প্রিয় ব্যক্তিত্ব অনেকেরই রাজনৈতিক অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের লাশ অ্যাম্বুলেন্স যোগে নিজ নির্বাচনী এলাকা ও নিজ বাড়ি ফুলবাড়ীতে পৌঁছার সাথে সাথেই হাজারো মানুষের ভিড় এক নজর প্রিয় নেতাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য। এরপরই কান্নার রোল পড়ে যায় ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠ জুড়ে। কেউ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেউ উচ্চ স্বরে কান্না করছে প্রিয় এই মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। এই মানুষটি আর এই মাঠে আসবে না এই মনে করেই চিৎকার করে কাঁদছে অনেকেই।
অশ্রু ভেজা চোখে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়েছে সর্বজন শ্রদ্ধীয় সাবেক টানা আট বারের সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী ও দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেনী-পেশার মানুষ ওই নামাজে জানাযায় যোগ দেন। সোমবার সকাল থেকেই ফুলবাড়ী সরকারী কলেজ মাঠে দলে দলে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হতে থাকে।
এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড মীর মো. আল কামাহ্ তমাল এর নেতৃত্বে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রিয় মযার্দা দেয়া হয়।
বেলা সাড়ে ১১ টায় ফুলবাড়ী সরকারী কলেজ মাঠে নামাজে জানাযা পড়ান ফুলবাড়ী দারুসসুন্নাহ সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদত উল্লাহ্। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় তার নিজ গ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের জামগ্রামের রুদ্রানী ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাযা শেষে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে রোবরার রাত ১০টায় ঢাকায় এবং সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় পার্বতীপুর আদর্শ কলেজ মাঠে জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে নেতাকর্মী এবং শুভাকাঙ্খীরা মরহুমের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনেকে আসেন প্রিয় নেতাকে শেষবারের মত একনজর দেখতে। জানাযা নামাজে অংশগ্রহন করেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সমগ্র জেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবং মরহুমের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা।
উল্লেখ্য, রোববার (২৯সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় ঢাকা ল্যাব এইড ক্যান্সার হাসপাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না এলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার ভাগনে এ্যাড. মহিউদ্দিন কাদের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
পরিবারিক সুত্রে জানাগেছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে চিকিৎসা করছিলেন। শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে গত কয়েকদিন আগে তাকে ঢাকা ল্যাব এইড ক্যান্সার হাসপাপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন আইসিইউ তে রাখা হয়। এরপর রোববার রাত ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্ব¡ দিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনে লাগাতার ৮ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। একাধারে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।