডে বিদ্যুতিক তারের উপর বসে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাকে ঝাকে চড়ুই পাখি। 

লক্ষ লক্ষ চড়ুই পাখি দেখার জন্য রাস্তার পাশে অনেকেই ভিড় জমায়। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ কেউ ভিডিও তৈরি করছে।


দিনাজপুর পৌর শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড মোড় এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটির তারে,এবং গাছের ডালে মসজিদের ছাদের আশেপাশে চড়ুই পাখির ঝাঁক দেখা মিলে,যা সকাল সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় চড়ুই পাখির আনাগোনা কিচিরমিচির ডাক।


সন্ধ্যা নামার আগে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে এই চুড়ুই পাখির দল। তারা দলবেঁধে বসে বৈদ্যুতিক খুঁটির,তারে,গাছের ডালে এবং মসজিদের ছাদে।


পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।দিনাজপুর পৌর শহরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দৃশ্যের দেখা মেলে। চড়ুই পাখি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে লোকজন। 

সাধারণত নির্জন,নিরিবিলি পরিবেশই নিজেদের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নেয় চড়ুই পাখি গুলি। কিন্তু শহরের কোলাহল ও যান্ত্রিকতার মধ্যে এভাবে হাজার হাজার পাখি আশ্রয় নেওয়ায় এলাকাবাসী কিছুটা অবাক।তারা জানান,তিন-চার বছর ধরে এই পাখির দল নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকে। ভোর হতেই এসব পাখি ছুটে যায় খাবারের সন্ধানে। সন্ধ্যার আগে আগে আবার ফিরে আসে।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পাখির আগলে রাখেন স্থানীয়রা। তাদের যাতে কেউ ক্ষতি না করে,সে বিষয়ও নজরে রাখে সবাই।স্থানীয় লোকজন এবং দোকানদাররা সবাই বলেন বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেই আমাদের কর্মস্থল। এখানে গাড়ির শব্দ,লোকজনের সমাগম বেশি। তার পরও পাখির দল এই এলাকায় থাকে। 

ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ড এর মুদির দোকানদার হায়দার আলী বলেন, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখি। এই চড়ুই পাখির দল এখানেই ঘুমায়। সারা রাত থাকে। হাত দিয়ে স্পর্শ করলে বা ধরলেও ভয় কাজ করে না।


ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ড সনেট ফটো স্টুডিওর মালিক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ড এলাকা পাখির অভয়ারণ্যর পরিণত হয়েছে তাই প্রতিদিন সন্ধ্যার আগমুহূর্তে পাখিগুলো আসে। সকালে খাবারের সন্ধানে চলে যায়। গাছে,বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকে। এত পাখি দেখে আমরা এখানকার সবাই মুগ্ধ হয়।

ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় চা বিক্রেতা মশিউর রহমান বলেন শীতের সময় এই পাখির আগমন আরো বেশি ঘটছে কারণ এই এলাকায় পাখিরা নিরাপদে থাকতে পারে কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারে না কারণ আমরা সবাই পাখি দেখে রাখি। প্রতিদিন অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে পাখি দেখতে আসেন। ছবি তোলে। সন্ধ্যা থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। 

দর্শনার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে একসাথে এত চড়াই পাখি আর কখনো কোনদিন দেখিনি। আমি এখানে এসে অনেক মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। অনেকগুলো ছবি তুলেছি। চড়ুই পাখি কিচিরমিচির শব্দ আমার খুব ভালো লাগে।


দর্শনার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, আমি ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ড দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ আমাকে থমকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমি অপলক দৃষ্টিতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর পাখিগুলোকে দেখেছি। কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি।


প্রকৃতি ও পরিবেশবাদী রাকিবুল ইসলাম  বলেন,খাদ্যের সহজলভ্যতা,নিরাপদ প্রাকৃতিক পরিবেশ পাখিদের আবাসস্থল তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করে পাখি। কিন্তু বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে আবাসস্থল নষ্ট হওয়া ফসলে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পাখিরা শহরমুখী হচ্ছে।


পাখি প্রেমী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন,  চড়ুই পাখি গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়।যেমন নদীর ধারে পুকুর পাড়ে,ঝোপঝাড়ে,বাড়ির কোণে চালের খেড়ের ঝপের মধ্যে গ্রামের বাড়ির দেওয়ালের বাঁশের ফুটায় বা গাছের মধ্যে এসব পাখি আবাস গড়ে। এই প্রথম আমরাও দেখলাম দিনাজপুরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এত পাখি আবাসস্থল। ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা চড়ুই পাখির নিরাপদ মনে করছে।


দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ সার্জন ড আশিকা আকবর তৃষা বলেন,এখনও গ্রামে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করা হয়। এতে পাখিরা আতঙ্কে থাকে। আবার গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পাখির আবাসস্থল। চড়ুই পাখি মাটির বাড়ির খোঁপেও থাকে। এখন গ্রামে মাটির বাড়ি নেই। তাই তারা বসবাসের জায়গা হারাচ্ছে। আবার কৃষিজমির পোকা মাকড় মারা হচ্ছে কীটনাশক দিয়ে। ফলে পাখিরা খাদ্য নিরাপত্তা অভাবের মধ্যে রয়েছে। এ জন্য তারা যেখানে জীবন,খাদ্য ও বসবাসের নিরাপত্তা রয়েছে। এমন জায়গা থাকার জন্য বেছে নিচ্ছে। কিন্তু গ্রামে এখন সেই পরিবেশ নেই। গাছপালা কেটে ফেলায় এবং ফসলি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাখির খাদ্য ও আবাসের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই চড়ুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শহর মুখী হচ্ছে।

পুলিশের অসাদাচরনের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
 শিশু রুকাইয়া রহমান আনহাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন
নীলফামারীর চিলাহাটিতে পেকিন হাঁস  পালন বিষয়ক খামার দিবস অনুষ্ঠিত