আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে ভোলায় বিভিন্ন ধরনের ৯৭টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। যার বেশিরভাগই শটগান, পিস্তল ও রাইফেল। সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স হয়েছে ১৫, ১৬ ও ২৩ সালে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে সেসব অস্ত্র জমা নিকটস্থ থানায় দেওয়ার নির্দেশ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
লাইসেন্স দেয়া ৯৭টি অস্ত্রের মধ্যে ১১টি অস্ত্র কেনা হয়নি। বাকি ৮৬টি অস্ত্র কেনা হলেও তারমধ্যে ২টি অস্ত্র থানায় জমা হয়নি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ওই দু'টি অস্ত্রের মধ্যে একটি অস্ত্র ২০২২ সালে চুরি হয়ে গেছে। বাকি আরেকটি অস্ত্রের মালিক কারাগারে থাকায় সেই অস্ত্রটি ঢাকায় র্যাব এর কাছে জব্দ রয়েছে। ৮৬টি অস্ত্রের মধ্যে শটগান ৪৩টি, পিস্তল ২২টি, রাইফেল ৫টি, একনলা বন্দুক ৭টি, দুইনলা বন্দুক ৮টি ও রিভলবার ১টি। ভোলা জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য পেয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ মে পর্যন্ত ভোলা জেলা ম্যাজিস্ট্রসি থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। এসব অস্ত্র ও গুলি ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে বলা হয়। ২৫ আগষ্ট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুজ্জামানের দেওয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ যদি থানায় বৈধ অস্ত্র জমা না দেয়। তাহলে ওইসব অস্ত্র অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সদর থানায়। সদর থানা থেকে ৪৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে থানায় ৪৬টি অস্ত্র জমা দেয়া হয়েছে। বাকি একটি অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও সেটি কেনা হয়নি। বোরহানউদ্দিন থানা থেকে ৯টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে সেই থানায় ৬টি অস্ত্র জমা দেয়া হয়েছে বাকি ৩টি অস্ত্র ঢাকার বিভিন্ন থানায় জমা রয়েছে। লালমোহন থানা থেকে ১২টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হলেও নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই থানায় ৬টি অস্ত্র জমা দেয়া হয়৷ বাকি ৬টি অস্ত্র ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় জমা রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালে ১টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এরপর ২০১০ সালে দেয়া হয় ৩টি অস্ত্রের লাইসেন্স। তবে ২০১১ সালে কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি। এছাড়াও ২০১২ একটি, ২০১৩ সালে ৮টি, ২০১৪ সালে ৯টি, ২০১৫ সালে ১৪টি, ২০১৬ সালে ১২টি, ২০১৭ সালে ৮টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৩টি, ২০২০ সালে ৬টি, ২০২১ সালে ২টি, ২০২২ সালে ৪টি, ২০২৩ সালে ১৬টি ও ২০২৪ সালে ৫টিসহ মোট ৯৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়।
২০১৫, ২০১৬ ও ২০২৩ সালের দিকে সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই সময়গুলোতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা এসব অস্ত্রের লাইসেন্স নেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, ‘আগেয়াস্ত্র লাইসেন্স বাতিল ও থানায় জমা দিতে সরকারি বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। ভোলার সবকটি অস্ত্রই থানায় জমা পড়েছে। ভোলার কোথাও অবৈধ অস্ত্র থেকে থাকলে তা উদ্ধারে যৌথ বাহিনী মাঠে কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে চুরি হওয়া অস্ত্রটি তজুমদ্দিন উপজেলার ডাইয়ার পাড় গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে সেনা সদস্য আব্দুল রশীদের। ২০১৬ সালে তাকে একটি শটগানের লাইসেন্স দেয়া হয়। ২০২২ সালের দিকে অস্ত্রটি চুরি হলে তিনি আইনের দারস্থ হোন। তবে কিভাবে তার অস্ত্রটি চুরি হয়েছে, তা জানা নেই। চুরি হওয়া অস্ত্রের ঘটনায় আব্দুল রশীদ মামলা করেছেন। সে মামলা চলমান আছে।
এছাড়াও একটি শটগানের মালিক কারাগারে থাকায় তার অস্ত্রটি ঢাকায় র্যাব এর কাছে জব্দ আছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ভোলা থেকে লাইসেন্স দেয়া সবকটি অস্ত্র জমা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় থানার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র জমা দিয়ে সেই কাগজ সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেজন্য বলা যায়, ভোলা থেকে লাইসেন্স দেয়া সব অস্ত্র জমা পড়েছে।