বন্ধের এক দিন পেরিয়ে গেলেও দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। চীন থেকে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) না আসা পর্যন্ত চালু হচ্ছে না তিনটির একটিও ইউনিট। এতে চরম লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলাবাসী।
দীর্ঘ এক মাস ৬ দিন যান্ত্রিকক্রুটির কারণে বন্ধ থাকার পর শুক্রবার বিকাল শোয়া ৫টায় তিনটি ইউনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছিল তৃতীয় ইউনিটটিতে। ইতোপূর্বে দু'টি ইউনিট বন্ধ থাকলেও সচল হওয়ার দু'দিন পরেই তৃত্বীয় ইউনিটটিও সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ফের যান্ত্রিকক্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
এ ইউনিটতে ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক বিষয়টি মঙ্গলবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ঘনঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলবাদী। দিন-রাতের বেশিভাগ সময়েই হঠাৎ লোডশেডিং ও তাপমাত্রা যেনো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন।
সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জানা যায়, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। চুক্তিভিত্তিক এ ঠিকাদারের মেয়াদ ৫ বছর। আগামী বছর শেষ হবে তাদের চুক্তির মেয়াদ। চুক্তি মোতাবেক উৎপাদন সচল রাখতে মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তা করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বারবার ক্রুটি দেখা দিচ্ছে। সে কারণেই ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন হয় দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প।
২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট থাকায় যেকোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর উৎপাদন কার্যক্রম।
সোমবার চালু হওয়া তৃত্বীয় ইউনিটটির অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হওয়ায় ফের বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সেই সঙ্গে রাত পৌনে ৯টা সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়, ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিটটি। ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও মাত্র ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তাতে। অপর দুই নম্বর ইউনিটটিও ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও সেটিতেও মাত্র ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। তিনটি ইউনিট উৎপাদনের জন্য দৈনিক কয়লার প্রয়োজন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ২ লাখ টন কয়লা। কয়লাখনি থেকে কয়লা সরবরাহ করার ওপর নির্ভর করে চলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এই প্রথম বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটই বন্ধ হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের আট জেলা চরম লোড শেডিংয়ের কবলে পড়েছে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিটি ইউনিটে দুটি করে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) থাকে। সেটি তেল সরবরাহের মাধ্যমে জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) ২০২২ সালের অক্টোবরে বিকল হয়ে যায়। রির্জাভে থাকা অপর অয়েল পাম্পটিও সোমবার বিকল হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় তৃতীয় ইউনিট। বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। তারা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। চীন থেকে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) এলেই চালু হবে ইউনিট।
প্রসঙ্গত: ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির পার্শ্বেই স্থাপিত হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। চীনা কারিগরি সহায়তায় এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়।