দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষা বিভাগের র্ঊধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এবং বিরল থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগও করেছেন।
তবে ঘটনার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। উপরন্তু বিধি ভঙ্গ করে ওই শিক্ষককে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
লাঞ্ছিতের শিকার ও অভিযোগকারী ওই শিক্ষা কর্মকর্তার নাম মো. মেনহাজুল ইসলাম। তিনি বিরল উপজেলায় সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
লিখিত অভিযোগ হতে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট উপজেলার ধুকুরঝাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনার জন্য বিরল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুর্শিদা খাতুন তার কক্ষে ডেকে পাঠান মেনহাজুল ইসলামকে। আলোচ্য বিষয়ের চুড়ান্ত মীমাংসাও হয়। কিছুসময় পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলার কাজিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) জুলফিকার আলী, ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজ আল মিনার এবং বিশ্বনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়ার হোসেন। কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই ঘটনাস্থলে মেনহাজুল ইসলামকে দেখতে পেয়ে প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী তার সাথে অশালিন আচরণ ও গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তিন প্রধান শিক্ষকই মেনহাজুলের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ন আচরণ করাসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন।
এ ঘটনার পরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুর্শিদা খাতুনের কাছে মৌখিক অভিযোগ করে ওই তিন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান মেনহাজুল ইসলাম। কিন্তু তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে ঘটনার ২১দিন পরে গত ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেদিনই ওই তিন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশসহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু অভিযোগ দায়ের করার এক মাস অতিবাহিত হলেও কোন এক অজানা কারনে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
যদিও গত ২ সেপ্টেম্বর বীরগঞ্জ উপজেলার মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রেজাউল করিমকে বিদালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারনে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে মাত্র ৯ঘন্টার ব্যবধানে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং ২২দিন পরে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী বলেন, - এটিও স্যার আমাদের সরাসরি কর্মকর্তা আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা সবসময় থাকে এখনো আছে। ধুকুরঝারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিষয় মনোমালিন্য হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মেনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘একজন শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। সেখানে আমার র্ঊধতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। অথচ ওই শিক্ষকদের রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় আমার জেলা স্যার কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না। অজ্ঞাত কারনে আজ পর্যন্ত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশনাও দেননি। বিষয়টি নিয়ে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এ বিষয়ে বিরল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুর্শিদা খাতুন এর ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নাই। তাই তার এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
খোজ নিয়ে জানা যায়, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেন। প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার নিকটাত্মীয় হওয়ায় এবং নজরুল ইসলাম নিজেও আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য হওয়ায় উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায় জুলফিকারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তিনি। উপরন্তু বিধিমালা ভংগ করে জুলফিকাল আলীকে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত করেছেন। জুলফিকার আলী চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক হলেও তালিকায় চলতি দায়িত্ব কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের সাথে বিভিন্ন সময় অশালিন আচরণ করে যাচ্ছেন। বিষয়গুলোর প্রতিবাদ করতে গেলেই হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
অভিযোগ আছে ২০২৪ সালে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে অফিস সহকারিদের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ গ্রহন করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। সেবার চুড়ান্ত প্রার্থীদের নিজ ইউনিয়নের নিকটতম বিদ্যালয়ে পদায়ন করার বিধি থাকলেও বিধি ভঙ্গ করে মহিলা শিক্ষকদের ইউনিয়নের বাইরে পদায়ন আদেশ প্রদান করেন। সেই সময়ে বিষয়টি নিয়ে নবনিযুক্ত শিক্ষকরা বিক্ষোভ করলে তাড়াহুড়ো করে অর্থের বিনিময়ে দূরে পদায়নকৃত শিক্ষকদের সংশোধনী আদেশ জারী করেন।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মেনহাজুলের বিষয়টি আমি কথা বলেছি। ঘটনার এতদিন পরে কেন তিনি অভিযোগ করলেন তা জানতে তাকে চিঠি দিয়েছি। সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে। জুলফিকারকে নিয়ম মেনেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক করা হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।