প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্লাস্টিক বিনিময়ে নিত্য খাদ্যপণ্য বিতরণ করছে বিদ্যানন্দ প্রতিষ্ঠান।আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় দিনাজপুর শহরের জোগেন বাবুর মাঠে এই কাযক্রম শুরু হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এর আর্থিক সহায়তায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন চালু করেছে এউ “প্লাস্টিক বিনিময় স্টোর।" যেখানে প্রান্তিক মানুষ কুড়ানো বা জমানো প্লাস্টিক জমা দিলে পাবেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। প্রতিকেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে প্রতিকেজি চাল,আটা,লবন পাচ্ছেন।
এছাড়াও প্লাস্টিকের বিনিময়ে মাছ,মুরগি,ডিম,ডাল,তেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে টিশার্ট সহ পরিধানের পোষাকেও মিলছে এই প্লাস্টিকের বিনিময়ে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী রানা আহমেদ বলেন” প্লাস্টিক দূষনের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এটি সরকারের একার পক্ষে রোধ করা একেবারেই অসম্ভব। এই দূষন কমাতে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতেই আমরা সারাদেশে প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর চালু করছি।এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে আমরা অবহিত করেছি। আশা করছি এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্বন্ধে আমরা জনগনকে ধারনা দিতে পারব ও প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের এই আইডিয়া বাস্তবায়নে সরকারও এগিয়ে আসবে।
সরেজমিনে দেখা যায় জোগেন বাবুর মাঠে ৩০০ প্রান্তিক পরিবার তাঁদের কুড়ানো প্লাস্টিক নিয়ে এসেছে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে। তারা বাজার মুল্যের চেয়েও দ্বিগুন দামে প্লাস্টিক বিনিময় করে তাঁদের প্রয়োজনীয় পণ্য বাছাই করে ক্রয় করছেন। এছাড়াও স্কুলের শিক্ষারথীরাও কুড়ানো প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে পাচ্ছে শিক্ষা উপকরণ।
প্রসঙ্গত,২০২২ সালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য একটি উদ্যোগ গ্রহন করে যার নাম “প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর”। যেখানে মানুষ তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকপণ্যের খালি পাত্র, বোতল বা পলিথিন এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারেন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এতে স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা যেমন পূরণ হয়েছে, ঠিক তেমনই কমেছে পরিবেশ দূষণ! স্থানীয় অধিবাসীরা নিজেরাই সমুদ্র সৈকত থেকে কুড়িয়ে প্লাস্টিক বিদ্যানন্দের স্টোরে জমা দিয়ে নিত্যপণ্য নিয়ে যান।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে এই প্রজেক্টের অভূতপূর্ব সফলতার প্রেক্ষিতে আমরা এবছর দেশের ৬৪ টি জেলায় “প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর” স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি।
প্লাস্টিক দূষণ একটি ব্যাপক পরিবেশগত সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্র, মানব স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশে এ চ্যালেঞ্জটি বর্তমানে পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে, যা শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন। দেশে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নদী, খাল এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। থ্রি আর কৌশল তথা রিডিউস, রিইউজ ও রিসাইকেল বা ব্যবহার হ্রাস, বারবার ব্যবহার ও নতুন করে অন্য কিছু তৈরি করার কৌশল অবলম্বন করে প্লাস্টিকের চক্রাকার ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করা সম্ভব।
সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অসংখ্য তৃণমূল আন্দোলন এবং সামাজিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং সুশীল সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প প্রচারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।