ব্রাহ্মণবাড়িয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নলকূপ বসানোর সাড়ে ১৫ কোটি টাকার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দরপত্রের গোপন মূল্য ফাস করে কাজ দেয়ার অভিযোগ করেন ঠিকাদাররা।
নিরাপদ পানি সরবরাহে সাবমার্সিবলসহ গভীর নলকূপ স্থাপনের লক্ষ্যে ১২টি প্যাকেজে ১৫কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৯’শ টাকার এই কাজের দরপত্র আহবান করা হয় গত ৭ই জুলাই। দরপত্র খোলা হয় ১১ই আগষ্ট । জেলার একশো ইউনিয়নের প্রতিটিতে ১২টি করে মোট ১২’শ নলকূপ বসাতে এই দরপত্র আহবান করা হয়।
অফিস ও ঠিকাদার সূত্র জানায়,একেকটি প্যাকেজের কাজ পেতে ১২ থেকে ১৩জন ঠিকাদার দরপত্রে অংশ গ্রহন করেন। অভিযোগ উঠেছে দরপত্রের গোপন মূল্য বিশেষ ঠিকাদারদের দিয়ে দেয়া হয় আগেভাগে। এতে করে ১২ কাজের মধ্যে ৯টি কাজ পেয়েছেন বিশেষ ২ ঠিকাদার। এরমধ্যে একজন ঠিকাদারের নিজের নামে ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাধারণ ঠিকাদাররা এই অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি হাতে লেখা রেটের একটি কাগজও সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। তাদের ধারনা নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই এই রেট লিখে ওই ঠিকাদারদের হাতে দিয়েছেন।
বরাবরের মতো কয়েকজন ঠিকাদারের কাজ পাওয়ার খবর পেয়ে গত ২২শে আগষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে আসেন বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। তারা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা জানান,
আগে এখানে ২৪ জন ঠিকাদার ছিলেন। এখন তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের সংখ্যা ১৫/১৬ জন। তাদের মধ্যে ৭/৮ জনের বেশী সক্রিয় নন। কাজ না পেতে পেতে হতাশ হয়ে পড়েছেন ঠিকাদাররা। তানিম শাহেদ রিপন নামের একজন ঠিকাদার জানান, ১২টি কাজের মধ্যে একজন ঠিকাদারই ৩টা লাইসেন্সে ৯টি কাজ নিয়েছেন। একটা কাজে ৪ জনের রেট সমান হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী এই কাজটিও বিশেষ ঠিকাদারকে দিয়েছেন। ছোট ৩টা কাজ ৪জন ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে অফিস থেকে রেট লিখে দেয়া হয়েছে। রেট আউট হওয়ায় ১০ পার্সেন্ট লেসে খুচরো পয়সাসহ মিলে গেছে।
মেসার্স বুশরা বিল্ডার্সের মো: ইসকান্দর মিয়া জানান,দীর্ঘদিন যাবৎ দরপত্রে এ্যাটেন্ড করতে পারিনা। ডিসেন্ট এন্টারপ্রাইজের আতাউর রহমান মোল্লা টিপু বলেন, এখানে আমরা ১২/১৩ জন ঠিকাদার। আগে আমরা আলাপ-আলোচনা করে নিজেরা সমঝোতার মাধ্যমে কাজ নিয়েছি। সকলেই কাজ পেয়েছে। এখন ২/৩ জন মিলেটি কাজ নিয়ে যাচ্ছে। একটা সিন্ডিকেট পুরো ১৫ কোটি টাকার কাজ নিয়ে গেছে। তারা গত ৭/৮ বছর একচেটিয়া কাজ নিয়েছে। মেসার্স ভূইয়া ট্রেডার্সের ইকবাল হোসেন ভূইয়া বলেন-ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় আমরা কাজ পাইনা। ১৬ বছর আগে থেকেই এখানে কাজ করিনা। সেকারনে মৌলভীবাজার,হবিগঞ্জ,জামালপুরসহ অন্যান্য এলাকায় কাজ করি। নিউ নেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্টারপ্রাইজের সাজ্জাদ জাহান বলেন,আগে বছরে ১/২ টি কাজ পাইছি। ৪ টার্মে কোন কাজ পাইনি। তোয়াছিন এন্টারপ্রাইজের জাকির হোসেন বলেন,কাজ দেয়ার কথা বললে বিশেষ ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এই কাজ দিয়ে ২ পার্সেন্ট হিসে্েব নির্বাহী প্রকৌশলী ৩০/৩৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
কাজ পেয়েছেন এমন ঠিকাদারদের একজন সৈয়দ তৈমুর বলেন,নিয়মতান্ত্রিক ভাবে টেন্ডারে অংশ গ্রহন করেছি। এরমধ্যে আমি একটা কাজ পেয়েছি।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ফারুক আহমেদ বলেন- দরপত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। ঠেন্ডার সঠিকভাবেই হয়েছে। রেট তারা কিভাবে মিলিয়ে দিয়েছে সেটা তারাই ভালো জানে।