লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের হাতীবান্ধা মেডিকেল মোড় এলাকায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালকদের নিয়ন্ত্রণ করতো অটোশ্রমিক লীগ নামে একটি সিন্ডিকেট। দইখাওয়া মোড় কিংবা মেডিকেল মোড় এলাকায় ইজিবাইক দাড় করিয়ে যাত্রী ওঠালেই ওই সিন্ডিকেটকে ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো চালকদের। আর এভাবেই বছর পর বছর অবৈধ ভাবে ইজিবাইক চালকের ঘাম ঝরানো টাকা হাতিয়ে নিতো সিন্ডিকেটটি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর কাউকে চাঁদা দিতে হয় না বলে জানিয়েছেন ইজিবাইক চালকরা৷
ইজিবাইক চালকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অটোশ্রমিক লীগ নামে একটি সংগঠন খুলেন একটি সিন্ডিকেট। প্রতিটি ইজিবাইক চালকদের কাছে থেকে দৈনিক ১০ টাকা করে চাঁদা নিতেন ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা। তবে সিন্ডিকেটের নেতারা অটোচালকের বিপদ ও দূর্ঘটনায় পাশে দাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের করা হতো শারীরিক নির্যাতন। কথিত ওই সংগঠনে কেউ সদস্য না হলে দইখাওয়া মোড় কিংবা মেডিকেল মোড়ে এলাকা থেকে তার ইজিবাইকে যাত্রী উঠাতে পারতেন না। পাশাপাশি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইজিবাইকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাংচুর করা হতো৷
অভিযোগ রয়েছে, কোনো প্রকার বৈধ অনুমতি ছাড়াই প্রশাসনের চোখে বৃদ্ধা-আঙ্গুল দেখিয়ে চাঁদা তুলছিলো সিন্ডিকেটটি। চাঁদা নিতে চালকদের দেওয়া হতো না কোনো প্রকার রশিদ। শুধুমাত্র দলীয় প্রভাব দেখিয়ে চালকদের কাছ থেকে দৈনিক চাঁদা নেওয়া হতো৷ সেই দাপটের কাছে যেন হার মেনে এসব দেখেও না দেখার ভান করত প্রশাসন।
তবে গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণ-অভ্যুত্থানে পর সেই সিন্ডিকেটের আর দেখা মেলেনি৷ জানা গেছে, অটোশ্রমিক লীগ নামে ওই কথিত সংগঠন মুলত নিয়ন্ত্রণ করত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। চাঁদার টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হতো তাদের হাতেই। কিন্তু দেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আত্মগোপনে যান ওই নেতারা। যার ফলে দেখা পাওয়া যাচ্ছে না ওই সিন্ডিকেটের। তাই এখন আর কাউকে চাঁদা দিতে হয় না তাদের। এতে খুশি ইজিবাইক চালকরা৷
ইজিবাইক চালক রাশেদ আলম বলেন, বহু বছর ধরে আমাদের কষ্টের টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে গাড়ির যন্ত্রাংশে ভাংচুর চালিয়েছে৷ ছাত্রদের আন্দোলনের পর এখন আর কেউ চাঁদা নিতে আসে না।
আরেক ইজিবাইক চালক মনজুরুল ইসলাম বলেন, আগে প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো৷ চাঁদা দিতে অস্বীকার করেছিলাম সেজন্য আমার সাথে ঝামেলাও হয়েছিল। এখন ভাড়ায় যা উর্পাজন করি সব আমার। কাউকে কোনো টাকা দিতে হয়।
হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন নবী বলেন, আমি থানায় যোগদানের পর থেকে সকল প্রকার চাঁদাবাজির বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। এরপরও যদি কেউ চাঁদাবাজির করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।