দিনাজপুরের দশমাইলে কাচা কলার হাট জমজমাট ভাবে জমে উঠেছে । প্রতিদিন ২৫/৩০ টি করে কাচা কলার ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে । এতে করে এই কার্তিক মাসে অবসর সময়ে কর্মের সুযোগ হয়েছে শতাধিক শ্রমিকের ।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার উৎপাদিত সাগর কলার খ্যাতি দেশজুড়ে। শুধু সাগর কলা নয়; সবরি, সুন্দরী (মালভোগ), চিনি চম্পা কলারও চাষ হয় এই এলাকায়। আর কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় কলার হাট। এই হাটে এখন চাষি-ব্যবসায়ী ও পাইকাররা খুবই ব্যস্ততা।
দশমাইল কাচা কলার হাটে প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৮টা জমজমাট বেচা বিক্রি হয় । চাষী , ফড়েয়া, পাইকার আর ব্যাপারীদের হাক ডাকে কাচা কলার হাটে দম ফেলার সময় থাকেনা । সকাল ১০ টার পর কলার কাঁদি ট্রাকে লোড হতে থাকে । দুপুর ২ টার পর থেকে ট্রাক বোঝাই কাচা কলার ট্রাক দশমাইল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাত্রা শুরু করে । চলতি বাংলা কার্তিক মাসের শেষের দিকে এই কাচা কলার বেচা বিক্রি চলবে ।
কলার হাটে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় চাষি-ব্যবসায়ী ও পাইকারদের। মাঠজুড়ে সারি সারি সাজানো কলার কাঁদি। স্থানীয়ভাবে কলার কাঁদিকে কেউ বলে কাইন, ঘাউর, ঘের, পীর। প্রতিটি কলার কাঁদি বিক্রি হয় ৪০০-৪৫০ টাকা দরে। ব্যাপারীরা জানান, গেলবার প্রতিটি কলার কাঁদি কিনেছি ৩০০/৩৫০ টাকা দরে। সে হিসাবে এবার কাঁদি প্রতি দম ১০০ টাকা বেড়েছে।
মূলত কলা চাষের উপযোগী উঁচু জমি থাকায় কাহারোলে এই ফলের উৎপাদন বেশি। এ ছাড়া আবাদে পরিশ্রম কম এবং ন্যায্য দাম পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণে কৃষকেরা ঝুঁকছেন কলা চাষে। এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। উপজেলার সব কটি ইউনিয়নেই কলা চাষ হয়। ৬০ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ কলা চাষ হয় বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলা। শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত ফল তোলার সময়।
এই সময় কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় কলার হাট। ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ব্যাপারীরা কলা কিনতে আসেন এখানে। ভোর পাঁচটা থেকে ভ্যানে করে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনতে শুরু করেন চাষি ও স্থানীয় কলা ব্যবসায়ীরা। এই হাটে স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী আছেন দেড় শতাধিক। হাটের বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীদের সঙ্গে চলে দর-কষাকষি। কেনাবেচা শেষে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে কলা তোলা হয়।
বীরগঞ্জ উপজেলার কলাচাষী একরামুল ইসলাম বলেন, ‘কলা চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। গেলবার ২০০ গাছ দিয়ে বাগান শুরু করি। এবার সেখানে ৫০০ গাছের বাগান করেছি। বাগানে মোট খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। প্রায় ২ লাখ টাকার কলা বিক্রির আশা করছি।’ তিনি জানান, কলার বাগানে যে খরচ হয়েছে, বাগানের ভেতরে বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ থেকেই সেটা উঠে এসেছে।
কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুর হামিদ বলেন, কলা বিক্রি করতে হাঁটে আসতে হয় না। ফড়েয়ারা আগেই টাকা দিয়ে দেন। হাঁটে আনলে খাজনা দেওয়া, পরিবহন খরচসহ পড়তা করা যায় না। তাই ফড়েয়া ব্যবসায়ীরা জমি থেকে কেটে নেয় । বিক্রির ঝামেলা থাকে না। তিনি জানালেন এবার, ৪০০ কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন তিনি।
শ্রমিক আব্দুল মোমেন বলেন , আমরা ১০ জনের একটা দলে কাজ করছি । কাচা কলার কাঁদি ট্রাকে লোড করছি । এতে করে প্রতিদিন আমাদের ৭ শত থেকে ১ হাজার আয় করি । এই দশ মাইলের কাচা কলার হাট আমাদের জন্য আর্শীবাদ ।
কলার পাইকার মকলেছুর রহমান, বলেন প্রতি বছর আমরা এই দশমাইল থেকে কলা ক্রয় করে ঢাকায় পাঠাই । এখানে নিরাপত্তার সাথে কলার ব্যবসা করছি । আমি আজ তিন ট্রাক কলা ঢাকায় পাঠিয়েছি । তবে এ বছর চাষীরা কলায় বেশি লাভভান হচ্ছেন । কারন চাহিদার তুলনায় যোগান কম ।
ঢাকার কলার ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকেই কলার জমজমাট কলার বাজার বসে যায় । এতে করে সকালেই কলা কেনার জন্য পাইকার দের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় । তাই পছন্দের মত ভাল কাচা কলার কাঁদি ক্রয় করা যায় । ভাল কলার দাম একটি বেশি ।
হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এই হাটে। শতাধিক ব্যাপারী কলা কিনতে আসেন। প্রতিদিন ২৫-৩০টির বেশি ট্রাকে কলা নেওয়া হয়। একটি ট্রাকে সর্বনিম্ন ৮০০-৯০০ কাঁদি কলা ধরে। শতাধিক শ্রমিক শুধু ট্রাকে কলা তোলার কাজ করেন। তবে গত বছরের চেয়ে এবার কলার আমদানি কম।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় প্রায় ৩ শত ৬০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কলার হাট দশমাইল হাট। উপজেলার উৎপাদিত সাগর কলা ঘ্রাণে ও স্বাদে অনন্য হওয়ায় এবং মৌসুমের শুরুতে এবার চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বেশি। কলা চাষে খরচ কম। ঝুঁকি ও রোগবালাইও কম। তাই কলা চাষ জনপ্রিয় ।