আগামীকাল (৫ নভেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শুধু মার্কিনীদেরই নয়, গোটা বিশ্বের রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে এ নির্বাচনের ওপর। তাইতো বিশ্ববাসীর নজর এখন যুক্তরাজ্যের দিকে। এবারের নির্বাচন ঘিরে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস দুজনই দাঁড়িয়ে আছেন ইতিহাসের সামনে। ভোটব্যাংক নিজের দিকে টেনে নেওয়ার লক্ষ্যে সোমবার (৪ নভেম্বর) শেষদিনের প্রচারণায় নামছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।
বিভিন্ন জরিপের তথ্য বলছে, সমর্থনের বিচারে এখন পর্যন্ত সমানে সমান ট্রাম্প-কমলা। তাই শেষ দিনের প্রচারণার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা হলেও বাড়ানোর চেষ্টায় নামবেন এ দুই প্রার্থী।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (৪ নভেম্বর) শেষ দিনের প্রচারনায় পেনসিলভেনিয়ার দিকে যাচ্ছে কমলা হ্যারিস। শেষদিনটি পেনসিলভানিয়ার সুইং স্টেটে একাধিক সমাবেশ করবেন তিনি। ইউনিভিশন ও ইউগভ নামক দুটি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, পেনসিলভানিয়ার ৬০ শতাংশেরও বেশি লাতিন ভোটার এবারের নির্বাচনে হ্যারিসকে সমর্থন করার কথা ভাবছেন।
এদিন রাতে ফিলাডেলফিয়ায় একটি গেট আউট দ্য ভোট ইভেন্টে ডেমোক্রেট পার্টির কাণ্ডরির সঙ্গে যোগ দেবেন লেডি গাগা, রিকি মার্টিন, জাস্ট ব্লেজ এবং অপরাহ উইনফ্রে সহ বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটি।
সোমবার পিটসবার্গেও যাবেন হ্যারিস। তার সঙ্গে প্রচারণা চালাবেন ডি-নাইস, ক্যাটি পেরি এবং আন্দ্রা ডে। ১৯টি ইলেক্টোরাল ভোট আছে এখানে। হোয়াইট হাউসের মসনদ দখলের দৌড়ে পিটসবার্গকে দেখা হয়ে থাকে টিপিং পয়েন্ট হিসেবে।
অন্যদিকে শেষ মুহূর্তের প্রচারণার জন্য উত্তর ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া এবং মিশিগানে ফিরে এসেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। রিডিং, ফিলাডেলফিয়ার পশ্চিমে এবং পিটসবার্গে ইভেন্টের জন্য পেনসিলভানিয়া ভ্রমণের আগে সোমবার সকালে উত্তর ক্যারোলিনায় একটি সমাবেশ করবেন তিনি।
পরবর্তীতে মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যাপিডসে একটি সমাবেশের মাধ্যমে দিনটি শেষ করবেন ট্রাম্প। এখানে শেষ বক্তব্যে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইবেন তিনি।
২০১৬ এবং ২০২০ দুবারই নর্থ ক্যারোলিনায় জিতেছিলেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে জিততে অনুমিতভাবেই আবারও এ সুইং স্টেটটিতে জয় নিশ্চিতের জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
এর আগে রোববার (৩ নভেম্বর) শক্তিশালী স্যুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত মিশিগানে আরব আমেরিকানদের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন কমলা। আর ট্রাম্প গিয়েছিলেন আরেক সুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়ায়। সেখানে সমাবেশে নির্বাচন ঘিরে ভুয়া সংবাদ সম্পর্কে সতর্ক করেন তিনি।
এদিন মিশিগানের একটি ঐতিহাসিক কৃষ্ণাঙ্গ চার্চেও গিয়েছিলেন কমলা। ডেট্রয়েটের গ্রেটার ইমানুয়েল ইনস্টিটিউশনাল চার্চ অব গড ইন ক্রাইস্ট-এর প্যারিশনারদের তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমরা আমাদের জাতির ভাগ্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করব। সেজন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই শুধু প্রার্থনা করা যথেষ্ট নয়, শুধু কথা বলাও যথেষ্ট নয়।
পরে মিশিগানের ইস্ট ল্যানসিংয়ে একটি সমাবেশে প্রায় ২ লাখ আরব আমেরিকানদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি যুদ্ধে বেসামরিক হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কমলা বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি গাজার যুদ্ধ শেষ করতে আমার সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব।
এ সময় গাজা ও লেবাননে হাজার হাজার বেসামরিক মৃত্যু ও লাখো মানুষের স্থানচ্যুতির জন্য ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন কমলা।
অন্যদিকে শেষদিন তিনটি সমাবেশ করেন ট্রাম্প। প্রথম সমাবেশে হ্যারিসের পক্ষে অগ্রগতি দেখানোয় জরিপগুলোর সমালোচনা করেন তিনি। ডেমোক্র্যাটদের ‘শয়তানি দল’ বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহাস করেন এবং আপেলের উচ্চমূল্যের বিষয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া ডেমোক্র্যাট্রদের সমর্থন দেওয়ার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনাও করেন তিনি।
জুলাইয়ে এই পেনসিলভেনিয়ার বাটলারেই সমাবেশকালে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন ট্রাম্প। রোববার প্রচারণার শেষদিনে সমর্থকদের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, তার চারপাশে বুলেটপ্রুফ কাচের ব্যবস্থায় ফাঁক ছিল। সংবাদমাধ্যমগুলোকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে আবারও গুলি করা হতে পারে। আর সেই গুলি আসতে পারে ভুয়া সংবাদের মাধ্যমে। তবে, আমি এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু মনে করবো না।’
পরে নর্থ ক্যারোলিনার কিন্সটন এবং জর্জিয়ার ম্যাকনে গিয়েও ভাষণ দেন ট্রাম্প। সমাবেশে তিনি গত সপ্তাহের চাকরির প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেন। বর্তমান সরকারের সমালোচনা বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থনীতি গত মাসে মাত্র ১২ হাজার চাকরি তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনটি প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘অবক্ষয়িত জাতি’। এ অবস্থা জারি থাকলে ১৯২৯ সালের মহামন্দার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি!