ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
দিনাজপুরে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহি গরুর হাল
  • সুলতান মাহমুদ , দিনাজপুর :
  • ২০২৪-১০-২৯ ০৮:৫৫:২২

দিনাজপুরে  বিলুপ্তি পথে  গ্রাম বাংলার  ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল। মাঝেমধ্যে কৃষকের কাঁধে লাঙল, জোয়াল আর গরুর নিয়ে জমি চাষ করার জন্য মাঠে যাওয়ার দৃশ্য  অনেক কম দেখা যায় । 


এক সময় লাল-সবুজের বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মাঠে চোখে পড়তো কাক ডাকা ভোরে কৃষকদের গরুর সঙ্গে লাঙ্গল ও জোয়াল কাঁধে নিয়ে জমি চাষ করার জন্য মাঠে যাওয়ার দৃশ্য হর হামেশায় দেখা যেত। কিন্তু এখন আর সেই এই দৃশ্য চোখে পড়ে না। কালের আবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিতে গরু দিয়ে হাল-চাষ করা। 


আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে বিভিন্ন  পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই আর মাঠে  রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গান গেয়ে গরু দিয়ে জমি চাষ করতে দেখা যায় না কৃষকদের। কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল-জোয়াল। চিরায়ত বাংলার রুপের সন্ধান করতে গেলে এই দুই কৃষি উপকরণের কথা যেমন অবশ্যই আসবে, তেমনি আসবে হালের গরুর কথাও। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে হাল চাষের পরিবর্তনে এখন ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করার প্রচলন এসেছে। 


বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কানদেবপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন , মাঝে মধ্যে গরুর হাল দিয়ে অল্প স্বল্প  জমি চাষ করি । কারন অল্প  কিছু জমিতে সবজি চাষ করব ।  তাই গরুর হাল দিয়েই জমি চাষ করলাম । বেশি জমি চাষ করতে আমরা্ও পাওয়ার টিলার দিয়েই জমি  চাষ করি ।  


বিরল উপজেলার  রানীপুকুর ইউনিয়নের হাসিমপুর  গ্রামের  ফজল আলী  জানান, ২০ বছর আগে আমরা গরু দিয়ে হালচাষ করতাম। হাল চাষ করেই সংসার চালাতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে পাওয়ার ট্রিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের প্রচলন আর নেই বললেই চলে। 
দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের ময়নুদ্দীন  বলেন, আগের মত আর কেউ গরু দিয়ে হালচাষ করে না। এখন মাঝে মধ্যে কেউ চাষ করে নিতে আসলে চাষ করে দেই। কি করবো বাপ দাদার পেশা এক বারে ছাড়তেও পারিনা তাই অন্য কাজের ফাঁকে বছরে দুই একবার হাল চাষ করি।


চিরিরবন্দর উপজেলা আউলিয়াপুকুর  ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম  বলেন, অল্প সময়ে বেশি জমি চাষ করতে সক্ষম হওয়ায় জমির মালিকরা এখন পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে নিচ্ছেন। কিন্ত্র এক সময় এই গরুর হাল ছিল একমাত্র মাধ্যাম। আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়াসের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য এসেছে। এছাড়া গোখাদ্যর মূল্য বৃদ্ধি, গোচারন ভূমির সল্পতার কারনে গরু পালন ছেড়ে দিয়েছে অনেকে। এভাবেই নানা কারণে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর হাল।


দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক)  নূর-এ- আলম জানান,কাক ডাকা  ভোর বেলায় এক সময় আমাদের কৃষকেরা বাড়ী থেকে লাঙ্গল  জোয়াল , ষাড় নিয়ে জমি চাষ করার জন্য মাঠে যেতে । বেলা ১০ বা ১১টা হলেই  হলেই কৃষানীরা  কৃষকের জন্য গামছায় পান্তা ভাত বেধে  মাঠে নিয়ে যেত ।  গরুর হাল মাঠে দাঁড় করিয়ে রেখে মাঠেই বসে কৃষক পান্তা ভাত খেয়ে নিত । এখন আর সেই দৃশ্য আগের মত দেখা যায় না । এটাই ছিল গ্রাম বাংলার  অপরুপ দৃশ্য ।  মাঝে মধ্যে কৃষক কাঁধে লাঙ্গল আর জোয়াল  নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে দেখা যায় । 

পুলিশের অসাদাচরনের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
 শিশু রুকাইয়া রহমান আনহাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন
নীলফামারীর চিলাহাটিতে পেকিন হাঁস  পালন বিষয়ক খামার দিবস অনুষ্ঠিত