আগস্টেও কিছুটা বেড়েছে ব্যাংকের বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণ। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের মাসের তুলনায় আগস্টে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত বছরের একই মাসের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মূলত করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনার ঋণের কারণেই প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সামনের মাসগুলোতে এ প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলে ধারণা তাদের।
দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি খাতের ঋণে বেশ মন্থরগতি চলছে। মহামারি করোনার থাবায় অর্থবছর শেষে তা আরও নিম্নগামী হয়ে পড়ে। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পুরো অর্থবছরে ১৪ দশমিক আট শতাংশ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ খাতে ঋণ বেড়েছিল মাত্র আট দশমিক ৬১ শতাংশ। এটি গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রায় প্রতি মাসেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর পরের মাস আগস্টে তা ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, নভেম্বরে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, মার্চে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও এপ্রিলে আট দশমিক ৮২ শতাংশে নেমে আছে। তবে মেতে সামান্য বেড়ে হয় আট দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর জুনে সেটি ব্যাপকহারে কমে দাঁড়ায় আট দশমিক ৬১ শতাংশে। তবে প্রণোদনা প্যকেজের ঋণ বিতরণে চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণের কিছুটা গতি আশার চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ এক হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের আগস্টে যা ছিল ১০ লাখ সাত হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে গত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের ক্ষতি পোষাতে সরকার প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর বড় অংশই ঋণ হিসেবে বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। সিএমএসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ হয়েছে প্রায় ৩৮০০ কোটি টাকা। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতার জন্য সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে নতুন করে প্রায় ১২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, কৃষি খাতে চলতি মূলধনের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন এবং নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার তহবিলের একটি অংশ বিতরণ হয়েছে।