ঢাকা বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, কর্মহীন প্রায় ২ লক্ষাধিক জেলে
  • ভোলা জেলা সংবাদদাতা:
  • ২০২৪-১০-৩০ ০৬:১৮:৫৩

১২ অক্টোবর  মধ্যরাত থেকে ভোলার মেঘনা তেতুলিয়া মাছ স্বীকারের ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এর আওতায় থাকছে  মেঘনা-তেতুঁলিয়ার ১৯০ কিলোমিটার এলাকা। এতে আগামী ২২ দিন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ভোলার ৭ উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক জেলে। তারমধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার। বাকি ৩০ হাজারের বেশি জেলে এই দিনগুলো কীভাবে পার করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পরেছে জেলেরা।


নিষেধাজ্ঞার সময়ে ঋণের কিস্তি বন্ধ ও অভিযানের প্রথম সপ্তাহে সরকারি খাদ্য সহায়তার দাবি জানিয়েছেন ভোলার জেলেরা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে শনিবার ১২/১০/২৪ তারিখ রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে ৩ নভেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ, পরিবহণ, ও বিনিময় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আর এতেই বিগত দিনের ধার-দেনা ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও সংসার চালানো নিয়ে ভোলার জেলেদের মাঝে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।

 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় ২ লাখের বেশি জেলে আছে। এর বিপরীতে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল এসেছে ১ লাখ ৪০ হাজার জেলের জন্য। কিন্তু নিবন্ধিত জেলের সংখ্যাই ১ লাখ ৬৮ হাজার। এতে এ বছর সরকারি প্রণোদনা পাবেন না অন্তত ২৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে। এছাড়া প্রতি বছর ৩০ হাজার অনিবন্ধিত জেলে থাকেন সরকারি প্রণোদনার বাইরে।
সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার নাছির মাঝি,ইলিশা চডার মাথা, ভেদুরিয়া পাকার মাথা, ভোলার খালগোড়া, তুলাতুলি বাজার  ও দৌলতখান উপজেলার চরপাতার খালের মাতা,লালমোহন বাতিরখাল,বুড়ির দোন,ফরাজঞ্জ সাতানী,খাল গোরা,  এলাকা মাছের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে ইলিশ শিকারে সরকারের আরোপিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে প্রায় জেলে ও ট্রলার মালিকরা তাদের মাছ ধরার সরঞ্জামাদি তীরে উঠিয়ে রেখেছেন।

 

দৌলতখান,লালমোহন, তজুমুদ্দিন ও চরফ্যাশন  উপজেলার গুপ্তগঞ্জ মাছঘাট এলাকার অনোামক  মাঝিদের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, নদীতে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সুবিধার্থে সরকার ২২ দিনের অভিযান দিছে। আমরা সরকারের আইন মাইন্না (মেনে) জাল-সাভার তরে  উঠাইছি। অভিযান শেষ না হইতে আর গাঙ্গে নামুম না ।কিন্তু আমরা যাতে সঠিক সময়ে সরকারি প্রণোদনা / সুযোগ পাই তার ব্যাবস্থা সেন সরকার সঠিক সময়ে  করে। নচেত আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। তবে মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও নেয়া হয়েছে শক্ত পদক্ষেপ।


তবে অভিযোগ আছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মৎস্য বিভাগের গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন স্থানে নদীতে চলে মা ইলিশ শিকার। এটি ইলিশ সম্পদের জন্য হুমকি বলে মনে করেন জেলেরা।


একাধিক জেলেরা  জানান, আমরা সাধারণ জেলেরা অভিযান মানলেও ক্ষমতাধরদের কাছে অভিযান একটি ছেলেখেলা। যত আইন আছে সব আমাদের মত গরিব জেলেদের জন্যেই। তাদের জন্য কিছুই না। তারা ঠিকই প্রতি বছর অভিযানের মধ্যে মাছ ধরে। আমরা চাই কঠোরভাবে অভিযান চালানো হোক যাতে কোনো জেলে নদীতে নেমে মা ইলিশ ধরতে না পারেন।


ভোলার খাল মৎস্যঘাট এলাকার জেলে মো.হাদিস মাঝি বলেন, নদীতে এ বছর কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাইনি। আড়তদার থেকে দাদন লইছি, পরে আবার সমিতি (এনজিও) থেকে ৯০ হাজার টাকা ঋণ নিছি। আশা ছিল নদীতে বেশি মাছ পাইলে অভিযানের আগেই আড়তদারের দেনা ও ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু নদীতে আশা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ার কারণে দেনা শোধ করতে পারিনি।


তিনি আরও জানান, অভিযানে আড়তদাররা দেনা শোধ করতে চাপ না দিলেও এনজিওর লোকজন কিস্তির জন্য ঘর ছাড়বে না। সরকারের কাছে দাবি জানাই অভিযানে সমিতির কিস্তি যেন বন্ধ করে। এতে কিছুটা নিশ্চিতে থাকতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।


অভিযোগ উঠেছে, অভিযানে ভোলার প্রকৃত জেলেরা সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল ঠিকমতো পান না। কিছু জেলে চাল পেলেও তার মধ্যে আবার ওজনে কারচুপি করা হয়।দলীয় প্রভাবও পরছে ও ক্ষেত্রে। অনেকেরই প্রশ্ন দলীয় লোকজন কার্ড ছাড়াই চাল নিয়ে যায়। এতে সাধারণ জেলেদের অসহায় দিনযাপন করতে হয়।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ এলাকার কয়েকজন জেলে বলেন, অভিযানের মধ্যে সরকার আমাগো  জন্য ২৫ কেজি করে চাল পাঠায়। বিগত দিনে ওই চাল স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানেরা নিজেগো পছন্দের লোকদের দিতেন। প্রকৃত জেলেরা সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে অনেকাংশে  বঞ্চিত হইতাম।আবার কিছু জেলে সরকারি সহায়তার চাল পেলেও ওজনে কম দিতেন তারা।


জেলেরা আরও বলেন, অন্যদিকে জেলেদের চাল  সময় মতো না দিয়ে কয়েক মাস জমা করে কিছু দেয় কিছু রেখে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময়  চালও দিতেন না তারা। এতে আমরা কর্মহীন জেলেরা অভিযানের মধ্যে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাতে হয়। আমরা চাই এ বছর যেন প্রকৃত জেলেদের সঠিক ওজন এবং অভিযানের প্রথম সপ্তাহে সরকারি সহায়তার চাল যেন আমরা পাই। এটাই আমাদের দাবি।
ভোলার তুলাতুলি মৎস্যঘাটের আড়তদার আলাউদ্দিন জানান, এ বছরে এখনো লাভের মুখ দেখিনি। আজ মধ্যরাত থেকে অভিযান শুরু হবে। তাই আগামী ২২ দিনের জন্য আড়ত বন্ধ থাকবে। আড়ত বন্ধ করার প্রস্তুতি শেষ। অভিযান শেষ হলে ফের আড়ত চালু করবো।


ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, অভিযান সফল করার লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা সভা করেছি। এ বছর ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযানে কোনো নৌকা যেন নদীতে নামতে না পারে সে জন্য সব খালের মধ্যে মাছ ধরা নৌকা ঢুকিয়ে খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমাদের অভিযান সফল করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ বছর আমাদের উদ্দেশ্য জেল-জরিমানা না, শুধু নদী জেলে মুক্ত রাখা। যেন মা ইলিশ নির্বিঘ্নে নদীতে প্রজনন করতে পারে।


জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, এ বছর ১ লাখ ৪০ হাজার ৯০০ জেলের জন্য সরকারি ভিজিএফ ৩৫২২.১০ মেঃ টঃ চাল পেয়েছি। এতে ভোলার ৭ উপজেলার জেলেদের আমরা অভিযানের প্রথম সপ্তাহে ২৫ কেজি করে চাল দিয়ে দেয়া হয়েছে । কিছু
অসাধু মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, এ বছর যদি কেউ তার নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি কর‍তে চাইলে প্রমাণ পাওয়া মাত্র তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান,১২ তারিখ মধ্যরাত থেকে ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়ায় ইলিশ স্বীকার বন্ধসহ ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। আমরা এ বিষয়ে সব ব্যবস্থা নিয়েছি। নদীতে মোবাইল কোর্টসহ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে  । ইতিমধ্যে অবৈধ ভাবে মা ইলিশ ধরার কারণে  বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জেল, জরিমানা ও ট্রলার জব্দ করে নিলাম দেয়া হয়েছে। এবছর ৩০ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত অভিযান ৫১২ টি, মোবাইল কোর্ট ৯৭ টি,জেল ৮৯ জন জরিমানা করা হয়েছে ৮.৬৫ লক্ষ টাকা,জব্দকৃত  নৌকা ট্রলার নিলাম বাবদ ৩.৪০ লক্ষ আদায়কৃত  টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে  জেলেদের সঠিকভাবে তাদের চাল পেতে পারে সে ব্যাবস্থাও গ্রহন করা হয়েছে।

নীলফামারীতে দশদিন ব্যাপী বৃক্ষমেলা শুরু
কালিয়াকৈরে যুবদলের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল
বান্দরবানে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময় সভা