কম্পিউটারের একটি তার রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মনিটরে দেখে দেখে বলে দেয় রোগী কি কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সাথে সাথে দিয়ে দেয় চিকিৎসা পত্রও। সেই ঔষধও ক্রয় করতে হবে তার দোকানে। রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পত্র ও ঔষধ বিক্রি এক সাথে তিনটি সেবা দিয়ে আসছেন ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ। তার আজব এ রোগ নির্ণয় দেখে অবাক স্বাস্থ্য বিভাগ। এ বিষয়টি গত রোববার আইনশৃঙ্গলা কমিটিতে উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট বাজারে চেম্বার খুলে রোগী দেখেন বেশ কিছু দিন ধরে। তিনি নিজেকে একজন ব্যাচেলর অব আযুর্বেদিক মেডিসিন ও সার্জারী দাবী করে চিকিৎসা পত্রে যেসব ডিগ্রী উল্লেখ করেছেন তা তিনি দেখাতে পারে নাই।
সড়ে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। তার চেম্বারের সামনে বেশ কয়েকজন যুবক সর্তক অবস্থায় রয়েছেন। তাদের দাবী তারা নাকি ডাক্তারের নিরাপত্তা জনিত কারণে আছেন। ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ নামের শেষে যেসব ডিগ্রী উল্লেখ করেছেন সেগুলো বিএএমএস (ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়), এমপিএইচ, এডিএমইউ, সিপি বিএনএমসি। নিজে একজন ব্যাচেলর অব আযুর্বেদিক মেডিসিন ও সার্জারী দাবী করেন। কিন্তু এসব ডিগ্রীর সনদ পত্র দেখতে চাইলে নিজে একজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের এসব দেখার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। অবশ্য পরে তিনি স্বীকার করেন তিনি আসল সাংবাদিক নয়।
ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদরের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা একজন মনায়েম হোসেন। তিনি জানান, তিনি তার পায়ের ব্যথার সমস্যা নিয়ে এক ব্যক্তির মাধ্যমে এসেছেন। ওই ব্যক্তি নিয়মিত এ চেম্বারে রোগী নিয়ে আসেন। ডাক্তার ৫০০ টাকা সেবা ফি নেয়ার বিনিময় কম্পিউটারের একটি তার মনায়েম হোসেনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মনিটরে দেখে দেখে বলে দেয় তার হাটুর হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। ঔষধও লিখে দেয়। যে ঔষধ তার চেম্বারে ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন।
জাবেদা বেওয়া নামে এক বৃদ্ধা জানান। তিনি এ পর্যন্ত দুই বার এসেছে কোমড়ের ব্যাথা নিয়ে। কিন্তু ঔষধ খাওয়ার পর পেটের নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ডাক্তার নুরুজ্জামান আহম্মেদ-র এমন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে গত রোববার জেলা আইনশৃঙ্গলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়। তার এমন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ঈমাম। এ ঘটনা জানার পর পরেই গা-ঢাকা দিয়েছেন ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ।
এ নিয়ে কথা হয় ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদের সাথে। তিনি জানান, সকল নিময় মেনে তিনি রোগী দেখছেন। তবে কম্পিউটারের একটি তার রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মনিটরে দেখে দেখে রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি দাবী করেন তার জনপ্রিয়তা দেখে একটি মহল তার বিরুদ্ধে যড়ষন্ত্র করছেন।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় জানান, ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদের এমন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। জেলা প্রশাসক একটি নিদর্শেনাও দিয়েছেন। আমরা এ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ-র এমন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়টি আইনশৃঙ্গলা কমিটির সভায় আমাদের নজরে এনেছেন সিভিল সার্জন। আমরা এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত দিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।