বাংলাদেশি সংস্থা গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে প্রাণীদেহে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। অক্টোবরেই মানবদেহে করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য সরকারের অনুমোদন চাইবে গ্লোব বায়োটেক।
শিগগিরই তারা প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রতিবেদন কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিআরও) কাছে জমা দেবে। এরপর ভ্যাকসিনটি মানুষের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা পরীক্ষা করতে মানবদেহে ট্রায়ালের প্রথম পর্যায় পরিচালনার জন্য অনুমতি চাওয়া হবে।
প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রথমে খরগোশ ও পরে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, biorxive.org— বায়ো আর্কাইভে প্রকাশিত হয়েছে। বায়ো আর্কাইভকে বলা হয় ‘প্রি-প্রিন্ট সার্ভার’। জীববিজ্ঞান বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো গবেষণার ফল দ্রুত তুলে ধরতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ‘প্রি-প্রিন্ট সার্ভার’ ব্যবহার করে থাকেন।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের গবেষণা ও বিকাশের ইনচার্জ আসিফ মাহমুদ জানান, সংস্থাটি আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে এই বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করবে।
আসিফ আরও বলেন, ‘যদি সবকিছু ঠিকঠাক হয়, তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমরা আশা করি, জানুয়ারির মধ্যেই মানবদেহে ট্রায়ালের সবগুলো পরীক্ষা (তিনটি পর্যায়ই) শেষ হবে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) পরিচালক ডা. মাহমুদ উজ জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আবেদন পাওয়ার পরই তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফারমাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, গ্লোব বায়োটেককে বিএমআরসির কাছে আবেদন করতে হবে। ন্যাশনাল রিসার্চ এথিকস কমিটি প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করবে এবং এরপরে এটিকে মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি দেবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ক্লিনিক্যাল বা হিউম্যান মডেলিং ট্রায়াল তিনটি পর্যায়ে করা হয়। প্রথম পর্যায়ে, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ কি না, তা যাচাই করতে একটি ক্ষুদ্র গ্রুপে কয়েকজনের দেহে প্রয়োগ করা হয়। সুরক্ষা ও কার্যকারিতা আরও মূল্যায়নের জন্য দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় একটি বড় গ্রুপে বেশ কয়েকজন মানুষের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাচাই ও ডোজের পরিমাণ নির্ধারণ ক কয়েক হাজার মানুষের দেহে ভ্যাকসিন
প্রয়োগ করে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়।
আসিফ মাহমুদ জানান, প্রতিদিন অনেক মানুষ ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিতে তাদের সংস্থায় ফরম পূরণ করছেন।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরেই মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হবে।’
ট্রায়ালের ফল যাচাই করতে থার্ড পার্টি গ্রুপ হিসেবে একটি সিআরও-ও চূড়ান্ত করেছে গ্লোব বায়োটেক। তাদের সঙ্গে প্রোটোকল ও গাইডলাইন প্রণয়ন নিয়ে কাজ চলছে বলে জানায় সংস্থাটি।
সিআরও’র নাম জানতে চাইলে কর্মকর্তারা জানান, কাজগুলোর চূড়ান্ত হওয়ার পরই তারা নামটি প্রকাশ করবেন।
গত ২ জুলাই একটি সংবাদ সম্মেলনে কোভিড-১৯’র ভ্যাকসিন তৈরির ঘোষণা দেয় গ্লোব বায়োটেক। ওই সম্মেলনে তারা জানান, প্রাণীর ওপরে ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল শেষ করতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ লাগবে। এরপরে প্রাণীদেহে ভ্যাকসিনটি সফল প্রমাণিত হলেই তারা মানবদেহে ট্রায়াল পরিচালনার অনুমতির জন্য আবেদন করবেন।
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০টিরও বেশি গবেষণা চলছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা; মার্কিন সংস্থা মডার্না; জার্মানির বায়োটেক ও মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ফাইজারের যৌথ গবেষণা, চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিক্যাল, সিনোভ্যাক বায়োটেক এবং সিনোফার্ম ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভ্যাকসিন তৈরির অনুমোদন পেয়েছে রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউট। তবে, এর চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনো চলছে।