নাগেশ্বরীতে খাদ্যগুদামে ধান মজুদ সিন্ডিকেট চক্রের
- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
-
২০২৪-০৯-০৯ ২৩:০৯:৫৯
- Print
কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে ধান ক্রয় করেছেন । 'কৃষক অ্যাপসে' ধান ক্রয়ের নিবন্ধন সাজানো। নির্বাচিতদের তালিকায় কৃষকের নামের সাথে ভোটার আইডির নাম ও মোবাইল নম্বরের নেই মিল। নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্যগুদামে বোরো ধান সংগ্রহে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে 'কৃষক অ্যাপসে' কৃষকরা ধান ক্রয়ের নিবন্ধন করার করা থাকলেও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান এবং খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম 'কৃষক অ্যাপসে' নিজেরাই কৃষক নিবন্ধন করে এবং সিন্ডিকেট চক্রের দিয়ে গুদামে ধান মওজুতের অভিযোগ উঠেছে। নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে (৩১আগস্ট ২৪খ্রিঃ) ধান ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহের ছিল শেষ দিন। সকাল থেকে রাত অবধি পর্যন্ত সিদ্ধ চাল ও ধান সংগ্রহ চলছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিধিবহির্ভূতভাবে ধান ও চাল গুদামে মওজুত করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্যগুদামে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান ২০২৪খ্রিঃ কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ধান বেচাকেনার প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড (কৃষক অ্যাপস) এ কৃষকরা নিবন্ধন করার করা থাকলেও উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির অবহেলা আর অগোচরে নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি অফিসের রায়গঞ্জ ইউনিয়ন দামগ্রাম ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান নাগেশ্বরী কৃষি অফিস কর্তৃক গত বছর বন্যায় কৃষকদের প্রণোদনা বিতরণকালে কৃষকের নামের ভোটার আইডি কার্ড সংরক্ষণ করেন আর এই সংরক্ষিত আইডি কার্ড দিয়ে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের সাথে যোগসাজশ করে কৃষক অ্যাপসে কৃষক নিবন্ধন করে এবং সে টোকেন সিন্ডিকেট চক্রের দিয়ে প্রতি টনে প্রতি স্লিপে ৩হাজার টাকা বিক্রি করে ফায়দা লুটে নেয়। নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের বোরো ধান বরাদ্দ ২হাজার ৪০৪মেক্ট্রিক টন ৮০১জন কৃষকের থেকে সংগ্রহ করবে। কিন্তু উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান এবং খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাগেশ্বরী পৌরসভা ভাসানী বাজারের সাবু হাজি, বাবলু মিয়া, আবুল হোসেন, শুক্কুর আলী, হাফিজুর রহমানসহ আরও কয়কজন চক্রের সাথে প্রতি ৩মেক্ট্রিক টনে ২হাজার ২শত ৫০টাকা ও ১শত বস্তা ধানে ১বস্তা ধান চুক্তিভিত্তিক ধান ক্রয় করছেন। এদিকে বঞ্চিত কৃষকরা। লটারীতে নির্বাচিত অনেক কৃষক জানেন না তাদের নাম ধান দেয়ার তালিকা রয়েছে। নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে (৩১আগস্ট ২৪খ্রিঃ) ধান সংগ্রহের ছিল শেষ দিন। ন্যায্য বিচার চেয়ে ইতিমধ্যে কয়েকজন কৃষক বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের দাবি জানান তারা।
মিলারদের অভিযোগে জানা গেছে, চলতি বছর নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে মিল মালিকদের নিকট থেকে সিদ্ধ চাল প্রতি কেজি ৪৫টাকা হিসেবে প্রতি টন ৪৫হাজার সংগ্রহ অভিযান চলছিল। মিলারদের জিম্মি করে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুদামে সিদ্ধ চাল সংগ্রহে চুক্তিভিত্তিক অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন কয়েকজন মিলার।
খাদ্যগুদামের প্রথম লটারিতে নির্বাচিত কৃষক নারায়ণপুর ইউনিয়নের ফরিদুল ইসলাম যাহার এনআইডি নং-১৯৯১৪৯১৬১৬৩০০০০৯৭ ও মোবাইল নম্বর-০১৭৮৬৩৩৭৭২৯ এ যোগাযোগ করা হলে নাম্বার সঠিক নয় বলছে এবং আব্দুল্লাহ যাহার এনআইডি নং-৫৫৫৩৪৯৫৬১৪ ও মোবাইল নম্বর-০১৭৮০৯১০১৫২ এ যোগাযোগ করা হলে নাম্বারটি বন্ধ বলছে। বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মফিজুল ইসলাম যাহার এনআইডি নং-৪৯১৬১১৮১৪১০৩৫ ও মোবাইল নম্বর-০১৯৮৭৩৪৬৬৯৬ এ যোগাযোগ করা হলে নাম্বারটি বন্ধ বলছে, ফজলুল হক যাহার এনআইডি নং-১৯৮৯৪৯১৬১২৫০০০০৩৫ ও মোবাইল নম্বর-০১৭৪৫৬৩৭৪১১ এ যোগাযোগ করা হলে নাম্বারটি বন্ধ বলছে ও সাহাব উদ্দিন যাহার এনআইডি নং-৪৯১৬১২৫২০২৮৯৯ ও মোবাইল নম্বর-০১৭৩৭৬০৩৬১১ এ যোগাযোগ করা হলে নাম্বারটি আর ব্যবহারীত হচ্ছে না বলছে। এভাবে লটারিতে নির্বাচিত একাধিক কৃষকের সাথে যোগাযোগ কথা হলেও মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি কৃষকের নামের সাথে ভোটার আইডির নাম ও মোবাইল নম্বর মিলছে না। কৃষকদের নামের তালিকায় যত অনিয়ম আর স্বজন-প্রীরিতি।
নির্বাচিতদের তালিকা নিয়ে নারায়ণপুর, বল্লভেরখাস, কালীগঞ্জ, বেরুবাড়ী ইউনিয়নসহ নাগেশ্বরী পৌরসভার ধান সংগ্রহের নির্বাচিতদের তালিকার কৃষকের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে প্রায়-প্রতিটি মোবাইল নম্বর ব্যবহারীত হচ্ছে না অথবা বন্ধ পাওয়া গেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার প্রান্তিক কৃষক মজনু, শহিদুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, আমরা কৃষক ধান চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। খাদ্যগুদামে ধান দিতে পারি না। খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষকের তালিকা সঠিক নয় এবং তালিকায় নাম ব্যবসায়ী চক্রের আত্মীয় স্বজন আর অকৃষকের। তারা আরো বলেন, নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে ধান ক্রয় করছেন কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেট চক্রের থেকে। লটারিতে নির্বাচিতদের তালিকায় কৃষকের নামের সাথে ভোটার আইডির নাম ও মোবাইল নম্বরের নেই মিল এবং সিন্ডিকেট চক্রের স্বজনসহ জমিজমা না থাকা ব্যক্তিরাও। আমরা জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি অফিসের রায়গঞ্জ ইউনিয়ন দামগ্রাম ব্লকের বিএস মশিউর রহমান বলেন, নিউজটি বন্ধ করতে অনুরোধ করেন।
নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আপনারা সংবাদকর্মীরা শুধু শুধু মিথ্যা সংবাদ করেন। অনুগ্রহ করে আমার সাথে একবার দেখা করবেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি অফিসার শাহরিয়ার হোসেন বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাগেশ্বরী চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওহাব মিয়া ঘুষের টাকার বিষয়ে সাতত্য স্বীকার করে বলেন, খাদ্যগুদাম গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম চলতি বছর ধান সংগ্রহ অভিযানে কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেট চক্রের নিকট থেকে নিয়েছেন। ধান সংগ্রহের তালিকা অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে তথ্য। এদিকে সিদ্ধ চাল সংগ্রহে মিলারদের জিম্মি করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুদামে চুক্তিভিত্তি সিদ্ধ চাল নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইদুল কাদির খান বলেন, অনিয়ম হলে আপনারা সংবাদ প্রচার করেন। অনিয়ম পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ধান সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।