করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্রান্তিকালে মানুষ যখন চাকরি-বাকরি হারিয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে ঠিক তখন চাল, তেল ও পেঁয়াজসহ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। দামের এই নাগাল টানতে হলে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে তদারকিও।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের কেজিতে গড়ে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। তেলের লিটারেও বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা।
তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির দৈনিক বাজার দরের তথ্যেও এসব পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র দেখা গেছে।
সংস্থাটি বলছে, বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের কেজি ৫৫ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪ থেকে ৬০ টাকা। মাঝারি (পায়জাম ও লতা) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায়, যা ছিল ৪৬ থেকে ৫৩ টাকা।
তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নিম্নবিত্তদের খাদ্য হিসেবে পরিচিত মোটা চালের দাম। এই চালের (স্বর্ণ ও চায়না ইরি) কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৪ থেকে ৫০ টাকা।
চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা সাইফুল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দাম বেঁধে দিলেই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। এর জন্য দরকার সরবরাহ বাড়ানো। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রী আমদানি করে চাল সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেননি। তিনি মিল গেটে চালের দর বেঁধে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমদানি করতে হবে। নতুবা আগামী সপ্তাহে দাম আরো বাড়তে পারে। কারণ মজুদ চালের পরিমাণ শেষের দিকে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর চালকল মালিক, পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার চালের দর নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, মিলগেটে পাইকারি প্রতি কেজি উৎকৃষ্টমানের মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা এবং মাঝারি মানের মিনিকেট চাল ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হবে।
বাজারে চালের পাশাপাশি বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। এই পেঁয়াজের বর্তমান দর ৯০ থেকে ১১০ টাকা। কিন্তু ৬/৭ দিন আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে আগের মতই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা দুলাল আহমেদ জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে না। তাই দাম বাড়ছে। প্রতিদিনই কেজিতে ৩/৪ টাকা করে বাড়ছে। তবে দেশিটা আগের দামেই রয়েছে। পেঁয়াজ আমদানি না হলে গত বছরের মত পেঁয়াজ মানুষকে ভোগাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বাজারে এখন সয়াবিন তেল প্রতি লিটার (লুজ) ৯২ থেকে ৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৯০ থেকে ৯৩ টাকা।
সয়াবিন তেল প্রতি ৫ লিটারের (বোতল) দাম রাখা হচ্ছে ৪৭০ থেকে ৫২০ টাকা, গত সপ্তাহে এই দর ছিল ৪৬০ থেকে ৫১৫ টাকার মধ্যে।
এছাড়া গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ৮৪ টাকায় বিক্রি হওয়া পাম ওয়েল (লুজ) এখন বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৪ টাকা। আর পাম ওয়েল (সুপার) প্রতি লিটারের দাম ৮৬ থেকে ৯০ টাকা, যা আগে ছিল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা।
এছাড়াও কাঁচা সবজি বিক্রি হচ্ছে অস্বাভাবিক দরে। ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো ধরনের সবজি।