ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে গভীর রাতে দুইপক্ষের সংঘর্ষের কবলে পড়ে সিদ্দিক মোল্লা নামে ( ৮০) বছরের বৃদ্ধ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাদের। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাত তিনটার দিকে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সোনাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিদ্দিক মোল্লা সোনাতলা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৭ মে ইউপি সদস্য সালামের মেয়ে শাহিনুর বেগম পালিয়ে বিয়ে করে একই গ্রামের সাইফুল মিয়াকে। কিন্তু শাহিনুরের পিতা সালাম এ বিয়ে মেনে নেয়নি। সম্পর্কে সাইফুল ও শাহিনুর চাচা-ভাতিজি। বিয়ের কয়েকমাস পর পরিবারিক চাপে সাইফুলকে ডিভোর্স দেয় শাহিনুল। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে শাহিনুরের পিতাকে মারধর করে সাইফুল। এ ঘটনার জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এর ফলে সালাম নাসিরনগর থানায় একটি মামলাও করেন। এই মামলার আসামি ধরতে যায় মঙ্গলবার (৪) নভেম্বর গভীর রাত। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রতিপক্ষের আঘাতে আহত হয় সিদ্দিক মোল্লা। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পর সাইফুলের বাড়িতে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছার পর সালামের বাড়িতে চালানো হয় হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট।
উভয়পক্ষের সংঘর্ষে সালামের পক্ষের আহত হয় সাব্বির মিয়া, রহিম মিয়া, মিজন মিয়া, সবুজ মিয়, অবিদ মিয়া, খলিল মিয়া, জামাল মিয়া, সাহাজুল মিয়া, মামুন মিয়া, তফাজ্জল মিয়া, নায়েম মিয়া, নাজমুল মিয়া, তালিম মিয়া, শারমীন বেগম ও রাফিয়া বেগম। সাইফুলের পক্ষের আহতরা হলেন আক্কল আলী, সাইফুল ও সফিক মিয়া। অন্য আহতদের নাম জানা যায়নি।
চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাহির হোসেন বলেন, সোনাতলা গ্রামটি চরের মধ্যে। সালামের করা একটি মামলায় আমরা আসামি ধরতে যাই। সেখানে এক পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের লোকদের উপর হামলা করে। প্রায় প্রায় দুই ঘন্টা চলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ।
সাইফুল মিয়া বলেন, প্রেম করে সালামের মেয়েকে বিয়ে করি। বিয়ের কিছুদিন পর সালাম তার মেয়েকে জোর করে ডিভোর্স দেওয়ায়। এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে থানায় ইয়াবা কারবারি হিসেবে মিথ্যা মামলা করে। এই মামলার আমাদের ধরতে আসে পুলিশ। তাদের নিয়ে আসা পুলিশের সামনে আমার দাদাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সালাম মিয়া বলেন, সাইফুল ও তার পরিবারের লোকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসার প্রতিবাদ করায় আমার মেয়ের নামে বিয়ের মিথ্যা কাবিন বানিয়ে সামাজিক ভাবে আমাকে সম্মানহানী করেছে। আমাকে কয়েকবার মারধরও করা হয়েছে। সেই ঘটনায় থানায় মামলা করি। রাতে আসামি ধরতে গেলে পালাতে গিয়ে আহত হয় সিদ্দিক মোল্লা। নৌকা দিয়ে নাসিরনগর আনার সময় নিজেরা গলা টিপে হত্যা করে তাকে। আর সেই হত্যার দায় চাপাচ্ছে আমাদের উপর।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা দীর্ঘদিনের। সংঘর্ষ ও এক বৃদ্ধের মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে।