রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা গুলোর প্রতিটি মাঠ জুড়ে এখন সবুজের হাতছানি। দিগন্ত জুড়ে যে দিকে তাকায় শুধু সবুজ আর সবুজ। ঋতু শরৎকে বিদায় দিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। জেলার সবকটি উপজেলার প্রতিটি মাঠে জুড়ে এখন সবুজ ধানের শীষে পড়ছে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে হেমন্তের শিশির বিন্দু। যা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
পুবালি বাতাসে অপরুপ সৌন্দর্যে কৃষকের মন মাতিয়ে তুলছে সবুজ পাতার মনকাড়া টেউ। শস্য শ্যামলা, সবুজ বাংলার কৃষি প্রধান দেশের রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার দিগন্ত জুড়ে খোলা মাঠে দুলছে এখন কৃষকের কাঙ্খিত স্বপ্ন। সবার চোখে নজর কাড়ছে আমন ধানের ক্ষেত। ভালো ফলনের আশায় আমন ধান পরিচর্যায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পারকরছেন। প্রতিটি মাঠে এখন আমন ধান পরিচর্যার মহোৎসব। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে ধান পরিচর্যার কার্যক্রম। ধান ক্ষেতগুলো এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
কার্তিক মাসের শুরতেই ধানের গাছ এখন শিশির ভেজা বাতাসে দুলছে। সম্প্রতি মাঠের চারিদিকে এখন সবুজের সমারোহ এদিকে দুর্গাপুর উপজেলার ডিলারদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমান তেল ও সার পাওয়ায় কৃষকরা অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছে।
অপরদিকে পাকা ধান রক্ষায় জমিতে প্রাণান্তর লড়াই করছেন পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের চাষি টুটুল মিয়া। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়ি নিয়ে যাব কি, সব ধান খেয়ে নিচ্ছে বাবুই পাখির দল। জমির আউশ ধান তিন ভাগের একভাগ বাবুই পাখি খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলেছে। টুটুল বলেন, দুমুঠো ভাত খেতে এত লড়াই আর ভালো লাগে না! আউশের শুরুতেই অনাবৃষ্টি, সেচ খরচ, বৃষ্টি কম হওয়া পোকার আক্রমণ, ইঁদুরের হানা, এখন পাখির উপদ্রব। ধান ঘরে নিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। হাজারো বাবুই পাখির দল পাকা ধান খেতে পড়ছে, খাচ্ছে আর নষ্ট করছে। পাখিগুলো মারতে চাই না। তাই পলিথিন ব্যাগ, বোতল, ক্যাসেটের ফিতা টানিয়ে পাখির হাত থেকে ধান রক্ষায় লড়াই করে যাচ্ছি।
আউশ চাষিরা জানান, উপজেলায় এবার কম বৃষ্টি হয়েছে। চাষিরা এবার সেচ দিয়েই আউশ রোপণ করেছেন। এসব জমির ধান এখন আধা পাকা, পাকতে শুরু করেছে কোথাও কোথাও। এদিকে জমিগুলোতে দিনভর ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই, বাবুইসহ নানা জাতের পাখি এসে বসছে, পাখির দল ধান কিছুটা খেয়ে যাচ্ছে, ধানগাছ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্তও করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ ও ৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার সিংগা গ্রামের কৃষক আহাদালী জানান, এবারে চারা রোপনের সময় আমাদের প্রাকৃতিক ভাবে কোন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। এবার আমাদের এলাকায় বন্যার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুুরুপ ফলন ঘরে তোলা সম্ভব।
উপ-সহাকরী কৃষি কর্মকর্তা মকলেছুর রহমান জানান, কৃষকদের ক্ষেতে কি পুতে দেয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে ওই সমস্ত কি তে পাখি বসে জমির ক্ষতিকর পোকা নিধন করতে পারে। সেই সাথে পরিচর্যা করে কম মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করে অধিক ফলনের কলা-কৌশলও কৃষকদের শেখানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ জানান, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকদের কাঙ্খিত ফসল অর্জনে প্রতিটি ব্লক পর্যায়ে ক্যাম্পেইনসহ নানা ধরণের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও মাজড়াপোকা এবং অন্যান্য আবাদ বিনষ্টকারী পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা পাচিং সহ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। ফলে উপজেলার কোথাও মাজড়া পোকা, কারেন্ট পোকার আক্রমণ নেই। তবে এবারো আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।