গত চার দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও হাটবাজারে পানি ঢুকে লাখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। বৃষ্টির কারনে বসতবাড়ি হাটবাজার, দোকানপাটে পানি ঢুকেছে ও রাস্তায় হাটু পর্যন্ত পানি উঠেছে । বৃষ্টির কারনে বাঁধের ভেতরের কিছু কিছু এলাকায় অস্থায়ী বন্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এখানকার মানুষ।
সরকারী নিয়ম কানুন না মেনে অপরিকল্পিতভাবে ক্যানেল ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল, ভবন ও বাড়ি ঘর নির্মাণ এ জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোন কাজে আসছেনা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, সুতালড়া, আড়িয়াবো, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, মিয়াবাড়ী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, বিজয় নগর, বলাইখা, উত্তরপাড়া, মিয়াবাড়ি, নামাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, দক্ষিনপাড়া, নাগেরবাগ, ৫নং ক্যানেল, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশকয়েকটি নিচু এলাকায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩’শ হেক্টর জমি নিয়ে অগ্রনী নারায়রগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রনী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১’শ এক কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মান করা হয়। নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভিতরে শুরু হয় জলাবদ্বতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগও।
চার দিনের বৃষ্টিতে দুটি সেচ প্রকল্পের এলাকার কোথাও জমেছে হাটুপানি, কোথাও কোমর পানি জমেছে। পুরো বর্ষা ও টানা বর্ষন শুরু হলে কি হবে- এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে অগ্রণীবাসী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রনীর ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠে অগ্রনী পরিনত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে অগ্রনী এলাকার মানুষের। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে জলাবদ্বতাও। বর্তমানে সেচ প্রকল্প দুটিতে কৃষি জমিতে পানি সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। এসব কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। অগ্রনী সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউজ থেকে বরপা ব্রীজ হয়ে একটি মূল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযোগ হয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, গত কয়েক বছরে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতারা খাল গুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘর-বাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে করে সামান্য বর্ষণ হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতোনাতে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলানোর কারনে খাল গুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে দু’টি প্রকল্পের জনগনের পিছু ছাড়ছে না জলাবদ্ধতা।
রক্তের বন্ধন ফাউন্ডেশনের সভাপতি তুহিন মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারনে গোলাকান্দাইল নতুন বাজারসহ ৫নং চ্যানেল এলাকার সড়ক ডুবে হাটু পানি হয়ে গেছে। পানি ভেঙ্গে এখানকার মানুষ চলাফেরা করছেন। আমরা অনেকে বৃষ্টির কারনে দোকানপাট খুলতে পারছিনা। প্রশাসনের কাছে দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
গোলাকান্দাইল ৫ নং এলাকার কামাল মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টিতে পানি কোমর পর্যন্ত হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। অতি কষ্টে জীবন যাপন করছি। পানি সরানোর ব্যবস্থা দাবি জানান তিনি।
আতলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মমিনুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ ডুবে গেছে। বিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষেও পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় ক্লাস নিতে পারছি না। পানি সরে গেলে পরে ক্লাস শুরু করতে হবে।
গোলাকান্দাইল নুরুল ইসলাম মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বিদ্যালয় এ পানি ঢুকে পড়েছে। প্রায় হাটু ও কোমর পর্যন্ত পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না।
গোলাকান্দাইর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ৫নং ক্যানেল ও নতুন বাজার এলাকাটি। এখানে বিভিন্ন শিল্প কারখানার হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন। জলাবদ্ধতা ঠেকাতে আমরা বৃষ্টির আগেই পানি যাতায়াতের ক্যানেল গুলো পরিষ্কার করেছি। সকাল থেকেই পানি সরানোর কাজ করছি। ক্যানেল পরিষ্কার করা না হলে পানি স্থায়ী রুপ নিতো। এছাড়া বাধের ভেতরের নিচু এলাকা গুলোতে উচু এলাকার পানি এসে জলাব্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র রূপগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছি। যোগদানের পরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এলাকাবাসীর কাছ থেকে জলাব্ধতার বিষয়ে পরিদর্শন করে খোঁজখবর নিয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ চলমান রয়েছে।